মঙ্গলবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ
ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ
গাজী গিয়াস উদ্দিন, ঝালকাঠি :: ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস অনুষ্ঠানের খরচ দেখিয়ে ৬৫ হাজার টাকা বিল করেন তত্ত্বাবধায়ক। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন জানান, শোক দিবস অনুষ্ঠানে আমরা ৪টি সংগঠন ( সিভিল সার্জন, সদর হাসপাতাল, বিএমএ, সাচিব) মিলে শোক দিবস উদযাপন করেছি, সেখানে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমাদের সাথে ৫ হাজার টাকা দিয়ে অংশ গ্রহন করেছেন। এছাড়াও কর্মচারীদের হয়রানী, বিনা কারণে শোকজ, তদন্ত কমিটি গঠন, উৎকোচ দাবি, ভূয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নিতীর অভিযোগ রয়েছে।
আলোচিত ও সমালোচিত এই তত্ত্ববধায়ককে চলতি বছরের ৭ মার্চ রংপুর সিভিল সার্জন পদ থেকে বদলী করে ঝালকাঠিতে পাঠানো হয়। চলতি বছরের ১১ মার্চ তিনি ঝালকাঠিতে যোগদান করেন। রংপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের কোভিট-১৯ এর বরাদ্দ ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় তিনি সমালোচিত হন। এ বিষয়ে রংপুর স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান অপু ও মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী ইলিয়াস হোসেন জানান, রংপুর জেলায় একদিনে ১ কোটি করোনার টিকা প্রদানের পারিশ্রমিক অনুদান বরাদ্দ ছিল ২৫ লাখ টাকা। তখন রংপুরের সিভিল সার্জন পদে কর্মরত ছিলেন ডা. শামিম আহমেদ। ব্যাংক থেকে এ বরাদ্দ তুলে আমাদের না দিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় তাকে শাস্তিমুলক বদলী করা হয় ঝালকাঠিতে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাযায়, রংপুর থেকে ঝালকাঠি আসতে বদলী ভ্রমন বিল বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা টাকা খরচ দেখান তত্ত্ববধায়ক। যা অবিশ্বাস্য ঘটনা। তিনি ডক্টরস কোয়াটারে একটি ফ্লাট নিয়ে থাকলেও মাত্র ১০% ভাড়া কাটেন। নির্ধারিত পূর্ণ ভাড়া না কেটে সরকারকে মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের এসি এনে তার সরকারি কোয়াটারের বাসায় ব্যবহার করছেন। হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্সের বকেয়া জ্বালানী বাবদ ১৬ লাখ টাকায় চালক মো. মহসীনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। গাড়ি চালকের কাছে উৎকোচ দাবি করে না পেয়ে তত্ত্ববধায়ক তদন্ত কমিটি করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পেট্রোল পাম্পের ৭ মাসের এই বরাদ্দ পেয়ে তা পরিশোধ না করায় রোগীরা ফ্রী এ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় আবার দ্বিতীয় দফায় তদন্ত কমিটি করেন তত্ত্ববধায়ক। চালক মহসীন জানান, তত্ত্ববধায়কের দাবি করা ১ লাখ টাকা উৎকোচ না দেয়ায় তদন্তের নামে হয়রানী করছে। তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার আগেই আমাকে শোকজ করে জবাব চান। তার বিরুদ্ধে ভূয়া গর্ভবতী বহনের ঠিকানা দেখিয়ে নিজ ভ্রমনে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রতি মাসে ২৫/৩০ টি ভুয়া গর্ভবর্তী রোগী বহন দেখিয়ে এ্যাম্বুলেন্স জ্বালানীর সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করছেন। এ ছাড়াও হাসপাতালের জেনারেটর মেরামতের চিঠি ইস্যু করে তিনিই আবার জেনারেটরের তেল ক্রয়ের ভূয়া ভাউচার দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাত করেন। ডাক্তারদের আবাসিক ভবনে চুক্তি ভিত্তিক গাড়ি চালক মো. শাহাদাৎকে রেখে তার মাধ্যমে অপকর্ম করিয়ে ফায়দা নিচ্ছেন তত্ত্ববধায়ক। এসব বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. শামিম আহমেদ বলেন, বাসার এসি গনপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সকল বিল ভাউচার সঠিক ভাবে অনুমোদন করা হয়। আমার বাস ভবনে ২৫% ভাড়া কর্তন করছি। বদলী ভ্রমন বিল সরকারি নিয়মেই নিয়েছি। কর্মচারীদের অহেতুক শোকজ সঠিক নয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগের কোন সত্যতা নেই বলে তিনি জানান।
অপরদিকে তথ্যানুসন্ধানে আরো জানাগেছে, সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদ প্রায়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। তিনি চলতি বছরের ১১ মার্চ যোগদান করে এ পর্যন্ত ৮০ দিন অবৈধ ছুটি ভোগ করেন। তার ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সরকারি ঔষধ সরবরাহ খাতের প্রায় ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ফেরত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যথা সময়ে এ টাকার ঔষধ ক্রয়ে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারি সরবরাহের ঔষধ সংকটের কারণে বঞ্চিত রোগীরা। তার অধিকাংশ উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্তের কারণে হাসপাতালের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি দ্বিমত পোষণ করলেও তিনি একক সিদ্ধান্তে ফায়দা হাসিল করেন বলে অভিযোগ। একই ভাবে ২০০২৩-২৪ অর্থ বছরে হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট থাকা সত্বেও বিশাল অংকের কীট ক্রয় করেন। ক্রয় কমিটির চাহিদা না নিয়ে আনা এ অতিরিক্ত কীটের বিনিময়ে স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় রাজাপুর ও নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন তিনি। একই অর্থ বছরে হাসপাতালের প্রায় ৫০ টি জানালার রঙ্গিন গ্লাস কাগজে কলমে দেখিয়ে, লাগানো হয়েছে ২০টি। গণপূর্তের যোগসাযশে এ ভাবে তিনি তদারকি কমিটির সুপারিশ ছাড়াই সম্পূর্ন দেখিয়ে নিজেই প্রত্যয়নপত্র দিয়ে ফায়দা নিচ্ছেন বলে তথ্য রয়েছে। বিশাল স্বার্থের বিনিময়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের এমএসআর টেন্ডার কাজ চাপা দিতে ঝালকাঠির স্থানীয় কোন দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেননি।
হাসপাতালে রোগীর খাবার সরবরাহের ঠিকাদার মো. সরওয়ার হোসেন স্বপন জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১২৫ টাকার স্থলে ১৭৫ টাকা বরাদ্দের নির্দেশনা দেয় ১ বছর আগে। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে তত্ত্ববধায়ক তা না দেয়ায় আমি উচ্চ আদালতে রীট করেছি। অথচ অন্য সকল উপজেলা হাসপাতালে ১৭৫ টাকায় খাবার সরবরাহ হচ্ছে। হাসপাতালের ভিতর ও বাহিরে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজ দেখিয়ে ভূয়া বিল ভাউচারে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিল ভাউচারে তত্ত্ববধায়ক নিজেই পরিশোধকারী নিজে মঞ্জুরকারী এবং নিজেই গ্রহণকারী দেখিয়ে এ্যাম্বুলেন্স রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচ্ছন্নতাসহ লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন ভূয়া বিল উত্তোলন করেন। হাসপাতালের ভূয়া সংস্কার কাজ দেখিয়েও অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিদ্যুৎ না গেলেও জেনারেটর চালু দেখিয়ে জ্বালানির ভূয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাত করেন। এ সংক্রান্ত দাপ্তরিক বিল ভাউচার তদন্ত হলেই বেড়িয়ে আসবে থলের বিড়াল।
এসব বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. শামিম আহমেদ বলেন, বাসার এসি গনপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সকল বিল ভাউচার সঠিক ভাবে অনুমোদন করা হয়। আমার বাস ভবনে ২৫% ভাড়া কর্তন করছি। বদলী ভ্রমন বিল সরকারি নিয়মেই নিয়েছি। কর্মচারীদের অহেতুক শোকজ সঠিক নয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগের কোন সত্যতা নেই বলে তিনি জানান।