বুধবার ● ৩ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » সিলেট-২ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
সিলেট-২ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসনে জমতে শুরু করেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রার্থীরাও ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। মন জয়ের নানা চেষ্টা করছেন তাদের।
আসনটিতে কাগজে-কলমে প্রার্থী ৬ জন হলেও ভোটারদের আলোচনায় রয়েছেন মাত্র ৩ জন।
তারা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনিত প্রার্থী, সাবেক সংসদ সদস্য ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া (লাঙ্গল) এবং গণফোরাম মনোনিত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য)।
এ আসনের তৃণমূল বিএনপি মনোনিত প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুর রব (সোনালী আঁশ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি মনোনিত প্রার্থী মো. মনোয়ার হোসেন (আম) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনিত প্রার্থী মো. জহির (ডাব) কারো কোনো আলোচনাতেই নেই।
যার ফলে ভোটের মাঠে নৌকা, লাঙ্গল ও উদীয়মান সূর্য প্রতিকের মধ্যে ত্রিমুখি লড়াইয়ের আভাস পাচ্ছেন ভোটাররা। অনেক ভোটারের সাথে আলাপ করেই এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত ও জাতীয়পার্টি মনোনিত প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী নির্বাচনী মাঠে থাকাসত্তেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ২৩ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত ও গণফোরাম মনোনিত প্রার্থী মোকাব্বির খান।
ওই নির্বাচনে জামানত হারান দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত ও জাতীয় পার্টি মনোনিত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মত নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া। এ ছাড়া, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনিত হেভিওয়েট প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের কারণে সিলেট-২ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ফলে, টানা একদশক চরম হতাশায় ছিল ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে, এবার আসনটি ভাগাভাগির কবলে না পড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী থাকায় তাদের মধ্যে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। সাধারণ সমর্থকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে উচ্ছাস।
যেকোনো মূল্যে আসনটি পূণরুদ্ধার করতে দলীয় প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও নেতাকর্মীরা দিন-রাত অবিরাম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে, টানা দুই নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে মহাজোট থেকে জাতীয়পার্টির প্রার্থী দেওয়া হলেও এবার তার ব্যতিক্রম হওয়ায় কিছুটা হতাশ দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবুও তারা আছেন প্রচার-প্রচারণায়।
তাদের প্রত্যাশা, শেষ পর্যন্ত পুরো উদ্যমে মাঠে ঝাপিয়ে পড়বেন সকলেই। ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীকে নির্বাচিত করে উদ্ধার করবেন হারানো দূর্গ। তবে, বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে গণফোরামের উল্লেখ করার মত কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং নেতাকর্মী না থাকায় পাঁচ বছরে নিজের করা উন্নয়ন কর্মকান্ডকে অবলম্বন করেই মাঠে-ঘাটে প্রচারণা চালাচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের মোকাব্বির খান।
সবমিলিয়ে বর্তমান ও সাবেক তিন সংসদ সদস্যের প্রচার-প্রচারণায় ধীরে ধীরে সরগরম হয়ে উঠা সিলেট-২ আসনের ভোটাররা মুখিয়ে আছেন শেষ পর্যন্ত কে হন তাদের কান্ডারি-সেটা দেখার জন্য।
সিলেট-২ আসনের কাঙ্খিত উন্নয়নের জন্য নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করুণ -আনোয়ারুজ্জামান
বিশ্বনাথ :: সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নৌকা স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক। তাই আগামী ৭ই জানুয়ারী সিলেট-২ আসনের কাঙ্খিত উন্নয়নের জন্য নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরীকে নির্বাচিত করুণ।
ওই এলাকার কাঙ্খিত উন্নয়নের জন্য ‘শফিক চৌধুরী’র কোন বিকল্প নেই। আপনাদের ভোটে শফিক চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলার সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে ‘মন্ত্রী’ করবেন, এটা আমার বিশ্বাস। আর এতে করে আমি ও শফিক ভাই মিলে যৌথভাবে সিলেট-২ আসনের সর্বস্তরের জনসাধারণকে কাঙ্খিত উন্নয়ন উপহার দেব।
সিটি নির্বাচনে শফিক ভাই দিনরাত পরিশ্রম করে নৌকায় ভিক্ষা ভোট চেয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ আটকাতে পারে না, তাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদেরকে আজ থেকেই মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে মা-বোন’সহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে নৌকায় ভোট ভিক্ষা চাইতে হবে।
তিনি বুধবার (৩ জানুয়ারী) বিকেলে সিলেটের বিশ্বনাথে পৌর শহরের নতুন বাজার সিএনজি স্ট্যান্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োাজিত স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক ‘নৌকা’র শেষ নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথাগুলো বলেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনের নৌকার মাঝি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ৭ই জানুয়ারীর নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের কাঙ্খিত উন্নয়নের জন্য আপনারা ভোট দিয়ে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করুণ। আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে আপনাদেরকে কাঙ্খিত উন্নয়ন উপহার দেব।
কথা দিচ্ছে চলার পথে আমার কারণে এলাকাবাসীর কাউকে, কারও কাছে ছোট হতে হবে না। নৌকার বিজয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে অব্যাহত থাকবে উন্নয়ন প্রক্রিয়া। আর জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এলাকাবাসীর উন্নয়নে কাজ করে যাব।
বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান আসাদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক আমির আলী ও মকদ্দছ আলীর যৌথ পরিচালনায় স্বাধীনতা ওউন্নয়নের প্রতীক ‘নৌকা’র শেষ নির্বাচনী জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদ, অ্যাডভোকেট শাহ মোশাহিদ আলী, নাজনীন হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য এএইচএম ফিরোজ আলী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হরমুজ আলী, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, জনসংযোগ সম্পাদক রবিন পাল, কার্যনির্বাহী সদস্য কাউন্সিলর সাদিক চৌধুরী ফলিক, আফছর খান সাদিক, শামসাদুর রহমান রাহিন, বার্মিহাম আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য ডা. নাজরা চৌধুরী, বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আহমদ মতছিন, যুক্তরাজ্য যুবলীগের সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী মজনু, সদস্য মিজানুর রহমান, এনআরবি ব্যাংকের ডাইরেক্টর মনির মিয়া, প্রবাসী মাহবুব মিয়া, রাজু খান, হাজী মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নেহারুন নেছা।
সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন ছাত্রলীগ নেতা শেখ মিলাদ আহমদ শাহীন ও গীতাপাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য জয়ন্ত আচার্য্য এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরশ আলী গণি। এসময় অনুষ্ঠানগুলোতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।