মঙ্গলবার ● ২ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » জাতীয় » ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাসের কারাদণ্ড
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাসের কারাদণ্ড
অনলাইন ডেক্স :: বাংলাদেশে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা একটি মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার ঢাকার তিন নম্বর শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালত বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এই সময় অধ্যাপক ইউনূসসহ অন্য অভিযুক্তরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বহুল আলোচিত এই মামলায় পর্যবেক্ষণে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলার আরেকটি ধারায় তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের প্রত্যেককে মোট ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।
তবে কারাদণ্ড হলেও এখনি কারাগারে যেতে হবে না ড. ইউনূসকে।
আদালতে তাদের আইনজীবীরা ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার শর্তে জামিন চাইলে পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন। অর্থাৎ আগামী একমাসের মধ্যে তাদের শ্রম আপিলেট ট্রাইবুনালে আপিল করতে হবে।
রায়ের পরে আদালতের বাইরে এক প্রতিক্রিয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ”যে দোষ আমরা করি নাই, সেই দোষের ওপরে শাস্তি পেলাম। এটা আমাদের কপালে ছিল, জাতির কপালে ছিল, আমরা সেটা বহন করলাম।”
ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ”আমরা এই ব্যাপারে ক্ষুব্ধ। লেবার কোর্টের ইতিহাসে এতো তাড়াতাড়ি ড. ইউনূসের মামলার শুনানির জন্য ১০টি ডেট দেয়া হয়েছে। নিজেরা তড়িঘড়ি, ইতিহাস ব্রেক করে, সাড়ে আটটা পর্যন্ত ইতিহাস ব্রেক করে, শুনানি করে আজকের এই রায় ঘোষণা করা হয়েছে।”
”আমরা বিক্ষুব্ধ, এই রায় অন্যায় এবং আইন বিরোধী। আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। রাষ্ট্রপক্ষ কোন কিছু প্রমাণ করতে পারেনি। আপিল কোর্টে আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিকার চাইবো।” বলেন মি. মামুন।
এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে কলকারখানা অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ”আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি। আমরা মনে করি, প্রতিষ্ঠান মালিকরা এখন সতর্ক হবে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। আইন লঙ্ঘন হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের নয়ই সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
এ মামলার অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ না দেয়া এবং ১০১ জন শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী না করা।
এছাড়া গণছুটি না দেয়া, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল এবং অংশগ্রহণ তহবিল গঠন না করাও অন্যতম অভিযোগ এই মামলার।
কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এ মামলায় অধ্যাপক ইউনূসসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য অভিযুক্ত হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম এবং মোঃ শাহজাহান।
এ বছরের জুন মাসে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। এরপর পক্ষে বিপক্ষে শুনানির পর ২৪শে ডিসেম্বর রায়ের জন্য পহেলা জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করে আদালত।
মামলার শুনানিতে যা হয়েছে
এ মামলায় চারজন আসামির পক্ষে আদালতে লিখিত বক্তব্য দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসা পরিচালনা করে, সেসব চুক্তিভিত্তিক। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তা নবায়নের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়।
যেহেতু এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হয় তাই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।
বক্তব্যে আরো বলা হয়, মিথ্যা অভিযোগে অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান মামলাটি করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস এ মামলায় সাফাই সাক্ষ্য দেন নি।
তার আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, “মামলা প্রমাণ করার দায়িত্ব কলকারখানা অধিদপ্তরের। তাই (অধ্যাপক ইউনূসের) সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার প্রয়োজন নেই।”
মামলাটি হওয়ার পর আত্মসমর্পণ করে জামিন চান অধ্যাপক ইউনূস। মোট ৩৬ দিন জামিনে ছিলেন তিনি।
পরে মামলার অভিযোগ আমলে নেয়ার পর তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সব মিলে নয় দিন শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুই ধারায় শাস্তির আবেদন জানিয়েছে কলকারখানা অধিদপ্তর। সবশেষ গত সপ্তাহে অর্থাৎ ২৪শে ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত শুনানি হয়।
এরপর রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
এই মামলার একটি ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাস এবং জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা।
অপর একটি ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।