বুধবার ● ২৮ জুন ২০২৩
প্রথম পাতা » নওগাঁ » ঈদ সামনে রেখে টুংটাং শব্দে মুখরিত আত্রাইয়ের কামারপাড়া
ঈদ সামনে রেখে টুংটাং শব্দে মুখরিত আত্রাইয়ের কামারপাড়া
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: আর মাত্র কয়েক দিন পরই পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। ঈদকে সামনে রেখে তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কামারপাড়ার শিল্পীরা।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে যতদিন গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে কামারদের কর্মব্যস্ততা। উপজেলার এই কামারশালার দোকানগুলোতে সারা দিন রাত টুং-টাং শব্দ বিরাজ করছে। গরু-ছাগল কাটার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মেরামত কিংবা নতুন করে তৈরী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আত্রাই উপজেলা সদরসহ ভবানীপুর-মির্জাপুর বাজার, শাহাগোলা, বজ্রপুর, বান্ধাইখাড়া, নওদুলিসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কামারপাড়া।
ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই কামার পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। তারা রাতদিন তৈরী করছে হরেক-রকমের দা, ছুরিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত কামার পরিবার এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে উপজেলার ভবানীপুর-মির্জাপুর বাজারের কামারপল্লী ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি কামারের দোকানেই ব্যস্ততা তারা কেউ বা লোহা আগুনে লাল বর্ণ করে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাতিয়ার তৈরির উপযোগী করছেন। কেউবা পশু জবাই করার ছুরি ধার করছেন। একটি হাতিয়ার তৈরি করতে লোহা অনুযায়ী দাম নেওয়া হচ্ছে। ক্রেতাদের পছন্দের মতো তৈরি করেন বিভিন্ন মাপের পশু কোরবানির চাপাতি, দা, বটি, ছুরি, কুড়াল আর ছোট চাকুর মতো লোহার সব ধারালো অস্ত্র। এগুলো সবই ব্যবহার হবে কোরবানীর পশু জবাই থেকে শুরু করে মাংস ছাড়ানো আর হাড় কাটার কাজে। কেউ কেউ আবার গতবারের পুরাতন ছুরি ধার করিয়ে নিচ্ছেন নতুনভাবে কোরবানি করার জন্য। অনেকেই আবার এগুলো মেরামত করার জন্য কামারের বাড়িতে নিয়ে এসেছে।
উপজেলার ভবানীপুর বাজারের সূর্য কর্মকার জানান, অন্যান্য বারের তুলনা এ বার নতুন দা-বটি তৈরীর অর্ডার বেড়েছে। আর পুরাতন গুলো মেরামত হচ্ছে পরিমানে বেশি। বিশেষ করে কোরবানীর ঈদ এলে এসব দা-বটিসহ অন্যান্য উপকরণের কদর বেড়ে যায়। চলতি মৌসুমে কয়লার অভাবে কাজ করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এখন কয়লা পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়লা পাওয়া গেলেও দাম চড়া। কালের বিবর্তনে কয়লা হারিয়ে যাচ্ছে। এখন গ্রামে এলপি গ্যাস ও বন্ধু চুলা দিয়ে রান্না করা হচ্ছে। কামারপট্টিতে আসা যাওয়া করলে শব্দ থাকায় যায় না। দিন-রাত পোড়া কয়লার গন্ধ, হাঁপড়ের হাঁস-ফাঁস আর হাতুড়ি পেটানোর টুং টাং শব্দে তৈরী হচ্ছে গ্রাম বাংলার চকচকে ধারালো দা-চাপাতি, ছুরি, বটিসহ গোস্ত কাটার উপকরণ।
এ বিষয়ে কার্তিক কর্মকার জানান, কয়লা, লোহাসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে নতুন দা-বটিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদ্রির দামও বেড়ে গেছে। বছরের মধ্যে ১১ মাসই কামার পরিবারদের বসে থাকতে হয়। শুধু কোরবানীর ঈদ এলেই তাদের ব্যস্ততা পুরোদমে বেড়ে যায়। এসময়ে কিছুটা আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়। এ ছাড়া অনেক কামার বাড়ি বাড়ি গিয়ে দা-বটি-ছড়ি মেরামত করে থাকে।
দোকানে আসা ক্রেতা মো. অমর ফারুক জানান, গরু জবাই করার জন্য বড় একটি ছুরি তৈরীর করার অর্ডার দিয়েছি। তার দাম হলো একহাজার পাঁচশত টাকা। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার কোরবানী দেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
কোরবানির সরঞ্জাম কিনতে আসা আশরাফুল আলম বলেন, এবার কোরবানির গরু একটু আগেভাগেই কিনেছি। কোরবানির জন্য প্রয়োজন চাকু ও ছুরি। সে কারণে বাজাওে এসেছি দা, বটি ও ছুরি কিনতে।
গ্রামীন উন্নয়নে পর্যটন শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
আত্রাই :: নওগাঁর আত্রাইয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পর্যায়ে “গ্রামীন উন্নয়নে পর্যটন” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার ২৬ জুন সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকতেখারুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে মুজিব বাংলাদেশ শীর্ষক পর্যটন বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালা হয়। কর্মশালার শুরুতে আত্রাই উপজেলাধীন কবি রবি ঠাকুরের স্মৃতি বিজরিত পতিসর এবং মহাত্মাগান্ধী আশ্রম ভরতেতুলিয়ায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণী তুলেধরেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকতেখারুল ইসলাম। তিনি বলেন, পতিসর সম্পন্ন গ্রামীন পরিবেশ বেষ্টিত এরিয়া। সেখানে কবির কাছারি বাড়ী ছাড়াও নাগর নদী, নদীর ঘাট, দেবেন্দ্র মঞ্চ, কবির নিজ হাতে তৈরী স্কুল, কৃষি ব্যাংক, খেত ভরা ফসলের মাঠ, নতুন করে স্থাপন করা তাল গাছ, কবির স্মৃতি পার্ক, পুকুর ও কৃষি কলেজ রয়েছে। অপরদিকে মহাত্মাগান্ধী আশ্রম (বঙ্গীয় রিলিফ কমিটি) ভরতেতুলিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত। স্থানটিতে নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু, পিসি রায়, মহাতœা গান্ধীর আগমন ঘটে। এখান থেকে এক সময় অসহায় মানুষকে রিলিফ দেওয়া হতো। এছারা ঘ্যানির মাধ্যমে তৈল তৈরী, চরকার মাধ্যমে সুতা তৈরী করে খদ্দরের কাপর তৈরী, রেশম চাষ এবং দাতব্য চিকিৎসালয়ের মাধ্যমে মানুষ বিনা টাকায় চিকিৎসা সুবিধা পেতো।
কর্মশালায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধার অংশ হিসাবে ১৬ ডিসেম্বর ২৩ সাল পর্যন্ত কান্ট্রি ব্র্যান্ডের হিসেবে মুজিব বাংলাদেশ পর্যটন বিষয়ক সকল ধরনের বিস্তারিত বিবরণী অনলাইনে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপসচিব সাইফুল ইসলাম তুলে ধরেন।
এসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবাদুর রহমান প্রামানিক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অঞ্জন কুমার দাস, ওসি তারেকুর রহমান সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম ও হাফিজুল ইসলাম, উপজেলা আ’লীগ সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ দত্ত দুলাল, ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মন্ডল, এসএম মঞ্জুরুল আলম, খবিরুল ইসলাম, স¤্রাট হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন তোফা, সরকারী দফতরের অফিসার, সাংবাদিক, শিক্ষক, শুশিল সমাজের প্রতিনিধি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।