বৃহস্পতিবার ● ৬ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » সুগন্ধা নদীতে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজে আবারো আগুন
সুগন্ধা নদীতে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজে আবারো আগুন
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি :: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ থেকে তেল অপসারণের সময় দ্বিতীয়বারের মতো বিস্ফোরণে ছড়িয়ে পড়া আগুন প্রায় ১১ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর চেষ্টার পর মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঝালকাঠির স্টেশন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান চলছে। বিস্ফোরণে জাহাজের মধ্যের অংশ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ জাহাজে এখনো প্রায় চার লাখ লিটার তেল মজুত আছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঝালকাঠি শহরের পৌরসভার খেয়াঘাটসংলগ্ন সুগন্ধা নদীর মধ্যে রাখা জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ শওকত (৩৫) নামের এক পুলিশ সদস্য ও মো. শরিফ (৪০) নামের অপর এক ব্যক্তিকে রাতেই ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। শরিফ দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ থেকে তেল অপসারণের কাজে নিয়োজিত সাগর নন্দিনী-৪ নামে একটি তেলের জাহাজের কর্মচারী। তাঁদের প্রথমে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে পুলিশ সদস্য শওকতের শরীরের ১৬ শতাংশ ও শরিফের শরীরের প্রায় ৫৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল।দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজে ঝালকাঠি সদর থানার উপ-রিদর্শক (এসআই) গণেশ চন্দ্র ঘরামির নেতৃত্বে ১১ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন নৌ পুলিশের সদস্য। বিস্ফোরণে ৯ পুলিশ সদস্যসহ ১৪ জন আহত হন। তাঁদের অধিকাংশই আতঙ্কে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিকট শব্দে আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি। বিস্ফোরণে দগ্ধ আরেক পুলিশ সদস্য দ্বীপ (৩২) একটু সুস্থ হওয়ায় তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, জাহাজ থেকে এখোনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানি ছিটানো অব্যাহত রেখেছেন। বিস্ফোরণে জাহাজের মধ্যের অংশের লোহার পাত বিধ্বস্ত হয়ে ফাঁকা হয়ে গেছে। সারা রাত কাজ করে পরিশ্রান্ত ক্লান্ত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বেলা দুইটার দিকে সুগন্ধা নদীর তীরের সরকারি তেলের ডিপোর কাছে সাগর নন্দিনী-২ নামের জ্বালানি তেলবাহী একটি জাহাজে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। জাহাজে মোট নয়জন কর্মী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অগ্নিকান্ডে নিখোঁজ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একই জাহাজ থেকে তেল অপসারণের সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আবার বিস্ফোরণের বিকট শব্দের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী পলাশ নামের এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, গতকাল বিকেল থেকে অগ্নিকান্ডের ক্ষতিগ্রস্ত সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ থেকে সাগর নন্দিনী-৪ নামের অপর একটি জাহাজে জ্বালানি তেল অপসারণের কাজ চলছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হঠাৎ বিস্ফোরণের বিকট শব্দে জাহাজে আগুন ধরে যায়। এ সময় কয়েকজনকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায়। পরে স্থানীয় জনগণ আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সূত্রে জানা যায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে রাতেই ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের সঙ্গে খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০টি ইউনিট যুক্ত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে পানির সঙ্গে বিশেষ ফোম ব্যবহার করা হয়। রাতভর চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রত্যক্ষদর্শী এসআই গণেশ চন্দ্র ঘরামি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় সন্ধ্যায় জাহাজে বিস্ফোরণে সুগন্ধা নদীর তীরবর্তী এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এ সময় আমাদের বহন করা ট্রলারের চালক আতঙ্কে নদীতে ঝাঁপ দেন। পরে পুলিশ সদস্যরাও নদীতে ঝাঁপ দিতে গিয়ে আহত হন। দুজন আগুনে দগ্ধ হন।’
জেলা সিভিল সার্জন এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, আহত ব্যক্তিরা অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ভীতির মধ্যে আছেন। তাঁদের সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকা দগ্ধ দুজনের সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ঝালকাঠিতে ভর্তি থাকা আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অপরদিকে সোমবার বিকালে ১৪ দলের সম্বনয়ক ও মুখপাত্র,শিল্প মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ¦ আমির হোসেন আমু এমপি দূর্ঘটনাকবলিত জাহাজটি পরির্দশন করবেন। এসময় তার সাথে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী মহদয় সাথে থাকতে পারেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরণ নিখোঁজ একজনের লাশ উদ্ধার
ঝালকাঠি :: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজ চার জনের মধ্যে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (২ জুলাই) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ইঞ্জিন কক্ষ থেকে গ্রিজার আব্দুস সালাম হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড।
হৃদয়ের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার মাদবপুর এলাকায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাগর নন্দিনী ২ জাহাজে গ্রিজার পদে কাজ করেন। কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাফায়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও জাহাজের মাস্টার রুহুল আমিন খান, সুপার ভাইজার চাঁদপুর সদরের মাসুদুল আলম বেল্লাল ও জাহাজের চালক পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সরোয়ার হোসেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সাগর নন্দিনী-২ নামের সুগন্ধা নদীর পাড়ে তেলের ডিপুতে তেল খালাস করা জন্য ১১ লাখ লিটার পেট্রোল ও ডিজেল ভর্তি করে আসে। জাহাজটি নোঙ্গর করা অবস্থায় পাড়ে শনিবার দুপুর ২টার দিকে বিস্ফোরিত হয়। পরে পুরো জাহাজে আগুন লাগে। এতে চার জন দগ্ধ হন। নিখোঁজ ছিলেন আরও পাঁচ জন।
ঝালকাঠিতে প্রেমিকাকে হত্যার দায়ে প্রেমিকের ফাসি
ঝালকাঠি :: ঝালকাঠির কুলকাঠি গ্রামে প্রেমিকা বেনজির জাহান মুক্তা (১৯) কে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায়ে প্রেমিক মো. সোহাগ (২৮) কে ফাসির আদেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার সকাল ১০.৪৫ মিনিটে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ওয়ালিউল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য: গত ৪ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটির বারইকরণ গ্রামের বাড়ি থেকে ফোনে ডেকে নিয়ে সামনের সড়কে ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী বেনজির জাহান মুক্তাকে (১৯) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ায় কলাপাড়ার নিশানবাড়িয়া গ্রামের সোহাগ মীর এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় নিহত মুক্তার বাবা পরের দিন দুপুরে নলছিটি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর র্যাব, পুলিশ ও ডিবি পুলিশের তিনটি টিম আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। অবশেষে ফুফুর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ মীর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, সে ঢাকায় একটি পলিথিন প্রস্তুতকারী কম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করেন।
তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে মুক্তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মুক্তাকে সে বিভিন্ন সময় নগদ টাকা ও পোশাক দিতেন। তাকে একটি মোবাইলফোনও দেন সোহাগ। মুক্তা তার কাছ থেকে এসব নিয়েও অন্য কয়েকজন যুবকের সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা বলতো। বিষয়টি জানতে পেরে সোহাগ মুক্তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
বিয়েতে মুক্তা রাজি ছিল না। ইদানিং তার সঙ্গে মুক্তা যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সোহাগ ঢাকা থেকে ৪০০ টাকায় একটি চাকু কিনে লঞ্চে করে ৪ ফেব্রুয়ারি বরিশাল যান। সেখান থেকে সকাল ৭টার মধ্যে তিনি ঝালকাঠি শহরের কলেজ খেয়াঘাট এলাকায় মুক্তার কলেজে যাতায়াতের পথে অবস্থান নেয়। মুক্তা সকালে কলেজে আসার সময় তার পথরোধ করে কথা বলে সোহাগ। সোহাগের কোনো কথাই মুক্তা না শুনে কলেজে চলে যায়। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি।
পরে কলেজ থেকে ফেরার পথে মুক্তার গ্রামের বাড়ি বারইকরণ এলাকায় অবস্থান নেন সোহাগ। মুক্তা বাড়ি যাওয়ার সময় তার কাছ থেকে মোবাইলফোনটি কেড়ে নেন সোহাগ। মুক্তা তার কাছে ফোনের সিমটি দাবি করে। সিম ফেরত না দেওয়ায় মুক্তা বাড়িতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরই মুক্তার বড় বোনের মুঠোফোনে কল করে সিমটি নেওয়ার জন্য স্থানীয় কাপুড়িয়া বাড়ির সামনে বটগাছতলায় মুক্তাকে আসতে বলেন সোহাগ। মুক্তা আসলে তাকে চাকু দিয়ে আঘাত করেন তিনি।
সোহাগ একাই মুক্তাকে খুন করেন। পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তাকে আদালতে হাজির করা হবে।