রবিবার ● ২৮ মে ২০২৩
প্রথম পাতা » নওগাঁ » আত্রাই উপজেলায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আত্রাই শুকটিগাছা রাবার ড্যামের কাজ শুরু
আত্রাই উপজেলায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আত্রাই শুকটিগাছা রাবার ড্যামের কাজ শুরু
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষকদের ফসল ফলানোর জন্য নির্মান করা হয় নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শুকটিগাছা এলাকায় আত্রাই নদীর ওপর রাবার ড্যাম। কিন্তু নির্মানের তিন বছর চালু হয়ে কৃষকরা সুবিধা পাওয়ার পর সেটি বিভিন্ন জায়গায় ছিদ্র হয়ে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে নদীর ওপর নির্ভরশীল কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর চলতি মাসের ৬ তারিখে প্রায় ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে সেটির মেরামতের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বর্তমানে ২টি বেলুনের কাজ শেষ হয়েছে। আর বাকী একটির কাজ শেষ হতে আরো এক সপ্তাহ লাগবে। এটির কাজ শেষ হলে কৃষক ও মৎস্যজীবীরা বেশ লাভবান হবেন।
জানা গেছে, এক সময় শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে নওগাঁর আত্রাই নদীর দুইকূলে চাষাবাদ করা যেত না। নদীর পানি উজান থেকে ভাটির দিকে দ্রুত নেমে যেত। ফলে বিকল্প হিসেবে গভীর নলকূপের ওপর কৃষকদের নির্ভর করতে হতো। এমন অবস্থায় ওই এলাকার কৃষিকে এগিয়ে নিতে সরকারের প্রযুক্তিগত নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজের অংশ হিসেবে পানি ধরে রাখতে আত্রাই নদীর দুইকূলে শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধার জন্য স্থাপন করা হয় রাবার ড্যাম। আত্রাই উপজেলার শুকটিগাছা এলাকায় নদীর ওপর রাবার ড্যামটি নির্মান কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। এরপর বেশ কয়েকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয়ে ২০১৭ সালে শেষ হয় কাজ। এরপর একই বছর রাবার ড্যামটি স্থানীয় একটি পরিচালনা কমিটিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে ড্যামটি।
রাবার ড্যামের পাশে আড়ানি গ্রামের কৃষক আকবর হোসেন বলেন, রাবার ড্যামটি নির্মানের পর প্রথম তিন বছর সুবিধা তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে নানা স্থানে ছিদ্র হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে প্রকল্পটির সুবিধা পাওয়া যায়নি। গত কয়েকদিন ধরে অকেজো রাবার ড্যামটির মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে। এটি মেরামতের কাজ শেষ হলে কৃষকরা আবারো লাভবান হবেন।
স্থানীয় মৎস্যজীবী সনজিত কুমার বলেন, জীবিকার জন্য আমরা নদীর ওপর নির্ভরশীল। গত তিন বছর ধরে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কষ্টের মধ্যে পড়েছি। রাবার ড্যামেটি চালু থাকলে অনেক মাছ পাওয়া যেত নদীতে। তাই রাবার ড্যামটি সংস্কার কাজ শেষ হলে কৃষক-মৎস্যজীবী সবার জন্যই সুবিধা হবে।
শুকটিগাছা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় লিমিটেডের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, রাবার ড্যামটি নির্মাণের পর তিন বছর সুবিধা পাওয়া গেছে। ড্যামের মাধ্যমে আত্রাই, ছোট যমুনা ও তুলসীগঙ্গা নদীর দুই তীরের পাঁচ উপজেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সেচ সুবিধা পাওয়া গেছে। কিন্তু গত তিন বছর থেকে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছিলাম আমরা। চলতি মাসে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। আর এ মাসেই মেরামতের কাজ শেষ হলে আমরা কৃষক ও মৎস্যজীবী ব্যাপক উপকৃত হবো।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. জোনায়েত আলম বলেন, বেশ কিছুদিন পূর্বে রাবার ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় ড্যামটি ফুলানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। গত কয়েক দিন ধরে মেরামতের কাজ চলছে। আশাকরি দ্রুত কাজ শেষ হবে।
নওগাঁর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত বছর পানি না শুকানোয় কাজটি করা যায়নি। বর্তমানে আত্রাই নদীর পানি শুকিয়ে থাকায় প্রায় ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। খুব শিগগিরই রাবার ড্যামটি সচল হবে। এতে করে সকলেই উপকৃত হবে। কৃষকরা রবি-শস্য ফলাতে আর কোন সমস্যা হবে না।
আত্রাইয়ে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে
আত্রাই ::‘দেশের একটি পরিবারও ভ’মিহীন ও গৃহহীন থাকবে না ’ মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় শেষ পর্যায়ে চতুর্থ ধাপের কাজ।
কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের সাথে সাথে ঘরগুলো ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তরের মাধ্যমে এ আত্রাই উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে বলে জানা যায়।
ভূমি ও গৃহহীনদের জমি ও গৃহের অভাব লাঘব করে তাদের মুখে হাঁসি ফোটাতে বর্তমান সরকার “আশ্রয়নের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার” প্রকল্প গ্রহণ করেন। এতে দেশের সকল ভূমি ও গৃহহীনদের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়ীসহ জমি দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি দেশের মানুষকে ভূমিহীন মুক্ত করার কার্যক্রম শুরু করা হয়।
ইউএনও অফিস সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ণ-২প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে আত্রাইয়ে সরকারের ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত জমিতে ৪৫টি ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইকতেখারুল ইসলাম এর নেতৃত্বে জনপ্রতিনিধি, সহকারী কমিশনার, প্রকৌশলী এবং প্রকল্প অফিসারের সমন্বয়ে স্থান নির্বাচন করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলাকে ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা এবং ভূমি ও গৃহহীনদের মর্যাদার সাথে বসবাসের লক্ষে উপজেলার মাধাইমুড়ি, কচুয়া, ভোঁপাড়া এবং তিলাবদুরী নামক স্থানে রংয়ের কাজ বাদে ৪৫টি ঘর তৈরী ও ছাউনির কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এতে পরিবার প্রতি দুই শতক যাইগার উপর চৌচালা বিশিষ্ট ইটের দুটি করে পাকা ঘরে রঙ্গিন টিনের চালা ও দুটি করে প্লেন শীটের জানালা ও দরজা রয়েছে। সেইসাথে ঘর সংলগ্ন বারান্দা, রান্না ঘর ও টয়লেট অছে। একইসাথে বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা রয়েছে। কাজ শেষে উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে ঘরের চাবি হস্তান্তর করে উপজেলাকে ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ইতিপূর্বে উপজেলায় ২১৭ টি ঘর নির্মাণ করে ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় অনুযায়ী চতুর্থ ধাপে উপজেলাকে ভূমিহীন মুক্ত ঘোষনার লক্ষে ৪৫টি ঘর তৈরী ও হস্তান্তরের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা কোনো কারনে যদি কেহ ভূমিহীন হয়ে পড়েন তাহলে তাকে পুনর্বাসন করা হবে।