শনিবার ● ২৫ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে পার্বত্য চুক্তি রিভিউ করার দাবি
পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে পার্বত্য চুক্তি রিভিউ করার দাবি
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রাখিয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরান্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকার সংরক্ষন এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তরফ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি চারি খন্ড (ক,খ,গ,ঘ) সম্মিলিত চুক্তিতে উপনিত হন। ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সম্পাদিত এই চুক্তিতে সই করেন।
২রা ডিসেম্বর ২০২৩ সালে পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই ২৬ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কি পেলেন ? আর মাত্র সাত মাস পর ২রা ডিসেম্বর ২০২৪ সালে পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছর পূর্ণ হবে।
পার্বত্য চুক্তির আলোকে গঠন করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন, পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ (রাঙামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯, বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯) এবং এর বিভিন্ন ধারা সমূহের পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন ও অবলোপন করার মাধ্যমে গঠন করা হয় রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে শক্তিশালী করা হয় চাকমা সার্কেল, বোমাং সার্কেল ও মং সার্কেল চীফদের কার্যক্ষমতা। পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক এডিবির পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প ও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সংস্থা। এর বাইরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মূল্যায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তাকারী উপদেষ্টা কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি ইত্যাদি।
পার্বত চুক্তির প্রারম্ভে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তন্মধ্যে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে ১৯৯৭ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আলোকে বা শর্ত অনুযায়ী ২৩৯ টি সেনা ক্যাম্প পাহাড় থেকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ায় এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। ফলে নতুন করে সাধারণ মানুষের জানমাল ও নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়। নতুন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যদি সেনাবাহিনী চলে যায় এখানকার মানুষের উপর স্টিমরোলার চালানো যেমন হবে তেমনি গণহত্যা সংগঠিত করার মাধ্যমে জাতিগত নিধন শুরু হবে। পাহাড়ে সেনাবাহিনী আছে বিধায়, সন্ত্রাসীরা অপ্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালেও সরাসরি মানুষের জানমাল ও নিরাপত্তায় ক্ষতিসাধন করার মতো দুঃসাহস প্রদর্শন করছে না। সেনাবাহিনীর আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব পালন আর পাহাড়ি-বাঙ্গালীর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার সাফলা বজায় রয়েছে।
পার্বত্য চুক্তির পূর্বে পার্বত্য অঞ্চলের বসবাসরত অধিবাসীদের যে রাজনৈতিক অধিকার ছিল চুক্তির পর আদৌ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে সক্ষম হয়নি।
এর জন্য পার্বত চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারকরা দায় এড়াতে পারেন না।
পার্বত্য চুক্তিতে ১১টি জনগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করা হলেও বিশেষ করে ১৯৯৭ সালে ২ রা ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত চট্টগ্রামে ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা,বম,পাংখোয়া, চাক, খুমি, লুসাই, কোচ, সাঁওতাল, ডালু, উসাই, রাখাইন, মণিপুরী, গারো, হাজং, খাসিয়া, মং, ওরাও, বর্মণ, পাহাড়ী, মালপাহাড়ী, মুন্ডা, কোল, বড়ুয়া,হিন্দু,মুসলমান, গুরর্খা,অহমিয়ারা প্রতি পদে পদে বৈষম্য ও বঞ্চনার স্বীকার ৷
পার্বত চট্টগ্রামে ৩১টি জনগোষ্ঠীর লোকজন কম-বেশী পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন কিন্তু পার্বত্য চুক্তির মধ্যে তার কোন উল্লেখ নাই। এতে পরিস্কার পার্বত্য চুক্তি স্বয়ংসম্পুর্ণ নয়। পার্বত্য চুক্তিটি ত্রুটিপূর্ণ।
(পার্বত চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ ২৬ বছর পরেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আপামর জনগণের কথা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র জুম্ম জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা সরকার এখনও পূরণ করতে পারেনি বলে দাবি করেন।)
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পিসিজেএসএস-মুল এর নেতা-কর্মী-সমর্থক বন্ধুদের কাছে বিনয়ের সহিত প্রশ্ন : পার্বত্য চুক্তিতে কোন ধারায় বা উপধারায় কেবলমাত্র জুম্ম জনগণের কথা লেখা আছে?
অধিকার চাইলে তো দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাদের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রিয় দায়িত্ব পালন করা হতো তাহলে পাহাড়ে ছয়টি সশস্ত্র আঞ্চলিক দল গঠন হয় কি করে ? বাংলাদেশে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান ১টি সাম্প্রদায়ের জনবল দিয়ে চালানোর নজির নাই। তার পরও ক্ষমতাসীদের কারণে অলিখিত প্রথা চালু আছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বিজ্ঞ মহলের ধরনা এবং এ ধরনের মতামত ।
অসাম্প্রদায়িকতা, পাহাড়ের বাস্তব পরিস্থিতি, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সকল জনগণ এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তির হয়ে কাজ করলে ২৭ বছরে হয়তো বা পাহাড়ে বসবাসরত জনগণ আধাবিলুপ্ত শান্তি বাহিনীর কথা ভুলে যেতেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনপ্রতিনিধি বলেন, মূলতঃ ক্ষমতাসীদের রাজনৈতিক সৎইচ্ছার অভাব ও ক্ষমতা লোভ । অন্যদিকে পিসিজেএসএস-মুল এর উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও অতিমাত্রায় ক্ষমতা লোভ এর কারণে ২৭ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের কাছ থেকে পার্বত্য চুক্তির পক্ষে আস্থা অর্জন করতে পারেননি।
শুধু তাই নয়, নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নয়, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একজন আমলা জানান, আন্তর্জাতিক ফোরামে রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য ক্ষমতাসীদের আস্থাও হারাতে পারে (পিসিজেএসএস-মুল)।
১৯৯৭ সালে যখন পার্বত্য চুক্তি করা হয় তখন পাহাড়ে সশস্ত্র ১টি মাত্র আঞ্চলিক দল ছিলো।
স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এখন পাহাড়ে পিসিজেএসএস-মুল, পিসিজেএসএস-সংস্কারপন্থী, ইউপিডিএফ-মূল, ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক, এমএনপি-মগ পার্টি গণতান্ত্রিক এবং কুকি ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ ছয়টি সশস্ত্র আঞ্চলিক দল রয়েছে।
পাহাড়ের বাস্তব পরিস্থিতি বিবোচনায় নিয়ে পার্বত্য তিন জেলায় কর্মকান্ড রয়েছে সেই সকল জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, ছয়টি আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধি, তিন জেলার বাঙ্গালী আঞ্চলিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা, বম,পাংখোয়া, চাক, খুমি, লুসাই, কোচ, সাঁওতাল, ডালু, উসাই, রাখাইন,মণিপুরী, গারো, হাজং, খাসিয়া, মং, ওরাও, বর্মণ, পাহাড়ী, মালপাহাড়ী, মুন্ডা, কোল, বড়ুয়া,হিন্দু,মুসলমান, গুরর্খা, অহমিয়াসহ সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে পার্বত্য চুক্তি সময় উপযোগি এবং পার্বত্য চুক্তিটি রিভিউ করার দাবি স্থানীয়দের।