সোমবার ● ২৩ অক্টোবর ২০২৩
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবস পালন
গাজীপুরে বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবস পালন
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার :: গাজীপুরে বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবস পালন করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সড়কে হাজীবাগে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে এ দিবসটি পালন করা হয়।
দিবসটি পালন উপলক্ষে সকালে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ খাইরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মোঃ মামুনুল করিম, গাজীপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম আনারুল করিম, গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন, প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা কামরুজ্জাহান চৌধুরী, কনসালট্যান্ট ফিজিওথেরাপিস্ট ডাঃ মুহম্মদ নাসির উদ্দিন।
এ সময় ঢাকার মিরপুর সি, আর, পি’র কনসালট্যান্ট অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট এবং শিশু বিভাগের ইনচার্জ সুলতানা রাজিয়া, অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট নুসরাত জাহান রিক্তা, ফিজিওথেরাপিষ্ট আতিয়ার রহমান, ফিজিওথেরাপিষ্ট ফাইজা বাহাউদ্দিন, স্পিচ থেরাপিষ্ট মোঃ শাহজাজান, অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট হাসানুল করিমসহ স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ একটি মোবাইল ক্লিনিক অংশগ্রহণ করে।
পরে জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের হাতে সাদাছড়ি তুলে দেন।
প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা কামরুজ্জাহান চৌধুরী জানান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রাণালয় অধীন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে শারীরিক মানসিকসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবা প্রদান করা হয়। সেরিব্রাল পালসি রোগীদের মালটি ডিসিপ্লিনারি টিমের (OT, SLT, PT) মাধ্যমে পূর্নাঙ্গ পুনর্বাসন ব্যবস্থা করা হয়। অটিজম শিশুদের অকুপেশনাল ও স্পিচ থেরাপি সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়াও স্ট্রোক এবং ঘাড়ে ব্যথা, কোমড়ে ব্যথা, কথা বলতে বা বুঝতে সমস্যা এই রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়।
জানা যায়, বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবস প্রতি বছর ৬ অক্টোবরে পালিত হয়। এই দিনের উদ্দেশ্য হল সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়া এবং সহায়তা করা, রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য সামাজিক পরিবর্তন তৈরি করা। সেরিব্রাল পালসিতে, ‘সেরিব্রাল’ মানে মস্তিষ্কের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং ‘পালসি’ মানে শরীরের দুর্বলতা বা কাঁপুনি।
সেরিব্রাল পালসি একটি একক রোগ নয় বরং বেশ কয়েকটি স্নায়বিক রোগের একটি গ্রুপ যা শিশুর মধ্যে ঘটে এবং স্থায়ীভাবে শিশুর পেশীর নড়াচড়া এবং অঙ্গবিন্যাসকে প্রভাবিত করে, যা শিশুকে আজীবন অক্ষমতায় ফেলে দেয়।
সেরিব্রাল পালসি প্রতি ১০০০ শিশুর মধ্যে ২ থেকে ৪ জনকে প্রভাবিত করে। এটি মোটেও সাধারণ সমস্যা নয়। এই রোগটি বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭ মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করে ৷ তবুও খুব কম মানুষই এটি সম্পর্কে সচেতন। সেরিব্রাল পালসি (CP) হল গর্ভাবস্থায়, জন্মের সময় বা জন্মের পরপরই মস্তিষ্কের ক্ষতি বা অস্বাভাবিক মস্তিষ্কের বিকাশের ফলে সৃষ্ট স্নায়বিক অবস্থার একটি গ্রুপ। এই রোগে দৃষ্টিশক্তি, বক্তৃতা এবং শেখার সমস্যা, বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা, মৃগীরোগ এবং স্বেচ্ছাসেবী পেশী নড়াচড়ার আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতি-সহ বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। এটি মস্তিষ্ক ও পেশীর সমস্যা। অনেকসময় চোখ ও কানও সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত হয়।
সেরিব্রাল পালসি ছোঁয়াচে নয়৷ মানে এটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায় না। এটি একটি প্রগতিশীল রোগও নয় কারণ এর লক্ষণগুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায় না বা খারাপ হয় না। লক্ষণগুলি শিশু থেকে শিশুতে পরিবর্তিত হতে পারে এবং তাদের অবস্থার তীব্রতা অনুসারে চিকিৎসা করা হয়। শিশুদের সেরিব্রাল পালসির অনেক উপসর্গ থাকে। সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। লক্ষণগুলি হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে৷
হাঁটতে ও বসতে অসুবিধা। কোনও কিছু ধরে রাখতে অসুবিধা। পেশী টোন পরিবর্তন। কথা বলতে অসুবিধা। খাবার গিলতে অসুবিধা অত্যাধিক লালারস নির্গত হওয়া। মস্তিষ্কের ভারসাম্য সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা।
সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ সাধারণত ৩-৪ বছর বয়সের আগে শিশুদের মধ্যে দেখা দেয়। এই বয়সের আগে যদি কোনও শিশুর উপরোক্ত সমস্ত উপসর্গ থাকে তবে পিতামাতার অবশ্যই একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। সময়মতো চিকিৎসা নিলে শিশুও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।