বুধবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » অপহরণকারী সন্ত্রাসীদের অপরাধের প্রধান আস্তানা রাঙামাটির রঙিনছড়া
অপহরণকারী সন্ত্রাসীদের অপরাধের প্রধান আস্তানা রাঙামাটির রঙিনছড়া
আমির হামজা, রাউজান প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের রাউজানের কদলপুর গ্রামের কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়ের খণ্ডিত লাশ যেখানে পাওয়া গেছে, সেই স্থানের নাম রঙিনছড়া পাহাড়। পাহাড়টি রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা সীমান্তে। কাউখালী উপজেলার অধীনে পাহাড়টি এখন পার্বত্য উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের অপরাধের প্রধান আস্তানা। অপহরণ করে হত্যার জন্য এই পাহাড় বেছে নিয়েছে তারা। হৃদয়ের দেহাবশেষ উদ্ধার করাতে গিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দেখেন, সেই পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের কঙ্কাল। প্রত্যক্ষদর্শী এলাকার ইউপি সদস্য আলী আকবর বলেন, পুলিশ হৃদয়ের লাশ উদ্ধারের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। ৬০ ফুট উঁচু পাহাড়টিতে উঠে দেখি অনেকগুলো লাশের কাল। পুরো পাহাড় ঘুরে দেখলে কত কাল দেখতাম তা বলা কঠিন। সেদিন পাহাড়ে আরও যার উঠেছে তারা ভয়ংকর তথ্য দিয়েছেন। এই পাহাড় উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের নৃশংসতার কেন্দ্র এখন।
পুলিশের সঙ্গে উদ্ধারে যাওয়া রাউজান পুলিশের লাশ উত্তোলনকারী (নিয়মিত) মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘অভিযুক্ত উমংচিং মারমার দেখানো হৃদয়ে দেহাবশেষগুলো সংগ্রহ করার সময় মাথা কাটা কয়েকটি কঙ্কাল পড়ে থাকতে দেখি। সেখানে আরও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষে হাত ও পায়ের হাড়। কয়েকটি মাথার খুলিও দেখতে পেয়েছি। আমার মনে হয়েছে অনেকদিন ধরে সন্ত্রাসীরা মানুষকে অপহরণ করে এখানে এনে হত্যা করে আসছে। এদিকে, কলেজ শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক হৃদয়ের দেহাবশেষ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গণপিটুনির ঘটনায় মামলা : হৃদয়ের দেহাবশেষ নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের গাড়ি অবরোধ করে অভিযুক্ত উমংচিং মারমাকে তুলে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনায় ও পুলিশের ওপর গ্রামবাসীর হামলা এবং গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে দুই হাজার জনকে আসামি করা হয় মামলার এজাহারে। হৃদয়ের পরিবারে আহাজারি হৃদয়ের মণ্ডিত লাশের অংশগুলো দেখে ঘটনার দিন বারবার আন হারান হৃদয়ের মা নাহিদা আক্তার। সন্তানের শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে এসেছে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন হৃদয়ের বাবা ট্রাকচালক মোহাম্মদ শফি ও মা নাহিদা আক্তার। তিনি বলেন, তাদের সংসারে দুই পুত্রসন্তান। হৃদয় ছিল বড়। ছোট সন্তান ১৪ বছর বয়সী শহিদুল ইসলাম রোহান পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। হৃদয়ের বাবা মোহাম্মাদ শফি বলেন, বান্দরবানে গিয়ে অপহরণকারীদের মুক্তিপণের দুই লাখ টাকা দিয়েছি। এরপরও ছেলে ফিরে না আসায় এক সপ্তাহ পাহাড়ে পাহাড়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। এই নৃশংসতা যেন আর কারও সঙ্গে না হয়, প্রশাসনের কাছে এই আবেদন। মা নাহিদা আক্তার বলেন, ‘উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা পোলট্রি ফার্মে চাকরির নামে আমার ছেলেকে অপহরণ ও হত্যা করতে এসেছিল। তারা আমার বুকের ধন কেড়ে নিয়েছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, আমার মনে হয়েছে হৃদয়ের দেহাবশেষ যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেটা উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। সেখানে অনেক মানুষের কঙ্কাল দেখা গেছে। গণপিটুনিতে নিহত অভিযুক্ত উংচিং মারমা তার স্বীকারোক্তি দিয়েছিল যে, সেও উপজাতীয় সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের ১৪ দিন পর গত ৭ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের মা বাদী হয়ে রাউজান থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন- উমংচিং মারমা (২৬), সুইচিং মারমা (২৫), অংঙ্গুইনং মারমা (২৫), ঊক্যাথোয়াই মারমা। ঊনচিৎ গণপিটুনিতে নিহত হয়। পুলিশ আরও ২ জনকে পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- বেতবুনিয়া ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্যু প্রমং মারমার ছেলে ও আছমা (২৬), কাপ্তাই থানার চিহ্নং ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী পাড়ার উষাচিং মারমার ছেলে উক্যথোয়াই মারমা (১৯)। এদিকে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে অপহরণের ঘটনা। এমন ঘটনা বাড়লে পর্যটন খাতে ব্যাপক ধস নামতে পারেন বলে মনে করছেন। তাই অপরাধীদের চিহ্নিত করে করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।