সোমবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » এন্টি চাকমাসহ ৩ জনকে অপহরণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ
এন্টি চাকমাসহ ৩ জনকে অপহরণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ
হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দয়াসোনা চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সাংগঠনিক কাজ শেষে খাগড়াছড়ি ফেরার পথে গত শনিবার দীঘিনালায় নব্যমুখোশ দুর্বৃত্ত কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা এবং দুই ছাত্রীকে অপহরণের প্রতিবাদে ও অপহরণকারীদের শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।
“অপহরণ খুন গুমসহ ঠ্যাঙারে সন্ত্রাস বন্ধ কর” শ্লোগানে আজ সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারের ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা পরিষদ, নারাঙহিয়া, উপজেলা পরিষদ এলাকা হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে পূনরায় স্বনির্ভর বাজারে এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসভাপতি মিথুন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, কেন্দ্রীয় সদস্য দয়াসোনা চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসভাপতি লিটন চাকমা। এছাড়া অপহরণের শিকার হয়ে সদ্য মুক্তি পাওয়া এন্টি চাকমাও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এ সময় রিতা চাকমা ও দয়াসোনা চাকমা এন্টি চাকমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
বক্তারা বলেন, শাসকগোষ্ঠির একটি বিশেষ মহল পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যার কারণে তারা অপহরণ, খুন, ধর্ষণসহ নানা ঘটনা সংঘটিত করছে। ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তদের লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের খুন-গুম, অপহরণ করা হচ্ছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা থেকে এন্টি চাকমা ও দুই শিক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনাও তারই অংশ। রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে সেনা সদস্য কর্তৃক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি উদ্দেশ্যে মুখোশ দুর্বৃত্তদের দিয়ে এই অপহরণ ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।
তারা আরো বলেন, ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ রাঙামাটির কুদুকছড়ি থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সস্পাদক মন্টি চাকমা ও সদস্য দয়া সোনা চাকমাকে অপহরণের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার না হওয়ার বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার দুই দিন অতিক্রান্ত হলেও এন্টি চাকমাদের অপহরণের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সন্ত্রাসীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এভাবে সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করছে।
রাষ্ট্রীয় বাহিনী প্রত্যক্ষভাবে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে থাকে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর এই নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের সৃষ্টি করা হয়। সৃষ্টির পর থেকে তাদেরকে একের পর এক খুন-খারাবির কাজে লেলিয়ে দেয়া হয়। এই সন্ত্রাসীরাই ২০১৮ সালে স্বনির্ভর বাজার-পেরাছড়ায় প্রকাশ্যে দিবালোকে সশস্ত্র হামলাা চালিয়ে তপন, এল্টন, পলাশসহ ৭ জনকে হত্যা করেছিল। এর আগে তারা হত্যা করেছিল ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমাকে। কিন্তু এই নব্যমুখোশ সন্ত্রাসী কর্তৃক এ যাবত যত খুন-গুম, অপহরণের ঘটনা ঘটেছে তার কোন ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার করা হয়নি।
বক্তারা গতকাল পানছড়িতে বিজিবি কর্তৃক এক ব্যক্তির ১২ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার সাধারণ জনগণের ওপর গুলিবর্ষণ ও আজকে নব্যমুখোশ দুর্বৃত্ত কর্তৃক মহালছড়ি থেকে সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে আসা নারীদেরকে গাড়ি আটকিয়ে বাধা দেয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশে এন্টি চাকমা তাদেরকে অপহরণ ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন এবং বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে আমাদেরকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি যতই নিপীড়ন-নির্যাতন, অপহরণ করা হোক না কেন জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় আন্দোলনে সক্রিয় থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে এন্টি চাকমাসহ দুই ছাত্রীকে অপহরণকারী নব্য মুখোশ দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের সেনা মদদদান ও আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করা, কাপ্তাইয়ে স্কুল ছাত্রী ধর্ষণকারী সেনা সদস্যদের গ্রেফতার ও শাস্তি দেয়া এবং সেনাশাসন অপারেশন উত্তরণ তুলে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করার দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে ধর্ষক ও অপহরণকারীদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।