বুধবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের সড়ক অবরোধ পালিত
খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের সড়ক অবরোধ পালিত
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ-মূল এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, পিসিপি’র সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমাসহ ইউপিডিএফ ও পিসিপি-যুব ফোরামের চার নেতার খুনের সাথে জড়িত সেনা মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার-শাস্তি ও ঠাঙাড়ে বাহিনী (নব্যমুখোশ) ভেঙ্গে দেয়ার দাবিতে ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো।
সকাল ৬টা থেকে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা খাগড়াছড়ির সকল উপজেলার বিভিন্ন সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এ সময় তারা ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। অবরোধ চলাকালে বড় কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
অবরোধ কর্মসূচির প্রতি জনগণের সমর্থন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। যানবাহনের মালিকরা রাস্তায় গাড়ি নামানো থেকে বিরত ছিলেন। ফলে খাগড়াছড়ি শহর থেকে দূরপাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। শহরের অভ্যন্তরে নগণ্য সংখ্যক টমটম ও অটোরিক্সা চলাচল করলেও সদর উপজেলার অন্যান্য সড়কগুলোতে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এছাড়া দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায়ও দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করেনি।
ইউপিডিএফের মুখপাত্র ও খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কনিকা দেওয়ান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা যুক্ত বিবৃতিতে অবরোধ কর্মসূচি সফল করায় জেলার বাস, ট্রাকসহ সকল যানবাহন মালিক, চালক, শ্রমিক ও সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ ঘটনার এক সপ্তাহ পরও চার নেতার খুনীদের গ্রেফতার না করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একটি বিশেষ গোষ্ঠী হত্যাকারীদেরকে রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে অভিযোগ করে তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কারা খুন, সন্ত্রাস, অরাজকতা ও অশান্তি সৃষ্টি করছে তা চার নেতার খুনের ঘটনায় আরও একবার দেশবাসীর কাছে পরিস্কার হয়েছে।
মিথ্যা, মামলা, জেল—জুলুম ও নির্যাতন চালিয়ে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে পরিচালিত গণতান্ত্রিক আন্দোলন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে ওই গোষ্ঠীটি বেছে বেছে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনপন্থী নেতাকমীর্দের খুন করতে ঠ্যাঙাড়ে জল্লাদ বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
তারা বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিশেষ গোষ্ঠীটি ঠ্যাঙাড়ে দিয়ে মিঠুন চাকমা ও তপন-এল্টন চাকমাসহ ইউপিডিএফের ৫৫ জন নেতাকমীর্ ও সমর্থককে হত্যা করেছে। সরকারকে এই হত্যার মহোৎসব অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
খুন, সন্ত্রাস করে ইউপিডিএফকে আন্দোলন থেকে বিচ্যুত করা যাবে না বলে নেতৃবৃন্দ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস রুখতে ছাত্র-যুব-নারীসহ সর্বস্তরের জনগণকে সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
তারা বলেন, ৯০ দশকে জনতা যেভাবে মুখোশ বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করে ভেঙ্গে দিয়েছিল, বর্তমানে খুনি নব্যমুখোশদেরও জনতা রুখে দেবে।
পাঁচ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে চার নেতার খুনিদের গ্রেফতার করে জনসমক্ষে বিচার ও সাজা নিশ্চিত করা, ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ বাহিনী ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় জনগণ খুনি—সন্ত্রাসীদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যা যা করণীয় তাই করবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। একই সাথে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার ও দমনমূলক ‘১১ নির্দেশনা’ বাতিলপূর্বক সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করারও দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি বিশেষ রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীর সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর দল পানছড়ির লোগাঙ এলাকার অনিল পাড়ায় একটি বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পিসিপির সাবেক সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, ইউপিডিএফ সংগঠক রুহিন বিকাশ ত্রিপুরা (রহিনসা) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহসভাপতি লিটন চাকমাকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে জল্লাদ বাহিনী ভেঙ্গে দেয়ার দাবিতে গত ১২ ডিসেম্বর ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনগুলো সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ইতোমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে নিন্দা, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
পানছড়িতে দিনব্যাপী হরতাল স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালিত
বিপুল চাকমাসহ চার ইউপিডিএফ নেতার খুনের সাথে জড়িত সেনা মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার-শাস্তি ও ঠাঙাড়ে বাহিনী (নব্যমুখোশ) ভেঙ্গে দেয়ার দাবিতে ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় দিনব্যাপী (সকাল-সন্ধ্যা) হরতাল স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালিত হয়েছে। ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর ডাকে এই হরতাল কর্মসূচি পালন করা হয়।
হরতাল বানচাল করতে গতকাল ও আজ সকাল থেকে সেনা-মুখোশরা নানা তৎপরতা চালায়। তা সত্ত্বেও সকাল থেকে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা পানছড়ির বিভিন্ন সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে হরতাল কর্মসূচি সফল করেন। এ সময় তারা ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার-শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
হরতালের কারণে উপজেলায় যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে কর্মরত লোকজন অফিসে যাওয়া থেকে বিরত ছিলেন। একই সাথে মাসব্যাপী পানছড়ি বাজার বয়কট কর্মসূচির কারণে আজ সাপ্তাহিক হাটবারেও পানছড়ি বাজারে লোক সমাগম হয়নি।
ইউপিডিএফ পানছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠক অপু ত্রিপুরা দিনব্যাপী হরতাল সফল করায় এলাকার বাস, সিএনজি, টমটমসহ সকল যানবাহন মালিক, চালক, শ্রমিকসহ এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি চার খুনের ঘটনা খুবই ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় উল্লেখ করে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার-শাস্তি ও বিচারের দাবিতে পানছড়ি বাজার বয়কটসহ চলমান সকল কর্মসূচি সফল করতে এগিয়ে আসার জন্যও সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
অপরদিকে, ইউপিডিএফের মুখপাত্র ও খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা পৃথক এক বিবৃতিতে আগামীকাল ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার উক্ত দাবিতে পূর্বঘোষিত খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য জেলাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি অবরোধ চলাকালে রোগী বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স, জরুরী বিদ্যুত ও ঔষধ সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি, সংবাদপত্র ও সাংবাদিক বহনকারী গাড়ি অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানান।
উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর রাতে সেনাবাহিনীর সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা পানছড়ির লোগাঙ এলাকার অনিল পাড়ায় একটি বাড়িতে সশস্ত্র হামলা করে পিসিপির সাবেক সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, ইউপিডিএফ সংগঠক রুহিন বিকাশ ত্রিপুরা (রহিনসা) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহসভাপতি লিটন চাকমাকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও খুনি ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙ্গে দেয়ার দাবিতে গত ১২ ডিসেম্বর ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনগুলো এসব কর্মসূচি ঘোষণা করে। ইতোমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে নিন্দা, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলছে।