সোমবার ● ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » পানগুছি নদীর ভাঙনে হাজার হাজার বাড়ি ঘর বিলীন
পানগুছি নদীর ভাঙনে হাজার হাজার বাড়ি ঘর বিলীন
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপকূলীয় উপজেলা পানগুছি নদীর ভাঙনে দিন দিন বদলে যাচ্ছে মানচিত্র । প্রতিদিন ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। বসতবাড়িসহ বহু প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাট চলে গেছে নদীগর্ভে। গত ৫০ বছরে পানগুছি নদীর আয়তন তিনগুণ বেড়েছে। এখন নদীটির প্রশস্ত এক কিলোমিটারের বেশি। সাড়ে ৩ লাখ লোকের বসতি এখানে।পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্র ১নং ওয়ার্ডের ফেরিঘাটসংলগ্ন বারইখালী এলাকায় জোয়ারের সময় এসব পরিবারের সদস্যরা রান্না-খাওয়া ভুলে যুদ্ধ করে পানির সঙ্গে। একটানা পাইলিং না থাকার কারণে বারইখালী, ফেরিঘাট এলাকা, কুঠিবাড়ি, লঞ্চঘাট এলাকা, সানকিভাঙ্গা, সোলমবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী এলাকার কমপক্ষে পাঁচ হাজার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে।
পৌরসভা মেয়র এসএম মনিরুল হক তালুকদার বলেন, পানগুছি নদীর ভাঙনে মূল শহরের চার ভাগের একভাগ এখন অবশিষ্ট আছে। শত শত বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও সদর বাজারের বেশিরভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। তবে শীঘ্রই পানগুছি নদীর পশ্চিম পাড় থেকে মূল শহরের ভাঙন সুরক্ষাকাজ শুরু হবে। দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই এই নদীর তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার পোল্ডার নং ৩৫/২। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছরেও সেই স্বপ্নের বেড়িবাঁধের দেখা মেলেনি। বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আন্দোলন, মানববন্ধন করেছেন। মন্ত্রী, এমপি ও পাউবোর কর্মকর্তারা পরিদর্শনও করেছেন বহুবার। বেড়িবাঁধের দাবিতে ডিও লেটার দিয়েছেন এমপি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।সরজমিন দেখা যায়, পানগুছি নদী-তীরবর্তী গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। গত ৪০ বছরে শুধু উপজেলা সদর থেকে নদীগর্ভে চলে গেছে, খাদ্যগুদাম, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, টেলিফোন অফিস, আব্দুল আজিজ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এসিলাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ভবন, ডাকবাংলো, বারইখালী ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ কোয়ার্টার, আনছার ময়দান, বারইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোস্ট অফিস, স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের অফিস, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, থানা জামে মসজিদ, সার্বজনীন হরিসভা মন্দির, শ্মশান ঘাটসহ বহু প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাট। বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে- গাবতলা, কাঁঠালতলা, বারইখালী, ফেরিঘাট, কুমারখালী, সন্যাসী, শ্রেণিখালী, ঘষিয়াখালী, সোনাখালী, ফুলহাতাসহ ২০টি গ্রাম কমিউনিটি ক্লিনিকটি পরিত্যক্ত হয়েছে। বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, কাঁচা-পাকা রাস্তা। অনেক পরিবার ভাঙনের কবলে বাড়িঘর হারিয়ে শহরমুখী কিংবা অন্যত্র বসবাস করছে। কমিউনিটি ক্লিনিকটিও ভাঙনের মুখে। আতঙ্কে রয়েছে নদী-তীরবর্তী ৩০টি পরিবার। গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার, মসজিদ, খাউলিয়া ও গাবতলা ব্রিজ এখন হুমকির মুখে।। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিডর, আইলা, ইয়াসের পর কোনো ভেঙে যাওয়া বাঁধ স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই সময় তিনি গাবতলা হতে পশুরবুনিয়া অভিমুখে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য ডিও লেটার দেন। চলতি বছরের মে মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই সময় তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী, বহরবুনিয়া, বলইবুনিয়া ও পঞ্চকরণ ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, আগামী ২ মাসের মধ্যে নদী শাসন কার্যক্রম শুরু হবে। রাস্তা-ঘাট পুনঃনির্মাণ করা হবে। সন্যাসী থেকে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। পরিদর্শনকালে নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার নারী পুরুষ সংসদ সদস্য এডভোকেট আমিরুল আলম মিলনকে স্লোগান দেয়। এলাকাবাসী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে ত্রাণ চাই না, চাই টেকসই বেড়িবাঁধ’। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহামুদুন্নবী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান, উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট তাজিনুর রহমান পলাশ, পৌর যুবলীগ আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান বিপুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও তার সফরসঙ্গীরা ছিলেন। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী বলেন, কয়েকশ’ পরিবার তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছেন। ধসে গেছে ৫০ একর জমি। পৌর শহর রক্ষার্থে এ পর্যন্ত মাত্র ১ কিলোমিটার পায়লিং হয়েছে। খরস্রোতা পানগুছির ভাঙন থেকে মোরেলগঞ্জ পৌর শহরসহ ২০টি গ্রাম রক্ষা করতে প্রয়োজন টেকসই বেড়িবাঁধ। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে চলছে শুধু পরিদর্শন ও চিঠি চালাচালি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড় বাগেরহাট জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, নতুন টেন্ডার হয়েছে, ঠিকাদারও পাওয়া গেছে। মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার নদীর তীর প্রতিরক্ষার কাজ বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই পুরোদমে শুরু হবে। তবে, ৯৫ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রোপোজাল পাঠানো হয়েছে।
সবাই শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে তালপাতার পাঠশালা সুপেয় পানি বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতা জর্জরিত
বাগেরহাট :: আর কেউ অশিক্ষিত থাকবে না, সবাই শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে বাগেরহাটের চিতলমারীতে অভাবের সংসারে ও তালপাতার পাঠশালা দীর্ঘ ১৮ বছর চালাচ্ছেন পন্ডিত কালিপদ বাছাড় সুপেয় পানি বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতা সমস্যায় জর্জরিত। বাস্তবে সবাই যেখানে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সেখানে অন্যকিছু ভাবছেন শিক্ষক পন্ডিত কালিপদ বাছাড় একটা সময় ছিলো যখন দোয়াতের কালি আর তালপাতায় শিক্ষা জীবন শুরু করতো শিশুরা। সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়েছে সেই ব্যবস্থার। তবে নতুন করে সেই শিক্ষা ব্যবস্থার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বাগেরহাটের চিতলমারীর “শিশু শিক্ষা নিকেতন” নামের একটি পাঠশালা। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে চলতে থাকা এ পাঠশালা থেকেই শিক্ষা জীবন শুরু করছে কোমলমতি শিশুরা। তবে পাঠশালাটিতে সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতাসহ রয়েছে নানা সমস্য। সমস্যা গুলো সমাধানে প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়েছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।
সরোজমিনে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রতন্ত গ্রাম দক্ষিণ ডুমুরিয়া গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামে ১৮ বছর ধরে শিশু শিক্ষা নিকেতন নামের একটি পাঠশালা চালাচ্ছেন ৭৫ বছর বয়েসী পন্ডিত কালিপদ বাছাড় নামের এক বৃদ্ধ।সংগ্রাম করে চলা নিম্নমধ্যবিত্তের পরিবার। প্রতিদিন সংগ্রাম করে চলতে হয়। স্থানীয় গ্রামবাসীর সহায়তায় চলা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা মিলে দোয়াত কালি আর তালপাতার। এখানকার শিশুরা দোয়াতের কালি আর বাঁশের কঞ্চির কলম দিয়ে তালপাতায় লিখে শুরু করছে তাদের শিক্ষা জীবন। যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প মনে হতে পারে। পাঠশালাটিতে গেলে অর্ধশত শিশু তালপাতায় অক্ষর জ্ঞান চর্চার দেখা মিলে।
পাঠশালার শিক্ষক পন্ডিত কালিপদ বাছাড় বলেন, তালপাতায় অক্ষর চর্চায় হাতের লেখা ভালো হয়। এই পাঠশালা থেকে শিশুরা প্রথম অক্ষরজ্ঞান লাভ করে। তারা স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ, বানান, যুক্তাক্ষর, শতকিয়া, নামতা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে এখান থেকে। এই পাঠশালা থেকে শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়।
স্থানীয় অভিভাবক লক্ষ্মি রানী বলেন, আমাদের পাঠশালার শিক্ষক কালিপদ বাছাড় শিশুদের খুব ভালো পড়ান। তিনি হাতে ধরে শিশুদের তালপাতার লেখা শিখায়। এ কারনে আশপাশের প্রায় ৫টি গ্রামের ৫০ জন শিশু এই পাঠশালায় পড়াশুনা করে। ভালো পড়াশুনার কারনে আমারাও আগ্রহ নিয়ে শিশুদের এই পাঠশালা ভর্তি করি। প্রতি শিক্ষার্থীদের জন্য মাসে মাত্র ১৫০ টাকা নেন শিক্ষক কালিপদ বাছাড়। যা দিয়ে তালপাতা ও দোয়াত কালি পাঠশালাটির বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করা হয়।
অপর অভিভাবক শীল্পা রানী মন্ডল বলেন, আমাদের এই পাঠশালাটি সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত চলে। বিদ্যুৎ না থাকার কারনে প্রচন্ড গরমে খুব কষ্ট হয় শিশুদের। এছাড়া কোন খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। দুপুরে নদীতে জোয়ার এলে পাঠশালার মাঠটি পানিতে তলীয় যায়, তখন কাদাপানি পার হয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমাদের বাড়ীতে যেতে হয়। আমরা অভিভাবকরা জলাবদ্ধতাসহ পাঠশালাটির সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা ভজন মন্ডল ও নিলয় ঢালি বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া দক্ষিনপাড়া শিশু শিক্ষা নিকেতন নামের এই পাঠশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। বর্তমানে পাঠশালাটিতে বিদ্যুৎ না থাকা ও জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, আমরা স্থানীয় ভাবে পাঠশালাটি দেখাশুনার পাশাপাশি সমস্যগুলো সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ঐতিহ্যবাহি এই পাঠশালাটির সমস্য সমাধানে জেলা প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া দক্ষিণপাড়া নামের একটি পাঠশালা রয়েছে। পাঠশালাটিতে এখনও সেই পুরাতন আমলের তালপাতার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যেটা আমাদের পুরাতন শিক্ষা ব্যবস্থা ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। আমি জানতে পেরেছি পাঠশালাটিতে বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতা বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুতই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে বাঘ, তিন দিনে দেখা মিলল তিনবার
বাগেরহাট :: বিশ্ব ঐতিহ্য পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ পূর্ব সুন্দরবনে তিন দিনে তিন বার বাঘের দেখা পেলেন পর্যটক ও বনরক্ষীরা। তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে বনে প্রথম প্রবেশ করেই বাঘের দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত পর্যটকেরা। সাঁতরে নদী পার হওয়ার বিরল দৃশ্য মোবাইলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন পর্যটক ও বনরক্ষীরা।
বন বিভাগ জানায়, গতকাল রোববার সকাল ৭টার দিকে ‘এমভি ক্রাউন’ নামে পর্যটকবাহী জাহাজ পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার রেঞ্জের কটকা টাওয়ারের খালে প্রবেশ করলে একটি বাঘ সাঁতরে নদী পার হতে দেখেন পর্যটকেরা। আগের দিন শনিবার সকাল ৮টার দিকে ‘এমভি বন সাম্পান’ নামে অপর একটি পর্যটকবাহী জাহাজের পর্যটকেরা কচিখালী নদীতে আরও একটি বাঘ সাঁতরে যাওয়ার বিরল দৃশ্য দেখেন।
এ ছাড়া, শুক্রবার বিকেলে বনরক্ষীরা নিয়মিত টহলকালে শরণখোলা রেঞ্জ অফিস এবং আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের মধ্যবর্তী এলাকার বনে একটি বাঘের দেখা পান। পৃথক তিনটি স্থানে বাঘ দেখার দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন পর্যটক ও বনরক্ষীরা।
এর আগে গত ৮ আগস্ট সকালে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের অফিসের সামনে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে পান বনরক্ষীরা। বিশাল রয়েল বেঙ্গল টাইগারটি বনরক্ষীদের ব্যারাকের খুব কাছে চলে আসে। এ সময় মোবাইলে বাঘটির ভিডিও ধারণ করেন এক বনরক্ষী।
এ ছাড়া, গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি অফিসের পুকুর পাড়ে দেখা মেলে জোড়া বাঘের। প্রায় ২২ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে বাঘ দুটি আবার বনে ফিরে যায়। এদিকে ২৪ ফেব্রুয়ারি কটকা এলাকায় তিনটি বাঘ দেখতে পান বনরক্ষীরা।
শরণখোলা রেঞ্জের কটকা পর্যটন স্পট ও অভয়ারণ্য কেন্দ্রর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুরজিৎ চৌধুরী প্রত্যক্ষদর্শী পর্যটকদের বরাত দিয়ে জানান, গতকাল রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে ‘এমভি ক্রাউন’ নামে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ কটকা টাওয়ারের খালে ঢোকার সময় একটি বাঘ দেখতে পান। বাঘটি সাঁতরে খাল পার হচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে উল্লসিত হয়ে ওঠেন পর্যটকেরা।
খুলনার পপুলার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহ জামাল খান পপলু জানান, তাঁদের পর্যটকবাহী ‘বন সাম্পান’ জাহাজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে কটকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। জাহাজটি সুপতি এলাকা অতিক্রম করার সময় একটি বাঘ সাঁতরে নদী পার হতে দেখে। এ সময় “বাঘ, বাঘ” বলে চিৎকার করতে থাকেন পর্যটকেরা।
বন সাম্পান জাহাজে পর্যটক হিসেবে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনিরুল খান। তাঁর বরাত দিয়ে শাহ জামাল পপলু জানান, তাঁরা যে বাঘটি দেখতে পান সেটি ছিল একটি বাঘিনী।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান বলেন, তিন মাস বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। কোলাহলমুক্ত থাকায় বাঘসহ বন্যপ্রাণী নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ পেয়েছে। যার প্রমাণ হিসেবে প্রথমবার বনে প্রবেশ করেই বাঘের দেখা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। পর্যটকবাহী জাহাজ এম ভি ক্রাউন ও বন সাম্পানের পর্যটক এবং বনরক্ষীরা পৃথক পৃথক স্থানে তিনটি বাঘ দেখেছেন।
এসিএফ মাহবুব হাসান আরও বলেন, বন বিভাগের কঠোর নজরদারিতে বন অপরাধ কমে যাওয়ায় বাঘ, হরিণের সংখ্যা বেড়েছে। ভবিষ্যতে পর্যটকেরা সুন্দরবনে অহরহ বাঘের দেখা পাবে বলে আশা করি।