বৃহস্পতিবার ● ১৪ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহের পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় ব্যাপক
ঝিনাইদহের পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় ব্যাপক
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (১ বৈশাখ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১২.৫৭মিঃ) ঝিনাইদহে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করার কথা থাকলেও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চলছে কর্মকর্তাদের পুকুর চুরি ৷ চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৷ কর্মকর্তাদের দুর্ণীতির কারণে শত শত গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছে ৷ বছরের পর বছর গ্রাহকরা প্রতিকার পাচ্ছে না নানা অনিয়মের হাত থেকে ৷ বিশেষ করে যথা স্থানে মিটার না বসানো, ওয়ারিং কাজে মাটির নীচে অতি নিন্মমানের রড ব্যবহার, আর্থিং তারে কম দেয়া এমন অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে ৷ গ্রাহকরা এসব অভিযোগ করছে পল্লী বিদ্যুৎ ঝিনাইদহ অঞ্চলের জিএম যুবরাজ চন্দ্র পাল সহ জোনালের কিছু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৷
জেলা জুড়ে পল্লী বিদ্যুতের নানা কার্যক্রম চলে আসছে ৷
অনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলাতে পল্লী বিদ্যুতের কাজ চলছে বিভিন্ন এলাকায় ৷ উপজেলার রতনপুর, বোয়ালিয়া, মহিষাডাঙ্গা, ভিক্ষাকর, হরিহরা, গোবিন্দপুর, শহীদনগর, সহ বিভিন্ন গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য মিটার, ওয়ারিং ও আর্থিং রড বসানোর কাজ শেষে সংযোগ দেয়া হয়েছে ৷ গত প্রায় ৩ মাসের মধ্যে এসব এলাকাতে সংযোগ দেয়া হয় ৷ মিটার ওয়ারিং-এ গ্রাহকদের কাছ থেকে কমপক্ষে সাড়ে ১৮শত করে টাকা আবার কোথাও তার বেশী নেয়া হয়েছে ৷ তবে এসব সংযোগে আর্থিং রড এর কাজ করার সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের অসত্ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ৷ মাটির নীচে বসানো ৮ফুট রডের ওজন নূন্যতম ৪কেজি থাকার কথা থাকলেও ৩ কেজি বা তার কিছু কম বেশী দিয়ে দেয়া হয়েছে ৷ রডে গ্যালভানাইজিং এর বিপরীতে বাজার থেকে নিন্মমানের রড কিনে তাতে সিলভার কালার করা হয়েছে ৷ মাটির নীচে থাকা এসব রডে কিছুদিন পরে মরিচা ধরে গেছে ৷ এর কারণে যে কোন সময় নিম্নমানের রডের সাথে থাকা তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে যে কোন সময় মানুষের প্রাণহাণীর আশংকা দেখা দিয়েছে ৷
আতঙ্কিত গ্রাহকরা এসব ব্যাপারে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুত অফিসে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি দুণীতির সাথে জড়িত থাকা কর্মকর্তারা ৷ তারা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ ৷ খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গ্রাহকদের মিটার সংযোগের ১০ নাম্বার জি আই তার ১০ ফুট থাকার কথা থাকলেও বেশীর ভাগ জায়গাতে কম দেয়া হয়েছে ৷ শৈলকুপার রতনপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান, ক্লাইভ, শামছুদ্দিন মোল্লাসহ কয়েকজন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা সিএইচ মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম ঝিনাইদাহ প্রতিনিধি সাংবাদিক জাহিদুর রহমান তারিককে জানান, তাদের এলাকার গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে উর্ধতন কর্মকর্তারা গ্রামে এসে এসব নিন্মমানের মরিচা ধরা সামগ্রী দ্রুত বদলানোর জন্য ঝিনাইদহ অফিসকে নির্দেশনা দিলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি আজও ৷
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পল্লী বিদ্যুতের মিটার গ্রাহকদের বসতবাড়িতে বসানোর কথা থাকলেও কোথাও গোয়ালে, ছোট টোং ঘরে বা ঝুকিপূর্ণ স্থানে মিটার বসিয়ে দেয়া হয়েছে ৷ শিংনগর গ্রামের নজির বিশ্বাসের বসতবাড়ি থেকে ৫শ ফিট দূরে একটি ছোট ভাঙ্গা ঘরে মিটার বসানো হয়েছে ৷ একই গ্রামের মোশারফ হোসেনের নামে নেয়া মিটারটিও তার বাড়ির পরিবর্তে গোয়াল ঘরে বসানো রয়েছে, যা আরইবি (জঊই) নিয়ম বর্হিভূত ৷ আবার আরইবি অনুমোদিত সামগ্রীর বাইরে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে ৷
এসব ছাড়াও দুর্ণীতি পুকুর চুরির নানা তথ্য মিলছে গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে ৷ উত্তর কচুয়া গ্রামের গ্রাহক জামাল গাজি গত বছরের ডিসেম্বরের ৮ তারিখে মিটার জামানতের টাকা দিয়েছে শৈলকুপা পল্লী বিদ্যুত অফিসে ৷ যার অফিসিয়াল রিসিভ নাম্বার ২৬১৭০৩ ৷ আজ পর্যন্ত তাকে সংযোগ না দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে ৷ আবার কোথাও অল্প দিনের ব্যবধানে টাকার বিনিময়ে মিটার সংযোগ বসিয়ে দেয়া হয়েছে ৷ এক শ্রেণীর দালালদের মাধ্যমে এমন অনিয়ম নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷
দুর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়া পল্লী বিদ্যুতের কিছু কর্মকর্তা অনভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ান বা অদক্ষ লোক দিয়ে যাবতীয় কাজ কর্ম সারছে ৷ এতে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে গ্রাহকদের, তাদের থাকতে হচ্ছে আতঙ্কে৷ গ্রাহকরা জানান, পল্লী বিদ্যুতের জিএম এসব ব্যাপারে নির্বিকার থাকছেন, ফলে তারা বেশী হয়রানীর শিকার হচ্ছে ৷
এসব অভিযোগ সম্পর্কে পল্লী বিদ্যুতের ঝিনাইদহ অঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার যুবরাজ চন্দ্র পাল এর সাথে কথা বললে তিনি দায় এড়িয়ে বলেন এসব দেখার দায়িত্ব শৈলকুপা জোনাল অফিসার হুমায়ুন কবির সহ বিভিন্ন উপজেলার জোনাল কর্মকর্তাদের ৷ এদিকে শৈলকুপা পলস্ন্লী বিদ্যুত অফিসে নতুন সংযোগ দেয়া জোনাল অফিসার হুমায়ুন কবির জানান, এসব ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন ৷