শুক্রবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » বাগেরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-২ চালক আটক
বাগেরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-২ চালক আটক
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট:বাগেরহাটে মোংলা ও ফকিরহাটে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন।নিহতরা হলেন- জেলার মোংলা পৌর শহরের ভাসানী সড়ক কলেজ মোড় এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ বেগম (৪৫) ও ফকিরহাট উপজেলার মানসা বাহিরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা অনুপম পাল (৪৫) বাগেরহাটের মোংলায় ইজিবাইকের চাপায় শাহনাজ বেগম (৪৬) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে। নিহত শাহনাজ বেগম মোংলা শহরের ভাসানী সড়ক কলেজ মোড় এলাকার মোঃ শাহালমের এর স্ত্রী। এ ঘটনায় ইজিবাইক সহ চালক ইসমাইল হোসেনকে আটক করে মোংলা থানা পুলিশ।
জানা গেছে, বিকেলে বাগেরহাটে মোংলা প্রতক্ষ্যদর্শী ও পুলিশ জানায়, মোংলা সরকারী কলেজের দ্বিতীয় গেটের সামনে রাস্তা পার হচ্ছিল শাহনাজ নামের এক নারী। সে বাসা থেকে বের হয়ে আত্মীয়র বাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী একটি ইজিবাইক তাকে সামনা-সামনী ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সে রক্তাক্ত জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুরুতর অবস্থায় পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মোহাইমেন ইবনে মোস্তাফিজ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানায়, হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত হয়েছে। তবে আইনী জটিলতার কারণে পুলিশকে খবর দেয়া হয়েছে, তারা এসে ব্যাবস্থা নিবে বলে জানায় তিনি। এর আগে, একই দিন সকালে ফকিরহাটের লখপুর এলাকায় মোংলা ভিআইপি লাগেজ কোম্পানির স্টাফ বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ওই কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার অনুপম পাল গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সকালে তিনি অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে অফিসের স্টাফ বাসে করে খুলনা থেকে মোংলায় যাচ্ছিলেন।
কাটাখালী হাইওয়ে থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সামসুদ্দীন বলেন, খবর পাওয়ার পর সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযান চালিয়ে ইজিবাইক চালক মোঃ ইসমাইল হোসেনকে গাড়ী সহ আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি। আটক গাড়ী চালক ইসমাইল হোসেন মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বাশঁতলা গ্রামের বাসিন্দা ছবেদ আলীর ছেলে। শুক্রবার সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
বাগেরহাটে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ২৭ ইউপি ভবনে সেবা নিতে আসে লাখো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে
বাগেরহাট :: বাগেরহাটে সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ২৭ ইউপি ভবন দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। এসব ভবনের কোনোটির পলেস্তরা খসে পড়ছে, কোনোটির দেয়ালে ধরেছে ফাটল, আবার কোনটির ছাদ বেয়ে পড়ছে পানি। এ অবস্থায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন পরিষদগুলোতে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিক সেবা নিতে আসা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাটের তেলিগাতি, বলইবুনিয়া,বাধাল, ষাটগম্বুজ, কাড়াপাড়া, গাংনী, কলাতলা, রায়েন্দা, রামচন্দ্রপুর ও বড়বাড়িয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ পরিষদ ভবন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে সেবা গ্রহণ করেন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।
সরেজমিনে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতীতে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তুরা খসে পড়ছে। ভবনের ছাদেও ধরেছে ফাটল। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। নাগরিকরাও ঝুঁকি নিয়ে সেবা গ্রহণ করছেন।
বাগেরহাটের বিভিন্ন ইউপি ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে, বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে দরজা-জানালা। জানালার গ্রিলে ধরেছে মরিচা। ভবনের দেয়ালে জন্মেছে আগাছা। শিকড় ছড়িয়েছে ভবনের চারদিকে।
কচুয়া উপজেলার বাঁধন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা মানুষদের দীর্ঘ লাইন। সবার মধ্যেই ভবন নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছেন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শুধু বাঁধন ইউনিয়ন পরিষদ নয়, তেলিগাতি, বাধাল, রায়েন্দা, ষাটগম্বুজ, কাড়াপাড়া, বলইবুনিয়া, গাংনী, কলাতলা, রামচন্দ্রপুর, বড়বাড়িয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ২৭টি পরিষদের চিত্র একই রকম। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে অন্তত ৯টি পরিষদ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব পরিষদে সেবা নিতে আসেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ।
সেবা নিতে আসা মমতা রানী দাস বলেন, ‘বয়স্ক ভাতা নিতে এসেছি। বয়স হয়েছে, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। মানুষের ভিড়ের মধ্যে কোথায় বসব। পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা ভবনে কোনো জায়গা নাই, তাই গাছের নিচে বসে আছি। প্রচণ্ড গরম, আমার মতো অনেক মানুষ সেবা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছে।’
তেলিগাতি পরিষদে সেবা নিতে আসা মাহফুজ শেখ বলেন, ‘পরিষদে কোনো সেবা নিতে এলে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। তাই সেবা নেওয়ার সময় পর্যন্ত পরিষদের বাইরে থাকি। বর্তমান সরকারের সবকিছুতে আধুনিকতা ও ডিজিটাল উন্নয়ন আর স্মার্টের ছোঁয়া লাগলেও এমন জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত উন্নয়নের কোনো ছোঁয়াই স্পর্শ করেনি। এটি এই ইউনিয়নবাসীদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ও শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার আগে এই ইউনিয়ন পরিষদকে আধুনিকায়ন করা অত্যন্ত জরুরি এবং সময়ের দাবি।’
সেবা গ্রহীতা তানিয়া বেগম বলেন, ‘পরিষদের পুরোনো ভবন ভেঙে পড়ছে। তাই টিসিবির কার্ড নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আমরা কয়েকবার এখানে এসে নানা সমস্যায় পড়ছি।’
এসব ঝুঁকি ও বিড়ম্বনার কথা স্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদ আকতার বলেন, ‘পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে সেবা দিয়েই গত বছর খুলনা বিভাগের মধ্যে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রমে বিভাগীয় পর্য়ায়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছি। জরাজীর্ণ ভবনের সেবা দিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছি। সেবার মান উন্নয়নে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানাই।’
বাধাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকীব ফয়সাল অহিদ বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটি অনেকদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়েছে। আশেপাশে কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। প্রতিদিন যারা সেবা নিতে আসে তারাও ঝুঁকির মধ্যে সেবা গ্রহণ করেন। এ অবস্থায় দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করে নাগরিকদের ভোগান্তি দূর করার দাবি জানাচ্ছি।
বাগেরহাট এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান বলেন, জেলায় ৭৫ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্য়ায়ে ৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখনও ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ও গাংনী পরিষদের নিজস্ব জায়গা নেই। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঝিউধারা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন বরাদ্দের অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এসব ভবনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে নতুন পরিষদ ভবন নির্মান করা হবে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, জনদুর্ভোগ কমাতে এবং সেবার মান উন্নয়নে নতুন ভবন নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব ভবনগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাগেরহাটে এক বছরে ২ হাজার ৪৫৯ যক্ষ্মারোগী শনাক্ত যক্ষ্মা নির্মূলে প্রধান বাধা রোগী শনাক্ত
বাগেরহাট :: বাগেরহাটে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত ২ হাজার ৪৫৯ জন যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হয়েছে।বিশ্বের যে ৮ থেকে ১০ দেশে যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। যক্ষ্মায় প্রতি ১২ মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। সে হিসাবে দিনে মৃত্যু হচ্ছে ১০০ জনের। অথচ যক্ষ্মার চিকিৎসা রয়েছে দেশে। সরকার বিনা মূল্যে যক্ষ্মার ওষুধ দিচ্ছে। তার পরও এত মৃত্যুর নেপথ্য কারণ হলো, যক্ষ্মা নিয়ে মানুষের অসচেতনতা এবং রোগী শনাক্ত না হওয়া।
বাগেরহাট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জেলার শিক্ষকদের সঙ্গে জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির (নাটাব) এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান এ তথ্য জানান। ‘বিনিয়োগ করি যক্ষ্মা নির্মূলে, জীবন বাঁচাই সবাই মিলে’ এই স্লোগান সামনে রেখে নাটাবের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নাটাবের বাগেরহাট, জেলা সাধারণ সস্পাদক এফএম মোস্তাফিজুল হকের সভাপতিত্বে সভায় যক্ষ্মা রোগ বিষয়ে বক্তব্য দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার মো. মেহেদী হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন নাটাবের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. জিয়াউর রহমান।
সভায় প্রধান অতিথি ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান আরও বলেন, শনাক্ত হওয়া রোগীদের চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে। এখন যক্ষ্মা রোগে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে দ্রুত যক্ষ্মা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে এ রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
বক্তারা সচেতনতার জন্য উপস্থিত শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, কারও কাঁশি দুই সপ্তাহের অধিক হয়ে গেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার চিকিৎসা করতে হবে। সরকার এই চিকিৎসা বিনামূল্যে করে থাকে। তাই এই যক্ষ্মা রোগকে অবহেলা না করে চিকিৎসা করতে হবে। সরকারি, বেসরকারিসহ বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ বিষয়ে জনগণকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মতবিনিময় সভাটি সার্বিকভাবে পরিচালনা করেন নাটাবের এফএল এস তরুন কুমার বিশ্বাস।