রবিবার ● ৬ আগস্ট ২০২৩
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » ঈশ্বরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিয়ে বির্তক
ঈশ্বরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিয়ে বির্তক
উবায়দুল্লাহ রুমি, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি অনুমোদনের সাথে সাথে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা হচ্ছে নেতিবাচক মন্তব্য। অভিযোগ রয়েছে কমিটিতে স্থান পেয়েছে রাজাকার পরিবারের সন্তান, হত্যা, চুরি ও মাদক মামলার আসামী।
জানা যায়, নবগঠিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বিতর্কিত লোকদের অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে রাজাকার পরিবারের সন্তান, হত্যা, চুরি ও মাদক মামলার আসামীও রয়েছে। তাছাড়া উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতেও কেন্দুয়া উপজেলার লোককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাটিয়া ইউনিয়নের কমিটিতে মাহমুদুল হক হুমায়ুনকে সভাপতি ও অলি উল্লাহ ফকিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩ বছর মেয়াদী কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। কমিটি প্রকাশের পরেই সাধারণ সম্পাদক অলি উল্লাহ ফকির পদত্যাগ ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অলি উল্লাহ ফকির বলেন, আমি যাকে ছাত্রদলে রাজনীতি করতে দেখেছি তাকে আমার সভাপতি হিসেবে মানতে পারবো না। তাছাড়া অর্থনৈতিক লেনদেনসহ আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা আমি এখন বলতে চাচ্ছি না।
সোহাগী ইউনিয়নে ফেরদৌস রানা বাচ্চুকে সভাপতি ও মাহাবুব আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩ বছর মেয়াদী ৪ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলমের বিরুদ্ধে মাদক মামলার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহাবুব আলম বলেন, শত্রুতার জেরে অনেক আগে একটি মাদক মামলায় আমাকে জড়িয়ে ছিল প্রতিপক্ষরা। বর্তমানে আমার নামে কোনো মামলা নেই।
সরিষা ইউনিয়নে কামরুজ্জামান মানিককে সভাপতি ও বিল্লাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩ বছর মেয়াদী কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতি মানিকের বিরুদ্ধে হত্যা, চুরিসহ একাধীক মামলার অভিযোগ ও সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন রাজাকার পরিবারের সন্তান এমন অভিযোগ রয়েছে। সভাপতি মানিকের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, এগুলো সব রাজনৈতিক মামলা যা বিএনপির শাসনামলে করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন অভিযোগের কথা অস্বিকার করে বলেন, আবুল হাসেম নামের কোন রাজাকার থাকতে পারে, কিন্তু সে আমার চাচা না। আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান।
ঈশ্বরগঞ্জের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের দাবি আওয়ামীলীগের কোন সংগঠনে রাজাকারের বংশধর কিংবা সন্ত্রাসীর স্থান হতে পারে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে Afjal Hossain Hemal নামক একটা আইডি থেকে পোষ্ট করা হয়েছে, “ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগের ৪৩ নাম্বার শরিফ হাসান রাকিব এর বাড়ি কেন্দুয়া থানার গন্ডা ইউনিয়নে। উনি কেন্দুয়া উপজেলায় রাজনীতি করেন। উনার নাম ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় আসলো কিভাবে?” নব গঠিত কমিটির জাটিয়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অলি উল্লাহ ফকির তার ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করেন “টাকা দিয়ে পদ পদবী বিক্রি করে মঞ্চে এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক কথাটা মানায় না” ৷ Amdadul Haque নামক আইডি থেকে পোষ্ট করা হয়, “বাণিজ্যিক কমিটির মাশুল একসময় দিতে হবেই, হয় আজ, না হয় কাল অথবা পরশু। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভরাডুবি হচ্ছে। একজন কর্মী হিসেবে এটা বড়ই লজ্জার”।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নাজমুল হক মন্ডল বলেন, যে কমিটিগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে সমন্নয় করেই দেয়া হয়েছে। মামলার বিষয়গুলো আমাদের জানাছিলনা। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তাছাড়া আমরা তো ঈশ্বরগঞ্জের সকলকে চিনিনা, আমাদের যারা তথ্য দেয় তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা প্রার্থী বাছাই করেছি। আর রাজাকারের ভাতিজা হয়েছে এতে কোন সমস্যা নেই। সে নিজে তো রাজাকার না।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তানজির আহমেদ রাজিব বলেন, আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি দেখবো। তিনি আরও বলেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্নয় করেই আমরা কমিটির অনুমোদন দিয়েছি।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাফির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা কমিটি দিবে এ বিষয়টি আমাকে অবগত করেছে। এখন অনুমোদিত কমিটিতে যদি বিতর্কিত কেউ এসে থাকে তাহলে যাচাই বাছাই পুর্বক জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দের নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত (৬ মে) ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে আহবায়ক ও সদস্য সচিব দিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। গত ৩১ জুলাই উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে সদস্য বাড়িয়ে ৪৩ সদস্য করা হয়। আর এ কমিটির কারো সাইনিং পাওয়ার না থাকায় একই দিনে উপজেলার সোহাগী, সরিষা, আঠারবাড়ি, জাটিয়া, মাইজবাগ, রাজিবপুর ইউনিয়ন কমিটির অনুমোদন দেন ময়মনসিংহ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ।