মঙ্গলবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » বান্দরবানে গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ
বান্দরবানে গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক কিরণ চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে গণগ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদে এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে রাঙামাটির কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফভুক্ত চার সংগঠন।
সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ বিকাল ৩টায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা শাখা সমূহের যৌথ উদ্যোগে কুদুকছড়ি মধ্যপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক হয়ে কুদুকছড়ি নিচ পাড়ায়(হেডম্যান পাড়া) এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিনিসা চাকমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি তনুময় চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্রত পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নিকন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়তন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা সভাপতি রিমি চাকমা।
ছাত্র নেতা নিকন চাকমা বলেন, বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানের নামে বম জাতিসত্তার জনগণকে নির্বিচারে গ্রেফতার, নিপীড়ন-নির্যাতন করা হচ্ছে। সেখানে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনী জিসিন ক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্বাভাবিক জীবন যাপন বিপন্ন করা হয়েছে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা সাজানো হয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি সরকার ও রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নয়। এ অঞ্চলের পাহাড়ি জনগণ মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু দেশের জন্য নানা অবদান রেখে চলেছে। তবুও কেন পাহাড়িদের ওপর অন্যায়ভাবে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে?
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন, সীমান্ত সড়কের নামে ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী সৃষ্টি করে নেতা-কর্মী খুন-গুম হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
নিকন চাকমা সমাবেশে উপস্থিত সকলকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
নারী নেত্রী রিমি চাকমা বলেন, বান্দরবানে যে বম ভাই-বোনদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে তারা বাংলাদেশ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে কেউ নন। তারা এদেশেরই নাগরিক। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রাখার মাধ্যমে যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাদেরকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, নির্যাতন করা হচ্ছে। আজকে নিরপরাধ বম জাতিগোষ্ঠির নিরীহ জনগণকে গ্রেফতার, নির্যাতন, হয়রানি করা হচ্ছে। গর্ভবতী নারীরাও রেহায় পাচ্ছে না। সেনা শাসনের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ, মা-বোন কেউই আর নিরাপদ নয়।
তিনি গত বছর কাপ্তাইয়ে সেনা সদস্য দ্বারা এক পাহাড়ি স্কুলছাত্রী ও ২০১৮ সালে বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ-নির্যাতন এবং চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েনকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা তুলে ধরেন।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নেয়া এবং বান্দরবানে গ্রেফতারকৃত নিরীহ লোকজনকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।
যুব নেতা প্রিয়তন চাকমা বলেন, রুমা ও থানচিতে প্রকাশ্যে যেভাবে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তাতে স্পষ্ট হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসনের বৈধতাদানের মাধ্যমে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ নির্বিঘ্ন করতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কিন্তু এই নাটকীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় বাহিনী যৌথ অভিযানের নামে ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমজীবী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে নির্বিচারে বম জাতিসত্তার নারী-পুরুষকে গ্রেফতার করে কেএনএফ বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন, দমনপীড়ন চলতে থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ বসে থাকবে না। নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।
সমাবেশের সভাপতি রিনিসা চাকমা বলেন বান্দরবানের ব্যাংক ডাকাতিকে কেন্দ্র করে সাধারন বম জনগোষ্ঠীর উপর গণগ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সরকার অঘোষিত যে সেনাশাসন জারি রেখেছে তা বৈধতা দেয়ার জন্য আজকে বান্দরবানের এই ব্যাংক ডাকাতির নাটক সাজিয়ে সাধারণ জনগণের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।
তিনি অবিলম্বে সেনা শাসন প্রত্যাহারসহ বান্দরবানের সাধারণ বম জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান গণগ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ করা এবং গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ ব্যক্তিদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।