সোমবার ● ২২ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » সেনাবাহিনীর বাধা ভেঙে রাঙামাটতে ইউপিডিএফ এর বিক্ষোভ
সেনাবাহিনীর বাধা ভেঙে রাঙামাটতে ইউপিডিএফ এর বিক্ষোভ
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যদের বাধা ভেঙে রাঙামাটির কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্রগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল), রাঙামাটি জেলা শাখা।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা বিপুল চাকমা, পিসিপির সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, ডিওয়াইএফ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসভাপতি লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ-মূল এর সদস্য রুহিন ত্রিপুরার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি এবং ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবিতে আজ ২১ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবার সকাল ১১টায় এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
কুদুকছড়ি মহাপুরুম উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি খাগড়াছড়ি-রাঙামাটির মূল সড়কে যেতে চাইলে কতিপয় সেনাবাহিনীর সদস্য এবং তাদের সাথে থাকা সেনা পোষাক ও মুখোশ-পরা সন্দেহভাজন কয়েকজন ঠ্যাঙাড়ে তাদের বাধা দেয়।
কিন্তু প্রতিবাদী জনতা সেই বাধা ঠেলে মিছিলটি এগিয়ে নেয়। এ সময় তারা ‘গো ব্যাক বাংলাদেশ মিলিটারী, যে বাহিনী খুন করে সেই বাহিনী চাই না, যে বাহিনী দালাল পোষে সেই বাহিনী চাই না’ ইত্যাদি সেনাশাসন বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে।
পরে মিছিলটি রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক দিয়ে মধ্যপাড়া (ধর্মঘর) এলাকায় এসে শেষ হলে অতঃপর সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফ রাঙামাটি সদর উপজেলা সংগঠক বিবেক চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমা।
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিমি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক থুইনুমং মারমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিপন আলো চাকমা ও পার্বত্য নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা কমিটির সহ সভাপতি পিংকি চাকমা।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ধর্মশিং চাকমাও উপস্থিত ছিলেন।
অবিলম্বে বিপুল চাকমাসহ চার যুব নেতার খুনীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তা দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঠ্যাঙাড়ে খুনীদের মদদ দিচ্ছে এবং রক্ষা করছে। আজকের এই শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক মিছিলে বাধা দিয়ে তারা সেটা আরও একবার প্রমাণ করেছে।’
এই আইন অমান্যকারী কর্মকর্তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে ঠ্যাঙারেরা এখন বুক ফুলিয়ে খুনের দায় স্বীকার করছে এবং ফোনে আরও বিভিন্ন জনকে খুন করার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
বক্তারা প্রশ্ন করে বলেন, সরকারী মন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বড় বড় কর্তারা প্রতিদিন সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বড় গলায় হাঁকডাক ছাড়েন, কিন্তু ঠ্যাঙাড়েরা যে প্রতিদিন রাঙামাটির সুবলং, নানিয়াচর ও খাগড়াছড়ির দেওয়ানপাড়া ও তেঁতুলতলাসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্য দিবালোকে ও নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পের পাশে চাঁদাবাজি করে, তখন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কোথায় থাকেন?
গত ছয় বছরে একটি বিশেষ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়েরা ৫৫ জন ইউপিডিএফ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থককে খুন করেছে জানিয়ে বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে, আমরা আর সহ্য করতে রাজী নয়। সরকারকে এই খুনের উৎসব অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দিতে হবে।’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গত বছর ১১ ডিসেম্বর পানছড়ির অনিলপাড়ায় বিপুলসহ উদীয়মান চার নেতাকে খুনের ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। জুম্ম জনগণের আন্দোলনকে নেতৃত্বহীন করতে পরিকল্পিতভাবে উক্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে।
তারা বলেন, ‘একের পর এক খুন করেও ঠ্যাঙাড়েদেরকে এখনও আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমাকে খাগড়াছড়ি শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয়েছে। একই বছর ১৮ আগস্ট স্বনির্ভরে ইউপিডিএফ-ভুক্ত সংগঠনের ৭ জন নেতা ও সমর্থককে দিন দুপুরে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের চোখের সামনে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু তারপরও খুনীদের গ্রেফতার ও শাস্তি হয়নি।’
বক্তারা দৃঢ়তার সাথে বলেন, মিঠুন চাকমা হত্যা ও স্বনির্ভরে গণহত্যার পর ইউপিডিএফের আন্দোলন থেমে থাকেনি, বিপুল চাকমা ও সুনীল ত্রিপুরাসহ ৪ নেতার খুনের পরও জনগণের আন্দোলন বন্ধ হয়নি, এবং কোন ধরনের দমনপীড়নে ভবিষ্যতেও বন্ধ হবে না।
তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন উত্তরণ নামে জারিকৃত অঘোষিত সেনাশাসন তুলে নেয়ারও দাবি জানান।
চার নেতা খুনে জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে লক্ষ্মীছড়িতে বিক্ষোভ
বিপুল-সুনীল-লিটন -রুহীনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙ্গে দেয়ার দাবিতে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে তিন সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে।
মিছিলটি সকাল দশটায় পাকারাস্তার মাথা থেকে শুরু হয়ে বাদিপাড়ায় গিয়ে শেষ হয়।
এরপর সেখানে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা দপ্তর সম্পাদক মনি চাকমার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার সাধারণ সম্পাদক জয় চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার যুব ও ক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদক রুপন্ত চাকমা।
বক্তারা বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়ির অনিলপাড়ায় নিহত বিপুল চাকমা, লিটন চাকমা, ছাত্রনেতা সুনীল ত্রিপুরা ও ইউপিডিএফ সংগঠক রুহিন ত্রিপুরার খুনীদের এখনও পুলিশ গ্রেফতার করেনি। একটি বিশেষ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন জনকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে এবং সাধারণ জনগণকে নানাভাবে হেনস্থা করে যাচ্ছে।
গত ছয় বছরে ইউপিডিএফের ৫৫ জনকে খুন করার পরও এখনও এসব ঠ্যাঙাড়ে খুনীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, সভ্য সমাজে এটা কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারকে এই খুনীদের গ্রেফতার করতে হবে এবং ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দিতে হবে বলে তারা মন্তব্য করেন।
নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন করে বলেন, সাধারণত কোথাও খুনের ঘটনা ঘটলে সরকার সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে তৎপরতা বাড়িয়ে দেয় এবং বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কিন্তু বিপুলদের যখন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, তখন পানছড়ি জোনের এক মেজরের পক্ষ থেকে পুলিশ বাহিনীকে ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেয়ার কারণ কী?
তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে পানছড়ি হত্যায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তির জন্য দায়ি ঠ্যাঙাড়ে গ্রুপগুলো ভেঙেগ দেয়ার দাবি জানান।