বৃহস্পতিবার ● ১৮ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » বিপুল, সুনীল, লিটন ও রুহিনকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
বিপুল, সুনীল, লিটন ও রুহিনকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, খাগড়াছড়ির পানছড়িতে গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ রাষ্ট্রীয় বিশেষ গোষ্ঠির মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসী কর্তৃক বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা রুহিন ত্রিপুরার হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষিত ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবিতে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির পাঁচ স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ১৮ জানুয়ারি ইউপিডিএফ-মূল ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে খাগড়াছড়ির পানছড়ি, দীঘিনালা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এবং রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের মাচলঙ ও লংগদুতে এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
পানছড়ি:
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ), পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও পানছড়ি গণ অধিকার রক্ষা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
“যারা খুনিদের রক্ষা করে, আশ্রয় দেয় তারা রাষ্ট্র ও সমাজের শত্রু” শ্লোগানে আজ সকাল ১১টায় পুজগাঙের মুনিপুর এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। শত শত জনতার অংশগ্রহণে মিছিলটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে লোগাঙ বাজারের পাশে লোগাঙ ইউপি কার্যালয়ের সামনে এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
এ সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন এবং প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা, পানছড়ি গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য মানেক পুদি চাকমা ও পিসিপির পানছড়ি উপজেলা সভাপতি সুনীল ময় চাকমা।
যুব নেতা বরুন চাকমা বলেন, আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভালো নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জুম্মোদের ধ্বংস করে দেয়ার জন্য শাসকগোষ্ঠি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১১ ডিসেম্বর বিপুলসহ চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের দায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার ও সেনাবাহিনী এড়িয়ে যেতে পারবে না।
তিনি সেনাসৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে (নব্যমুখোশ) বাহিনী ভেঙে দেয়া এবং পাহাড় থেকে সেনাশাসন ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘অপারেশন উত্তরণ’ এর নামে সেনাশাসন চলছে। এর মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণের ওপর নির্যাতন, খুন, গুম, অপহরণসহ রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ অনিল পাড়ায় বিপুল, সুনীল, লিটন রুহিনকে হত্যার ঘটনাও তারই অংশ।
পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদ ও সহযোগিতা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি চার নেতা হত্যাকাণ্ডের এক মাসেও খুনিদের গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, বর্তমানে সেনাবাহিনী-প্রশাসন খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ জনগণের ওপর ভয়ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা হুমকি প্রদান করা হচ্ছে।
এন্টি চাকমা অবিলম্বে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশদের মদদদান বন্ধ করার দাবি জানান।
নারী নেত্রী পরিণীতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা সব সময় নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। আজকের মত এভাবে আমাদেরকে বিভিন্ন নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশে এসে প্রতিবাদ করতে হবে। যদি আমরা প্রতিবাদ করতে না পারি তাহলে সরকার শাসকগোষ্ঠি আমাদের ওপর আরো বেশি নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাবে।
পানছড়ি গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য মানেক পুদি চাকমা বলেন, আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই, শান্তিতে বসবাস করতে চাই। গত ১১ ডিসেম্বর যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সেটা খুবই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। আমরা আর এ ধরনের ঘটনা দেখতে চাই না।
তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দিয়ে অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারে-প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে, আজ খুব সকাল থেকে সেনাবাহিনী ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর সন্ত্রাসীরা অপতৎপরতা শুরু করে। পানছড়ি সাব-জোনে যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে বাধা প্রদান করা হয়। এ সময় সাব-জোনের আশে-পাশে অত্যাধুরিক অস্ত্রসহ ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নেয়।
সকালে এলাকার লোকজন বিপুল, সুনীলসহ চার নেতা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের জন্য যেতে চাইলে সেনাবাহিনীর বাধার কারণে কলেজ গেইট এলাকা থেকে তারা ফিরে আসতে বাধ্য হয়। পরে সেনারা রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
এরপর ৩ শতাধিক নারী বড়হনা এলাকায় গিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে এক সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। তারা বড়হনা ব্রিজ থেকে মিছিল নিয়ে আমতলায় গিয়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হন।
এতে ইউপিডিএফ সদস্য রাসেল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক নিরব ত্রিপুরা ও শংকর চাকমা।
দীঘিনালা:
দীঘিনালায় বাবুছড়া কলেজ সংলগ্ন রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টায় দীঘিনালা উপজেলার বাঘাইছড়ি বৌদ্ধ বিহার এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বাঘাইছড়ি ব্রীজ পার হয়ে বাবুছড়া কলেজ সংলগ্ন রাস্তায় চৌমুহনীতে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিটের সংগঠক লালন চাকমার সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জ্ঞান প্রসাদ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক সমর চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দীঘিনালা উপজেলা শাখঅর সদস্য রিতা চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে যুব নেতা জ্ঞান প্রসাদ চাকমা বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ পানছড়িতে বিপুল, সুনীল, লিটন ও রুহিনকে হত্যার ঘটনায় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। পরিকল্পিতভাবে ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। যার করণে ঘটনার এক মাস পার হলেও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, সরকার পার্বত্য অঞ্চলে জুম্ম দিয়ে জুম্ম হত্যার ষড়যন্ত্র জারি রেখে ফায়দা লুটতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। একদিকে সশস্ত্র ঠ্যাঙাড়েদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে, অপরদিকে ইউপিডিএফকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনেও বাধা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি অবিলম্বে পানছড়িতে ৪ ছাত্র ও যুব নেতার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবি জানান।
পিসিপি নেতা সমর চাকমা বলেন, এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও পানছড়ির হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যারা খুনি তাদেরকে এখন সেনাবাহিনী-প্রশাসন আশ্রয় দিয়ে রেখেছে এবং তাদেরকে দিয়ে জনগণের ওপর হুমকি-ধমকি প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি এই ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জিইয়ে রাখার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
সমর চাকমা ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস ও শাসকগোষ্ঠির দমন-পীড়নের বিরদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মাটিরাঙ্গা:
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মাটিরাঙ্গা-গুইমারা উপজেলা শাখা সমূহের উদ্যোগে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে পিসিপির মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি অনিমেষ চাকমার সভাপতিত্বে ও গুইমারা শাখার পিসিপির সাধারণ সম্পাদক মনজয় ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর গুইমারা ইউনিটের সংগঠক তানিমং মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মাটিরাঙ্গা শাখার সাধারণ সম্পাদক রনি ত্রিপুরা এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মাটিরাঙ্গা উপজেলার ছাত্র নেতা তৈমাং ত্রিপুরা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিপুলসহ চার নেতা হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে। দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু সরকার-প্রশাসন ঘটনার এক মাস পরও খুনিদের গ্রেফতার করেনি।
তারা পানছড়িতে চার নেতা হত্যার দায় সরকারের মন্তব্য করে বলেন, সরকারই সেনাবাহিনীকে দিয়ে এই ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর খুনি-সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করে খুন-খারাবিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
এই সমাবেশ থেকে আমরা সরকারের এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি করছি।
সমাবেশ থেকে বক্তারা আর কালক্ষেপণ না করে অতি শীঘ্রই বিপুলদের খুনিদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়া ও সন্ত্রাসীদের সেনা-প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদান বগন্ধ করার জোর দাবি জানান।
মাচলঙ (সাজেক, রাঙামাটি):
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের মাচলঙে পাঁচ সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অবিলম্বে বিপুল, সুনীল, লিটন ও রুহিনের হত্যাকারী ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিপুল-সুনীলদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবিতে ইউপিডএফ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ যৌথভাবে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।
বিপুলসহ চার ছাত্র-যুব নেতার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবিতে দুপুর ১২টায় মাচলঙ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে মাচলঙ বাজার ও পর্যটনের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে পূনরায় মাচলঙ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সামাবেশে ইউপিডিএফ-মূল এর সংগঠক সুমন চাকমার সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখা সভাপতি নিউটন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জলা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখা অর্থ সম্পাদক অনুপম চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুপায়ন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন সাজেক থানা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুমা চাকমা।
বক্তারা বলেন, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সেনাসৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ বাহিনী কর্তৃক বিপুল, সুনীল, লিটন ও রুহিন-এর হত্যাকাণ্ডকে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় সংঘটিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
তারা ঘটনার এক মাস পরও খুনিদের গ্রেফতার না না করে তাদেরকে সেনা-প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রেখে জনপ্রতিনিধিদের হুমকি প্রদানের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বক্তারা ২০১৮ সালে মিঠূন চাকমাকে হত্যা, স্বনির্ভর বাজারে ৭ খুনের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, এসব ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচার না হওয়ায় তারা উৎসাহিত হয়ে পূনরায় পানছড়ি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কাজেই এসব ঘটনার দায় সরকার-প্রশাসন কোনভাবেই দায় এড়াতে পারে না।
বক্তরা সরকার-সেনাবাহিনী ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের দিয়ে রক্তের হোলিখেলা খেলছে উল্লেখ করে বলেন, অবিলম্বে এই খুনি-সন্ত্রাসী বাহিনী ভেঙে দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় জনরোষ সৃষ্টি হলে তখন সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।
তারা এটাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, ঠ্যাঙাড়ে লেলিয়ে দিয়ে খুন, গুম, অপহরণ করে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে চলমান ন্যায্য গণআন্দোলন দমন করা যাবে না।
লংগদু:
রাঙামাটির লংগদুতেও একই দাবিতে ইউপিডিএফের স্থানীয় ইউনিটের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ২:৪৫টার সময় অনুষ্ঠিতসমাবেশে পিপুল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য ইউপিডিএফের লংগদু উপজেলা ইউনিটের সমন্বয়ক চন্দন চাকমা, সংগঠক নিবিড় চাকমা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি-মুরুব্বীবৃন্দ।
বক্তারা সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, দেশের জনগণের এখন জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। তার অধিক পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত জুম্ম জনগণের উপর চলছে অসহনীয় নির্যাতন। ভুমি বেদখল, নারী ধর্ষণের মতো ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয় ও সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে খুন করা হয়।
এলাকার এক মুরুব্বী বলেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি তাহলে আমাদের জাতির অস্তিত্ব আরো সংকটে পড়বে।
তিনি ‘ইউপিডিএফ যেহেতু জনগণের জন্য আন্দোলন করছে তাই সকলের ইউপিডিএফের সাথে সামিল হওয়া দরকার’ বলে মত প্রকাশ করেন।
সমাবেশের সভাপতি চন্দন চাকমা অবিলম্বে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দিয়ে খুনি-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে বিচার ও ঠ্যাঙাড়েদের আশ্রয়দাতা সেনা কর্মকর্তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে, ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা মুঠোফোনে মুরুব্বীদেরকে সমাবেশে যোগ না দিতে হুমকি দেয়। তবে তাদের হুমকি উপেক্ষা করে লোকজন সমাবেশে উপস্থিত হন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার অনিলপাড়ায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পিসিপির সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা, পিসিপির বর্তমান কমিটির সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহসভাপতি লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সংগঠক রুহিন ত্রিপুরাকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এ হত্যাকাণ্ডের এক মাস অতিবাহিত হলেও প্রশাসন এখনো খুনিদের গ্রেফতার না করে উপরন্তু তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।
অপরদিকে ইউপিডিএফ-মূল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে অব্যাহতভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।