রবিবার ● ২৩ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » সংসদ সদস্য ও নেতাদের দ্বন্দে কুষ্টিয়া এখন উত্তাল
সংসদ সদস্য ও নেতাদের দ্বন্দে কুষ্টিয়া এখন উত্তাল
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক আসগর আলীর সাথে কুষ্টিয়া-০৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের পাল্টাপাল্টি জ্বালাময়ী বক্তব্যের ঘটনা ঘটেছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রাতে আওয়ামী লীগের আয়োজনে শুক্রবার (২১ জুলাই) বিকেল ৪ টার যদুবয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জামাত-বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ও বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ তৃণমূলে প্রচারের লক্ষ্যে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সমাবেশে স্থানীয় কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জকে উদ্দেশ্য করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, আজ কিবরিয়া (সাবেক এমপি ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর) ভাইয়ের রক্ত কুমারখালীর পড়েছে। তাঁর রক্তের ওপর পরিবারের যাঁরা এমপি হচ্ছে। একটুখানি তোমাদের প্রতি অনুরোধ ওই রক্তের দিকে তাকিয়ে বলো, তোমরা যাঁদের সমালোচনা করেছ, তোমরা কি সমালোচনার এখতিয়ার রাখো। বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর (জেলা আওয়ামী লীগের জ্যৈষ্ঠ সহ সভাপতি), বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন খান (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি), আজগর আলী (জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) এরা কেউ একদিনে আসে নাই। কতো ইতিহাস তৈরি করেছি, কিবরিয়া ভাই রয়েছে, আর ‘তোমরা রাতের আধাঁরে এমপি হয়েছ, আমরাই তো তৈরি করেছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল, তাইতো তোমাদের এমপি বানিয়েছি।
এমপি জর্জকে হুুশিয়ারি জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী আরো বলেছেন, অহংকার দাদাভাই ভালোনা। তোমরা এমপি হয়েছ, মুরব্বিদের সম্মান করে চলো। তা না হলে সমস্যা হবে। তখন আর কিছু বলতে পারবা না। রক্ত দিয়েছি, রক্ত আরো দিবো, সংগঠনতো আমরায় করেছি, তোমরা করো নাই। প্রধান অতিথি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন খান এমপি জর্জকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, নৌকায় একবার এসেছেন, আর কোনোদিনও আসবেন না। বিষয়টি পরিষ্কার, যে নৌকা ছিদ্র করে, সেই নৌকা উঠলে পড়ে নৌকা ডুবে যায়। জেলার সভাপতি হিসেবে দাঁয়িত্বে আছি, সভাপতি আমরা এমনি হই নাই। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া -০৪ আসনের কে এমপি হবেন? এমন মন্তব্য করে সদর উদ্দির খান বলেন, আমাদের কথা মতো, আমাদের পরামর্শ মোতাবেক যদি মনোয়ন দেয়। তাহলে বাংলাদেশ কোথাও সিট না হলেও কুমারখালী-খোকসাতে হবেই হবে। জাফর সাহেব (জেলা আওয়ামী লীগের জ্যৈষ্ঠ সহ সভাপতি), মান্নান খান (উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) তাঁদের মধ্যে এমপি হবেন। যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিকেলে খোকসা বাসস্টান্ড চত্বরে খোকসা পৌর আওয়ামী লীগের একাংশের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া-০৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেন। খোকসা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। সমাবেশে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীসহ চার নেতার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। খোকসা পৌর আওয়ামী লীগের একাংশের আয়োজনে এই সভায় প্রধান অতিথির প্রায় ৯ মিনিটের বেশি বক্তব্যে দেওয়ার সময় এমপি জর্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের কঠোর সমালোচনা করেন।
বক্তব্যের একপর্যায়ে সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর উদ্দিন খানের বাড়ি খোকসাতে, সাধারন সম্পাদক আসগর আলী কুষ্টিয়ায় থাকেন, সাথে জড়ো হয়েছেন কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মান্নান খান (কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি) আর জাহিদ হোসেন জাফর (জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি)। তারা চারদলের জোট। তারা এর আগে পাইলট স্কুল মাঠে সমাবেশ করে অনেক আজেবাজে বক্তব্য রাখেন। আমরাও পাল্টা সমাবেশ করে জবাব দিয়েছিলাম। নেতাদের সমালোচনা করে সংসদ সদস্য বলেন, উনাদের রাজনীতির বয়স আর আমার বয়স সমান। উনারা অনেক দিন ধরে দেখেই যাচ্ছেন। আপনাদের চোখ আছে, উনারা তো কেউ অন্ধ না। সামনে আরো অনেক কিছু দেখবেন, অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। যদি চোখে ছানি না পড়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আপনারা বয়স্ক মুরব্বী মানুষ। আমি কোন আজেবাজে কথা বলতে চাই না। যদি কথা না বলেন সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। সংসদ সদস্য বলেন, কিসের রাজনীতি করেন আপনারা? আমরা কি এখানে হাতে চুরি পরে বসে আছি। যদি কোন হটকারিতা ও উচ্ছৃখলতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের বিভ্রান্ত করতে চান তাহলে তার সঠিক জবাব দেওয়ার সমস্ত কিছু জানা আছে। সময় হলে সব কথার জবাব একটা একটা করে ফিরিয়ে দিবো। তিনি এটাও বলেন, কে কখন কোথায় গোপনে দিনে রাতে আমার হাতে পায়ে ধরেছেন সমস্ত প্রমাণ আমার কাছে আছে। এই কথাগুলোর পূনরাবৃত্তি করতে চায় না।
আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর খানকে ‘মিস্টার সদর খান’ সম্বোধন করে এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, মিস্টার সদর খান, আপনি যদি এই কুমারখালী-খোকসায় কোন রকম বিভ্রান্তি এবং ঐক্যের ভাঙন ধরানোর জন্য আপনার নোংরামী চিন্তার বহি:প্রকাশ ঘটানোর চেষ্টা করেন আপনি আমাকে রগে রগে চেনেন, প্রত্যেকটার জবাব কিন্তু আমি দেবো। সেই জবাব গ্রহন করার মত পরিস্থিতি আপনার নাই। আপনি খুব ভালোমতেই জানেন এবং যাদের নিয়ে নাটক করা হচ্ছে সমস্ত নাটকের যবনিকাপাত করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন খোকসা উপজেলা আওয়ীমী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল আখতার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমারখালী উপজেলা আওয়ীমী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুমারখালী পৌরসভার মেয়র শামসুজ্জামান অরুণ সহ একাধিক নেতাকর্মী শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।