বৃহস্পতিবার ● ১৪ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » ফটো গ্যালারী » বিশ্বনাথে বৈশাখ বরণে সর্বত্র উত্সবের আমেজ
বিশ্বনাথে বৈশাখ বরণে সর্বত্র উত্সবের আমেজ
মোঃ আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ ( সিলেট ) প্রতিনিধি :: (১ বৈশাখ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১.২০মিঃ) এসো হে বৈশাখ এসো এসো৷ কাল পহেলা বৈশাখ ১৪২৩ বাংলা৷ প্রতিবছর এই দিনে বাংলা সাজে নানান রঙে ৷ বাঙালী সাজে নানা ঢঙ-এ ৷ পহেলা বৈশাখকে ঘিরে সিলেটের বিশ্বনাথে বিরাজ করছে উত্সবের আমেজ ৷ রকমারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন ৷
পুরাতন ও জীর্ণতাকে অতিক্রম করে নতুন ও পরিবর্তনকে আহ্বান জানানোর শ্রেষ্ঠ সময় এই বৈশাখ ৷ নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আজ ১ বৈশাখ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সামাজিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বর্ষবরণ উত্সবের ৷
বৈশাখী উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী উপজেলা পরিষদ মাঠে বিশ্বনাথ নববর্ষ উদযাপন পরিষদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে৷ অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে পাত্তা ইলিশ পরিবেশন, বাউল গান, মঙ্গলশোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেমন খুশি তেমন সাজো, কাবাডী খেলা, মোরগের লড়াই, হাড়িভাঙা, একক অভিনয়, নাটক, মৃত্শিল্প, কুটির শিল্প, বস্ত্রশিল্প, বই,পিঠা ও খেলাসহ বিভিন্ন দোকানঘর থাকবে ৷
আবহমান বাংলার এই চিরায়ত উত্সবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করার সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিশ্বনাথ বৈশাখী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক আমির আলী, সদস্য সচিব আনহার আলী ৷
নতুন বছরে নতুন পোষাক গায়ে জড়িয়ে আনন্দের চূড়ায় উঠার বাসনা থেকে অনেকেই উপজেলার মার্কেটগুলোতে আসছেন৷ নিজের পছন্দের পোষাক কিনে তবেই বাড়ি ফিরছেন ৷ বৈশাখী কেনাকাটায় ছোট-বড় বিপনী বিতানগুলোর পাশাপাশি ফুটপাতের ব্যবাসায়ীদেরও সময় ভালো যাচ্ছে ৷ সারাদিন ক্রেতার ভিড় সামালে নিচ্ছেন হাসি মুখে ৷ অনেক ব্যবসায়ী ঈদ-পূজার পরে বৈশাখের বেচা-কেনাকে বছরের অন্যতম ব্যবসার সময় হিসেবে ধরে নিয়েছেন ৷
একজন ব্যবসায়ী জানালেন, প্রতিবারের মতো এবারও বৈশাখী বেচা-কেনায় নারী ও শিশুদের পোষাক বেশী বিক্রি হচ্ছে ৷ পাশাপাশি ছেলেদের পাঞ্জাবিটা একটু বেশী চলছে ৷ বৈশাখ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের রকমারি পোশাক শোভা পাচ্ছে প্রতিটি দোকানে ৷
পহেলা বৈশাখে ইলিশ-পান্তা খাওয়ার একটি রেওয়াজ ধীর্ঘদিনের৷ এবছর এই রেওয়াজে কিছুটা ভাটা পড়বে ৷ কেননা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বৈশাখে ইলিশ খাবেন না এমন খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ৷ মূলত ইলিশ রক্ষা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বৈশাখে খাবারের তালিকায় ইলিশ না রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে গণমাধ্যমে ৷
তাই বিকল্প হিসেবে পানত্মার সাথে হরেক রকম ভর্তা, শুটকী ভোনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ৷ সবকিছুর পরও ইলিশ ছাড়া বাঙালি বৈশাখের স্বাদ যেন পানসে হয়ে যায়৷
পান্তা-ইলিশ ছাড়া যেন সেই আনুষ্ঠানিকতা অপূর্ণ রয়ে যায় ৷ আর এখনও বৈশাখে বেড়েছে ইলিশের চাহিদা৷ চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইলিশের দাম ৷ বিক্রেতারা বলছেন দাম বাড়ার একটাই কারণ চাহিদার তুলনায় আমদানি কম৷ বাঙালির আবহমান সংস্কৃতির এই উত্সবকে নির্বিঘ্ন করতে, নিরবিচ্ছিন্ন করতে নিশি্ছদ্র নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ ৷
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে থানা পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ৷ উপজেলা জুড়ে মানুষের ঢল নামবে, মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা হবে-এসব বিষয়কে মাথায় রেখে বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ৷ নিরাপত্তার ব্যাপারে সামান্যতম ছাড় দিতেও নারাজ পুলিশ ৷
উপজেলার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, গুরম্নত্বপূর্ণ পয়েন্টে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে পুলিশ ৷ গোয়েন্দা সদস্যরাও পুলিশের সাথে কাজ করবে ৷ পোশাকধারী পুলিশের সাথে সাথে সাদা পোশাকের পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা উপজেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কাজ করবেন ৷
এদিকে রঙ নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি সয্য করা হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ ৷ এ ধরনের কাজে কাউকে দেখা গেলে সাথে সাথে আটক করা হবে ৷ বৈশাখের আনন্দের মধ্যে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ড চলতে দেয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি করেছে পুলিশ প্রশাসন ৷
তাছাড়া পহেলা বৈশাখে ভুভুজেলা বাজানো, মোটরসাইকেলে দলবদ্ধভাবে হর্ণ বাজিয়ে জনবিরক্তি সৃষ্টি, খোলা ট্রাকে শহরজুড়ে বাদ্য বাজিয়ে প্রদক্ষিণ এসব কাজকে নিষিদ্ধ করেছে থানা পুলিশ ৷
বিশ্বনাথ থানার ওসি আবদুল হাই বলেন, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে পুলিশ বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ৷ ইতিমধ্যেই সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ শুরম্ন করে দিয়েছেন ৷ কোনো ধরনের বিশৃংখলা করার চেষ্টা হলে তাত্ক্ষনিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান ৷