রবিবার ● ১০ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ১৪ দিনেও রিটন বড়ুয়া’র উপর প্রধান হামলাকারী রিপনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ
১৪ দিনেও রিটন বড়ুয়া’র উপর প্রধান হামলাকারী রিপনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ
ষ্টাফ রিপোর্টার :: চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে রাঙামাটির মানিকছড়ি একতা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক রিটন বড়ুয়া’কে মারধর করে আহত করাসহ হত্যার চেষ্টার প্রতিবাদে আসামী শাহ জামান রিপন (২৮) পিতা মৃত সেলিম মিয়া, সাং-চম্পক নগর, কোতয়ালী, মোঃ রফিক (৩৫) পিতা সোবাহান তালুকদার, সাং-১৬ নং টিলা বুড়িঘাট, নানিয়ারচর, বাচা মিয়া (৪০), পিতা মৃত ইদ্রিছ মিয়া, সাং-মানিকছড়ি, কোতয়ালী রাঙামাটিসহ অজ্ঞাতনামা ৩ জনসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় ২৮ মার্চ একটি মামলা দায়ের করা হয়৷
মামলাটি করেছেন সন্ত্রাসীদের দ্বারা মারাত্মক আহত রিটন বড়ুয়া ৷ ধারা ১৪৩, ৪১, ৩৮৫, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫, ৩০৭, ৩৭৯ ও ৫০৬ দন্ডবিধি মোতাবেক রাঙামাটি কোতয়ালী থানার পুলিশ উপ পরিদর্শক লিমন বোস মামলাটি রুজু করেন ৷ মামলা নং ১০ তারিখ ২৮/০৩/২০১৬ ইংরেজি ৷ এই মামলার তদন্তকারী হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মানিকছড়ি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই সাফায়েত হোসেনকে ৷
এজাহারের বিবরনে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ মঙ্গলবার বিকাল আনুমানিক ৪ টায় মানিকছড়ি একতা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি অফিসে বিবাদী শাহ জামান রিপন রিটন বড়ুয়ার কাঠ ব্যবসার প্রতিটি জীপ গাড়ীর জন্য ৫০০ টাকা করে চাঁদা দাবী করে ৷ রিটন বড়ুয়া চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে শাহ জামান রিপন তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ও রিটন বড়ুয়া কিভাবে ব্যবসা করে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয় ৷ এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায় ব্যবসায়ীক কাজে রিটন বড়ুয়া ব্যবসায়ী জেবল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে মানিকছড়ি থেকে রাঙামাটিতে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুছা মাতব্বরের সাথে দেখা করে ব্যবসায়ীক কাজ শেষ করে রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টার সময় মানিকছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলে রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শাহ জামান রিপন রিটন বড়ুয়া ও জেবল হোসেন এর মোটর সাইকেলের গতিরোধ করার চেষ্টা করে ৷ রিটন বড়ুয়া দ্রুতবেগে মোটর সাইকেল চালিয়ে চলে গেলেও রাঙামাটি সদর হাসপাতাল সড়কের সামনে শাহ জামান রিপন পিছু নিয়ে রিটন বড়ুয়ার মোটর সাইকেল এর গতিরোধ করার চেষ্টা করলে রিটন বড়ুয়া ও জেবল হোসেন হাসপাতালের সড়কের ভিতর দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে যান এবং জেবল হোসেনকে নামিয়ে দেন ৷ তার পর রিটন বড়ুয়া হাসপাতাল এলাকায় দেবেশ চাকমা (চিকো)’র বাসায় গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দেন ৷ ঘটনা শুনে চিকো চাকমা তার বাসায় অবস্থানের জন্য রিটন বড়ুয়াকে পরামর্শ দেন ৷ রিটন বড়ুয়া প্রায় ১ ঘন্টা চিকো চাকমার বাসায় অবস্থান করে রাত আনুমানিক ১০.২০ মিনিটে একাই মানিকছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন ৷ রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টার সময় ভেদ ভেদী টিভি সেন্টারের সামনে পৌঁছলে মোটর সাইকেলের আলোতে সড়কের বাম পাশে একটি সিএনজি ও একটি মোটর সাইকেলসহ ৫ জন লোককে দাড়ানো অবস্থায় রিটন বড়ুয়া লৰ্য করেন ৷ রিটন বড়ুয়া সামনে পৌঁছা মাত্রই মোঃ রফিক অতর্কিতভাবে রিটন বড়ুয়ার পিঠে কাঠ ধারা আঘাত করে এতে রিটন দ্রুত মোটর সাইকেল চালিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে আরেকটু সামনে থাকা ৩ জন ধারালো অস্ত্র ও মোটর সাইকেলের চেইন ধারা উপর্যপরি রিটনের মাথায় ও পিঠে আঘাট করলে তিনি মোটর সাইকেল থেকে রাস্তায় লুটে পড়ে যান এবং রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় রিটন বড়ুয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে মোটর সাইকেলের চেইন, ছুড়ি ও কাঠের লাঠি দিয়ে বারংবার আঘাত করতে থাকে এবং রিটন বড়ুয়া’র মাথার সামনে পিছনে, হাতে পায়ে গুরুতর জখম ও রক্তাক্ত করে ৷ প্রাণে বাচার জন্য রিটন বড়ুয়া চিত্কার দিলে শব্দ শুনে টিভি সেন্টারের কর্তব্যরত পুলিশ ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসতে দেখে শাহ জামান রিপন রিটন বড়ুয়া’র পকেটে থাকা ব্যবসায়ীক কাজের ২৯ হাজার টাকা নিয়ে নেয় এবং সকলে মিলে রাসত্মার পাশের ড্রেনে রিটন বড়ুয়াকে ফেলে দিয়ে শাহ জামান রিপন ও তার সঙ্গীরা দ্রুত সিএনজি ও মোটর সাইকেল যোগে পালিয়ে যায় ৷ এলাকার লোকজন রিটন বড়ুয়া’কে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন৷ রিটন বড়ুয়া’র চিকিত্সা চলছে ৷
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ মঙ্গলবার শাহ জামান রিপন মানিকছড়ি একতা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক রিটন বড়ুয়া’র কাছ থেকে কোন ধরনের কারণ ছাড়াই চাঁদা দাবি করে৷ রিটন বড়ুয়া চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে প্রকাশ্যে রিটন বড়ুয়া’র প্রান নাশের হুমকি দেয় শাহ জামান রিপন ৷ এতে আশ পাশের ক্ষদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উত্তম মধ্যম দিয়ে একতা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে আটক করে রাখেন শাহ জামান রিপনকে ৷ শাহ জামান রিপন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির ভাই হওয়ার সুবাদে পুলিশ ও আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মানিকছড়ি গিয়ে বিষয়টি মোখিক মুচলেকার মাধ্যমে মীমাংসা করে দেন এবং শাহ জামান রিপনকে রাঙামাটি পাঠিয়ে দেন ৷ সে সময় কোন মামলা দায়ের বা সাধারন ডায়রী কিছুই করা হয়নি ৷
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, রাঙামাটি থেকে যে সব অবৈধ কাগজ পত্র বিহীন চোরাই কাঠ চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচার হয় তার উপর পাচারকারীরা বন বিভাগসহ স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনী এবং ক্ষমতাসিন দলের নেতা কমর্ীদের চাঁদার প্রদান করে ৷
এই চাঁদা সংগ্রহের জন্য ক্ষমতাসিন দলের মুল দায়িত্বে রয়েছেন মানিকছড়ি একতা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক রিটন বড়ুয়া ৷
রিটন বড়ুয়া’র মাধ্যমে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সকল অনুষ্ঠানের খরচ ও নেতা/কর্মীদের প্রয়োজনে জেলা কমিটি’র নেতাদের পরামর্শে চাঁদার অংশের টাকা ব্যয় হয় ৷
সব ঠিকঠাক ছিল এর ভিতর গত ১৫ মার্চ মঙ্গলবার জেলা ছাত্রলীগ নেতার ছোট ভাই শাহ জামান রিপন মানিকছড়ি গিয়ে রিটন বড়ুয়া’র কাছ থেকে অবৈধ কাঠ পাচারকারীদের দেয়া টাকার অংশ থেকে সে (শাহ জামান রিপন) চাঁদা দাবি করে৷ রিটন বড়ুয়া জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে মোবাইল ফোনে শাহ জামান রিপনের টাকা চাওয়ার বিষয়টি জানালে, জেলা নেতারা রিটন বড়ুয়াকে পরামর্শ দেয় যে শাহ জামান রিপনকে ভালভাবে আটক করে চাঁদাবাজ হিসাবে পুলিশের হাতে তুলে দিতে ৷ শাহ জামান রিপনের দাবি মোতাবেক চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে প্রকাশ্যে রিটন বড়ুয়া’র প্রান নাশের হুমকি দেয় শাহ জামান রিপন ৷
এক পর্যায়ে এতে আশ পাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উত্তম মধ্যম দিয়ে একতা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে আটকে রাখের শাহ জামান রিপনকে ৷ শাহ জামান রিপন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির ভাই হওয়ার সুবাদে পুলিশ ও আওয়ামীলীগের জেলা নেতৃবৃন্দ মানিকছড়ি গিয়ে বিষয়টি মোখিক মুচলেকার মাধ্যমে মীমাংসা করে দেন এবং শাহ জামান রিপনকে রাঙামাটি পাঠিয়ে দেন ৷ সে সময় কোন মামলা দায়ের বা পুলিশের কাছে সাধারন ডায়রী কিছুই করা হয়নি ৷
তার ২দিন পর ১৮ মার্চ রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ নেতা ফিরোজা বেগম চিনু এমপি,জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য মুছা মাতাব্বর, রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী এবং জেলা কমিটির সিনিয়র নেতারা পৌরসভায় বসে রিটন বড়ুয়া ও শাহ জামান রিপন উভয়কে সার্বিক পরিস্থিতি বুঝিয়ে দু’জনের মধ্যে মীমাংসা করে দেন ৷ কিন্তু শাহ জামান রিপন তাকে মানিকছড়িতে আটক করে মারধর করার বিষয়টি ভুলতে না পারায় এবং জেলা কমিটির সিনিয়র নেতাদের মধ্যস্থতাকে অবজ্ঞা করে শাহ জামান রিপন তার কয়েকজন অনুসারীকে সাথে নিয়ে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের সাথে দেখা করে৷ শাহ জামান রিপনকে মানিকছড়িতে একতা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে আটকে রাখা তারপর পুলিশ ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দর সহযোগিতায় মানিকছড়ি থেকে মোখিক মুচলেকার মাধ্যমে মুক্ত করার বিষয়টি অবহিত করে রিটন বড়ুয়া’র বিরুদ্ধে নালিশ করে বলে জেলা আওয়ামীলীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা স্বীকার করেন ৷
এবিষয়ে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ নাকরার শর্তে আসল ঘটনার কারণ অকপটে স্বীকার করেন । তিনি বলেন, রিটন আগে এসব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিল, কিন্তু গত কয়েকমাস আগে জেলা আওয়ামীলীগ নেতারা অনেকটা জোর করে তাকে এ দায়িত্বটা দেন ৷ এছাড়া রিটন বড়ুয়া আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাপছড়ি ইউনিয়ন থেকে ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করাকে অনেকে মেনে নিতে না পারায় তার উপরে এমন সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে বলে আমি ধারনা করছি ৷
এবিষয়ে রিটন বড়ুয়া’র কাছে ঘটনার মুল কারণ জানতে চাইলে তিনি তার শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেন এবং এধরনের সন্ত্রাসী হামলার কারণে তিনি মানসিক ভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছেন বলে জানান।
এসব কিছুর পর শাহ জামান রিপন অতি লোভের কারণে জেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের কথা অমান্য করে কয়েকজন সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে গত ২৭ মার্চ রিটন বড়ুয়াকে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে আক্রমন করে ৷
অদৃশ্য কারণে মুল হোতা ও রিটন বড়ুয়া’র উপর হামলাকারী ও মামলার প্রধান আসামী সন্ত্রাসী শাহ জামান রিপনকে ১৪ দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ ৷