বুধবার ● ১৫ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ইউপিডিএফের ডাকা আধাবেলা অবরোধ পালিত
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ইউপিডিএফের ডাকা আধাবেলা অবরোধ পালিত
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় ইউপিডিএফের ডাকে আজ ১৫ মে ২০২৪, বুধবার আধাবেলা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালিত হয়েছে।
আদালতের মাধ্যমে চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলসহ রাজা-হেডম্যান-কার্বারি পদবি বিলোপ এবং পাহাড়িদের প্রথাগত অধিকার হরণের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ইউপিডিএফ এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
এর আগে গত সোমবার রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে দলটি অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।
অবরোধ সফল করতে আজ ভোর ৫টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ফায়ার সার্ভিস এলাকা (খাগড়াছড়ি টু ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক), উপজেলা পরিষদ এলাকা (খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়ক), শিবন্দির এলাকা, গুইমারা উপজেলার খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের বাইল্যাছড়ি-জালিয়া পাড়া, মানিকছড়ি উপজেলার জামতলা এলাকায় খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে, রামগড় উপজেলায় খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়ক এবং পানছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়কে আগুন দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
অপরদিকে রাঙামটি জেলায় চট্টগ্রাম টু রাঙামাটি সড়কের বেতবুনিয়া এলাকায়, রাঙামাটি সদরের ভেদভেদি এলাকায়, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের সাপছড়ি, কুদুকছড়ি, ঘিলাছড়ি, সোনারাম কার্বারী পাড়া (১৮ মাইল) এলাকা, দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি-সাজেক পর্যটন সড়কের উজো বাজার, মাচলং, মারিশ্যা ১০ নম্বর এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে পিকেটিং করে। পিকেটিংয়ে নারীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
সাজেকের উজো বাজারে নারী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা সাজেক পর্যটন সড়ক অবরোধ করেন।
মারিশ্যা সড়কের ১০ নম্বর এলাকায় নারীরা অবরোধের সমর্থনে রাস্তায় নেমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাথে মুখোমুখি অবস্থানে থেকে সেখানে অবরোধ কর্মসূচি সফল করেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়ি এলাকায়ও নারী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবরোধ সফল করার জন্য সড়কে পিকেটিং করেন।
অবরোধের কারণে জেলা ও উপজেলাগুলোতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। জেলা সদর থেকে দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে যায়নি।
অবরোধ চলাকালে বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা ও রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা এক যুক্ত বিবৃতিতে অবরোধ কর্মসূচি সফল করায় বাস-ট্রাক-লঞ্চসহ সকল যানবাহন ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, সরকার আদালতকে ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণকে অধিকারহীন করার লক্ষে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বাতিলসহ রাজা-হেডম্যান-কার্বারি পদবি বিলোপ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এর বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তারা অবিলম্বে এই ষড়যন্ত্র বন্ধ করে চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন ১৯০০ বলবৎ রাখা, পাহাড়িদের প্রথাগত অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন অবসানের দাবি জানান।
ইউপিডিএফের অবরোধ বিষয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিকৃত তথ্য উপস্থাপনের প্রতিবাদ
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আদালতের মাধমে চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন বাতিলসহ রাজা-হেডম্যান-কার্বারি পদবি বিলোপ এবং পাহাড়িদের প্রথাগত অধিকার হরণের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ইউপিডিএফ আজ (বুধবার) রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালন করে।
কিন্তু অবরোধের সংবাদ উপস্থাপন করতে গিয়ে কিছু টিভি চ্যানেল বিষয়টি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে, যার ফলে ইউপিডিএফেরে কর্মসূচি সম্পর্কে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে।
যেমন যমুনা টিভি চ্যানেলে উপস্থাপন করা হয়েছে, “চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন, রাজা-হেডম্যান-কার্বারি বিলোপসহ বিভিন্ন দাবিতে” ইউপিডিএফ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।
চ্যানেল২৪-এর খবরে “চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন, রাজা-হেডম্যান-কার্বারি বিলোপ এবং পাহাড়িদের প্রথাগত অধিকার রক্ষার দাবিতে” অবরোধ পালনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুরূপভাবে একাত্তর টিভির উপস্থাপকও খবরটি পরিবেশন করেছেন, যদিও রিপোর্টার ঠিকভাবে রিপোর্ট করেছিলেন।
টিভি চ্যানেলগুলোর উক্ত ভুল তথ্য উপস্থাপনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা।
আজ বুধবার (১৫ মে ২০২৪) রাতে সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মূলত ইউপিডিএফ যে ইস্যুতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে সেখানে ‘দাবি’ শব্দটি নেই। সুনির্দিষ্টভাবে সেখানে .., “ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে” কথাটি লেখা রয়েছে। কারণ উচ্চ আদালতের মাধ্যমে ১৯০০ সালের শাসন বিধি বাতিল করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজা-হেডম্যান-কার্বারী পদবি বিলোপসহ পাহাড়িদের প্রথাগত অধিকার আর থাকবে না। সেই ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদেই মূলত ইউপিডিএফ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।
সুতরাং উল্লেখিত টিভি চ্যানেলগুলো কীভাবে ‘ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে’ শব্দটি বাদ দিয়ে “দাবিতে” শব্দ জুড়ে দিয়ে খবর উপস্থাপন করেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটি ইউপিডিএফের কর্মসূচিকে পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার কোন অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা কীনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
তিনি অবিলম্বে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা খবরের সংশোধনপূর্বক যথাযথভাবে সংবাদ উপস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোর কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নানিয়াচরে গ্রামবাসীকে গুলিতে আহত করায় ইউপিডিএফ এর নিন্দা
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা জেলার নানিয়াচরে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী কর্তৃক সুকেন চাকমা ওরফে পাক্কোজ্যা চাকমা নামে এক গ্রামবাসীকে গুলি করে গুরুতর আহত করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আজ ১৫ মে ২০২৪, বুধবার সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে নানিয়াচর বাজারে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী রিজুম চাকমার সাথে নান্যাচর বাজার দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা মৃত সমরঞ্জন চাকমার ছেলে সুকেন চাকমার (৪০) কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রিজুম চাকমা তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে পাক্কোজ্যা চাকমাকে গুলি করে। এতে তার পেটে গুলি বিদ্ধ হলে তিনি গুরুতর জখম হন।
‘এ অবস্থায় তাকে প্রথমে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে কর্তব্যরত ডাক্তারের পরামর্শে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়।’
ইউপিডিএফ নেতা উক্ত ঘটনাকে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসের জঘন্য রূপ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘ঠ্যাঙাড়েদের উৎপাত ও অত্যাচারে সর্বত্র জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে এখন ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে। উক্ত বন্দুক হামলার ঘটনার পর নানিয়াচর বাজার এলাকার ক্ষুদ্ধ জনগণ সংগঠিত হয়ে ঠ্যাঙাড়েদের তাড়িয়ে দিতে চাইলে একটি বিশেষ মহল তাদেরকে বাধা দেয়।’
সচল চাকমা প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন করে বলেন, নানিয়াচর বাজারে কীভাবে একটি সশস্ত্র দুর্বৃত্ত দল প্রকাশ্যে মাসের পর মাস বছরের পর বছর অবস্থান করতে পারে? কী উদ্দেশ্যে তাদেরকে সেখানে রাখা হয়েছে তা জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১৫ এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলার ভাইবোনছড়ায় মংসানু মারমা নামে এক ইউপি মেম্বারকে তার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ চেষ্টার পর সেখানকার এলাকাবাসী দেওয়ানপাড়ায় অবস্থানরত ঠ্যাঙাড়েদের তাড়িয়ে দিতে চাইলে তখনও জনতাকে বাধা দেয়া হয়।
কী কারণে বিভিন্ন খুন ও ধর্ষণ মামলার আসামী এইসব ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে বরং তাদেরকে সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে, কেন অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রসহ বিজিবি কর্তৃক আটকের পরও তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা ও জবাব সরকারকে দিতে হবে বলে সচল চাকমা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
তিনি অবিলম্বে পাক্কোজ্যা চাকমাকে হত্যা চেষ্টাকারী ঠ্যাঙাড়ে রিজুম চাকমাকে গ্রেফতার, নানিয়াচর বাজারে অবস্থিত ঠ্যাঙাড়ে আস্তানা ধ্বংস এবং ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।