বৃহস্পতিবার ● ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে হৃদয়কে ছাড়েনি অপহরণকারীরা
২ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে হৃদয়কে ছাড়েনি অপহরণকারীরা
আমির হামজা, রাউজান প্রতিনিধি :: গত ২৮ আগষ্ট রাতে রাউজানের শিবলী সাদিক হৃদয় (২০) নামের যুবকে অপহরণ করা হয় একটি মুরগী খামার থেকে। অপহরণের পর দাবি অনুযায়ী দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ প্রদান করলেও কলেজ শিক্ষার্থী হৃদয়কে অপহরণকারীরা মুক্তি দেয়নি। অপহরণ হওয়া কলেজ শিক্ষার্থী হৃদয় চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ৮নম্বর কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়ার গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শফিক ড্রাইবারের ছেলে। মুক্তিপণ দেওয়া পর সন্তানকে ফিরে না পেয়ে হৃদয়ের বাব-মা ও তার এলাকার লোকজন ভিষন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ছেলের পথ চেয়ে অপেক্ষায় পরিবারের সবাই। হৃদয় কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেই পড়াশোনার পাশাপাশি ঐ মুরগীর খামারে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় যে মুরগীর খামারে চাকরি করতে সেখানে সবাই ছিলেন উপজাতি চাকমা কিছু যুবক। মুরগীর ফার্মে চাকরি করা চাকমা যুবকদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেখানে গত ২ মাস আগে চাকরি করা চাকমা যুবকদের সাথে হৃদয়ের ঝগড়া ঝাটি হয়। পরে মুরগী খামারের মালিকরা তাদের মিলেমিশে করে দেন।
জানা যায়, অপহরণের দুইদিন পর তাদের বাড়িতে ফোন করা হয়। ছেলেকে জীবিত পেতে হলে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। কিন্তু হৃদয়ের পরিবারের এই বিশাল অংশের টাকা ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সর্বশেষ তাদের পরিবারে অপহরণকারীরা আবারও ফোন করেন সেই সময় ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে এই অসহায় পরিবার সন্তানকে ফিরে পেতে অপহরণকারীদের দেওয়া স্থান অনুযায়ী হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়া নামক স্থানে গিয়ে ২জন লোকের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। টাকা দেওয়ার পর টাকা হাতে নিয়ে মানুষ গুলো জানান তোর ছেলে সামনে সিএনজিতে আছে খুঁজেনে। তার বাবা এদিকে সেদিক ছেলেকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে, না পেয়ে আবারও সেই স্থানে গিয়ে দেখেন মানুষ গুলো নেই। পরে তার বাবা বাড়িতে চলে আসলেও তার সন্তান প্রায় ১১ দিন পার হলেও এখনো বাড়ি আসেনি। পরিবারের আহাজারি আর আর্তনাদে ভারি হচ্ছে আকাশ বাতাস। হৃদয়ে ঘর থেকে মুরগীর খামারে দূরত্ব প্রায় ২ মিনিটের পথ। মুরগীর খামারে একসাথে থাকা মো. জিহান জানান, রাতে ৯টায় আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। সেইদিন হৃদয় গান শুনে আমাদের পরে কোনো একসময় ঘুমান। প্রতিদিন সকালে আমাদের ঘুম থেকে তিনি উঠান। কিন্তু সকল হলেও সেই দিন হৃদয় আমাদের ডাকেনি। আমরা সকালের ঘুম থেকে উঠে দেখি হৃদয় বিছানায় নেই। এরপর তার মা সকাল ৯টার দিকে তাকে ডাকতে আসলে খামারে থাকা বাকিরা জানান হৃদয় তো এখানে নেই। মা নাহিদা আকতার বলেন, অপহরণের পর তার বাবার মোবাইলে একটি ফোন আসলে সেটি তিনি ধরেন তখন ছেলে হৃদয় বলেন মা আমাকে রাত ১২টার দিকে কিছু মানুষ আটক করে নিয়ে আসেন প্রায় ১২ ঘন্টা মতো গাড়িতে ছিলাম। আপনারা সেদিক থেকে ফোন দিয়েন না। ফোন দিলে আমাকে মেরে ফেলবেন বলছেন। এরপর আবার আমার মোবাইলে কল দিয়ে বলে ছেলেকে পেতে হলে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে তোর ছেলেকে জীবিত আর পাবিনা। পরে তাদের বুঝিয়ে আমরা ২ লাখ টাকায় রাজি করি। তাদের কথা মতো টাকা দিলেও তারা আমার সন্তানকে ফেরত দেনি। তার বাবা তাদের টাকা দিয়ে তাদের পায়ে পর্যন্ত পড়েন।
এবিষয়ে রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার অজয় দেব শীল বলেন, দুই অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞেসাবাদ করা হচ্ছে। মূল অপহরণকারীকে আটক করতে পুলিশের অভিযান অব্যহত আছে।