বুধবার ● ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » তথ্যপ্রযুক্তি » নুনু মিয়ার বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
নুনু মিয়ার বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলির সদস্য এসএম নুনু মিয়ার উপর সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলির সদস্য ও শ্রমিক নেতা মো. ময়না মিয়া।
আজ মঙ্গলবার ৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে নুনু মিয়াকে একমাত্র আসামী করে এ মামলা দায়ের করেন তিনি, (মামলা নং-১৭১/২৩)। মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক মনির কামাল। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মিছবাহুর রহমান আলম।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানকে নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিজস্ব ইউটিউব ও ফেসবুকে জঘন্য মিথ্যা, কুরুচীপূর্ণ, আক্রমনাত্মক ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে মুহিবুর রহমানের মানহানি করিয়াছেন এবং মুহিবুর রহমানকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
এমন বক্তব্যে পৌর এলাকার সাধারণ মানুষ ও তাহার সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এতে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার উপক্রম হয়েছে। তিনি অপরাধ আমলে নিয়া আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যুক্রমে আদালতে সুবিচার কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বনাথে আমার মাধ্যমে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন দেখে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে আইনী লড়াইয়ে এ মামলার জবাব দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ আগস্ট সরকারি বরাদ্দের নামে ৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নুনু মিয়া ও তার পিএস দবিরসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন জামাল আহমদ নামে ভুক্তভোগী। এরপর ৩০ আগস্ট পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের উপর সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মো. নুরুল হক।
বিশ্বনাথের দুই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলা ও দুজনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে নেটিজনদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। এছাড়া তাদের দ্বন্দ এখন সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে বলে আশংকা করছেন সচেতনমহল।
বিশ্বনাথে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষকে মাদ্রাসায়
প্রবেশে বাঁধা দিলেন কর্তৃপক্ষ, উত্তেজনা
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেলিকোনা গ্রামস্থ ‘এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসা’র অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইনকে সম্প্রতি সাময়িক বরখাস্ত করেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বরখাস্তের পর গত রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) তিনি (বারখাস্তকৃত অধ্যক্ষ) জোরপূর্বক মাদ্রাসায় প্রবেশ করতে চাইলে তাতে বাঁধা দেন কর্তৃপক্ষ।
এনিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাতবিতন্ডা শুরু হলে থানা পুলিশের এসআই দিপঙ্কর ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ঘটনার পর থেকে মাদ্রাসার এডহক কমিটির সাবেক সভাপতি নিজামুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা হরমুজ আলী এবং বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, ২০২০ সালের ১ ফেব্রæয়ারী মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মারা যাবার পর মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের একাধিক পত্রের নির্দেশ সত্বেও অধ্যক্ষ আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইন কমিটির সভাপতির শুন্য পদ পূরণ করেননি।
২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি বোর্ড থেকে এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয় কিন্তু বোর্ডের একাধিক নির্দেশ অমান্য করে দীর্ঘ ১১ মাসেও তিনি (আবু তাহির) এডহক কমিটি করেননি। ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি গঠন করে কমিটি অনুমোদনের প্রস্তাব বোর্ডে প্রেরণ করতে ব্যর্থ হন।
এরপর ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইনকে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক মুখলিছুর রহমানকে ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’ হিসেবে দায়িত্ব প্রদানসহ এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর তিনি নিজামুল ইসলামকে সভাপতি, অধ্যক্ষ আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইনকে সদস্য সচিব, নূর উদ্দিনকে অভিভাবক সদস্য এবং এটিএম নূর উদ্দিনকে শিক্ষক প্রতিনিধি করে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করে বোর্ডে প্রেরণ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে চলতি ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারী কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
অন্যদিকে অধ্যক্ষ তার অপসারণের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে গত ৭ জুলাই পর্যন্ত ৬ মাসের স্থগিতাদেশ পেয়ে স্বপদে বহাল থাকেন। ফলে বিধি মোতাবেক এডহক কমিটি চলতি ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ কমিটির সিদ্ধান্ত মতে অধ্যক্ষকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত ৪ মাসের ছুটি প্রদান করা হয়। এসময় মাদ্রাসার নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেওয়া হয় মাওলানা হরমুজ আলীকে।
এদিকে অধ্যক্ষকে ছুটিতে পাঠিয়ে বিধি মোতাবেক পূর্ন্যাঙ্গ কমিটি নির্বাচনপূর্বক বোর্ডে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়। একই সময়ে (মার্চে) একটি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তপূর্বক সত্যতা প্রমানিত হলে মাদ্রাসা অধিদপ্তর ও শিক্ষাবোর্ড এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি ২০২৩ সালের ৬ জুলাই এডহক কমিটি অধ্যক্ষকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে এবং এমপিও স্থগিতের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করে।
বর্তমানে বিষয়টি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের জন্য আপেক্ষমান রয়েছে। ঠিক সে সময় গত ২০ জুলাই মেয়াদ শেষ হওয়া একটি আদেশের কপি নিয়ে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) মাদ্রাসায় গিয়ে হাজির হন সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ আবু তহির মোহাম্মদ হোসাইন।
মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, হাই কোর্টের আদেশ ও শিক্ষা বোর্ডের আদেশ কপি নিয়ে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে আমাকে তারা অন্যায়ভাবে বাঁধা দেন। শিক্ষাবোর্ডের আইন অনুযায়ী মাদ্রাসার এডহক কমিটি কোন ভাবেই আমাকে (অধ্যক্ষ) বরখাস্ত করতে পারেনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মাদ্রাসার এডহক কমিটির সাবেক সভাপতি নিজামুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হরমুজ আলী বলেন, মাদ্রাসার ১৪ লাখ টাকার হিসেব না দেওয়ায় অধ্যক্ষকে সম্প্রতি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) মেয়াদোত্তীর্ন আদেশ কপি নিয়ে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে ঢুকতে চাইলে তাকে প্রবেশ করতে বাঁধা দেওয়া হয়েছে।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, পরিস্থিতিও পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। উভয় পক্ষের কাগজপত্রাদি দেখে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।