রবিবার ● ১৭ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুর সিটি মেয়র মান্নান কাশিমপুর কারাগারে
গাজীপুর সিটি মেয়র মান্নান কাশিমপুর কারাগারে
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৪ বৈশাখ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩.৫৫মিঃ) গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত ১৫ এপ্রিল শুক্রবার রাতে বাসে অগি্নসংযোগের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে আদালতের নির্দেশে আবার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ পাঠানো হয়েছে৷ একইসঙ্গে একই মামলায় গ্রেফতার আরও ৯ জনকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷
১৬ এপ্রিল শনিবার বিকেলে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মোঃ ইকবাল মাসুদ তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন৷
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সুপার সুব্রত কুমার বালা আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, ১৬ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশের একটি পিকআপভ্যানে করে মেয়র এম এ মান্নান ওই কারাগারে পৌঁছেন৷
গাজীপুরের আদালত পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বাস পোড়ানোর ঘটনা ঘটে৷ এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানার এসআই মো. আহাদুল ইসলাম বাদী হয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এম এ মান্নানসহ ৪০ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরও ২০-৩০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন৷ এদের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিএনপিপন্থী ১১ জন কাউন্সিলর রয়েছেন৷ মামলায় মেয়র মান্নানকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে৷
এ মামলায় শুক্রবার রাতেই এম এ মান্নানসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ গ্রেফতার অন্যরা হলেন অধ্যাপক এম এ মান্নানের ভাই বিএনপি নেতা আব্দুল কাদির, কাউলতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ডিলার, রফিজ উদ্দিন, বিএনপি সমর্থক শাহিন আলম, হাবিবুল্লাহ, এস এম ওয়াসিম, সব্দুল আলী, মো. আলম ও গাড়িচালক মো. মিজানুর রহমান মিজান৷
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ এম এ মান্নানসহ ১০ জনকে জয়দেবপুর থানায় আনা হয়৷ শনিবার বিকাল ৪টার দিকে তাকে গাজীপুর আদালতে হাজির করা হয়৷
অধ্যাপক এমএ মান্নানের আইনজীবী মোঃ মনির হোসেন আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, আদালতে আসামিদের জামিন প্রার্থনা করলে শুনানী শেষে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মোঃ ইকবাল মাসুদ তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷ এর মধ্যে অধ্যাপক এমএ মান্নানকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং কারা বিধি মোতাবেক ডিভিশন ও চিকিত্সা ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন৷ বাকীদের গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷
বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন গাজীপুর সিটির মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান শুক্রবার তার নিজ বাসভবন সালনায় ১০০-১৫০ নেতাকর্মী বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষপটকে আরো অস্থিতিশীল করার জন্য গাজীপুর চৌরাস্তাসহ বিভিন্নস্থানে নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছে৷ পরে সংবাদের সত্যতা যাচাই এবং প্রয়োজনীয় আইনহত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুলিশ চান্দনা চৌরাস্তায় গিয়ে দেখেন বিএনপির দুষ্কৃতিকারী নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে শুক্রবার রাত আটটা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চান্দনা স্কুলের সামনে কেপি পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে অগি্নসংযোগ করে এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গাড়ি ভাংচুর শুরু করলে ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় ৯জনকে আটক করে৷ পরে ধৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, সিটি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের নির্দেশে তারা বাসে অগি্নসংযোগ করেছে এবং অধ্যাপক এমএ মান্নান কালিয়াকৈরের উদ্দেশ্যে চলে যায়৷ পরে ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় ধাওয়া করে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ফাঁড়ির সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়৷ রাত ১১টার দিকে পুলিশ অধ্যাপক এমএ মান্নানসহ ১০জনকে জয়দেবপুর থানায় আনা হয়৷ শনিবার বিকাল ৪টার দিকে তাকে গাজীপুর আদালতে হাজির করা হয়৷
আইনজীবী মোঃ মনির হোসেন ছাড়াও আসামী পক্ষে গাজীপুর বারের সভাপতি এডভোকেট সহিদুজ্জামান, সাবেক সাধারণ সম্পদাক মোঃ সিদ্দিকুর রহমানসহ অর্ধশতাধিক আইজীবী অংশ নেন৷ এদিকে মেয়র মান্নানের মুক্তির দাবিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেঘডুবি, মীরেরবাজার, শিববাড়ি, কোনাবাড়ি প্রভৃতি এলাকায় ছাত্রদলের নেতাকর্মী মিছিল করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে৷
জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান রেজা প্রথমে মেয়র মান্নানকে নাশকতার দুইটি পেন্ডিং মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বললেও পরে শুক্রবার রাতে তাকে চান্দনা-চৌরাস্তার বাস পোড়ানোর একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানান৷
উলেস্নখ্য, যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলার জয়দেবপুর থানার মামলায় ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রম্নয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় মেয়র এম এ মান্নান ঢাকার বারিধারার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়৷ তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হলে ওই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন৷ গ্রেফতারের পর থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন প্যানেল মেয়র মোঃ আসাদুর রহমান কিরণ৷
এদিকে গত ২ মার্চ অধ্যাপক মান্নান জামিনে মুক্তি পান৷ অধ্যাপক এম এ মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করে দেওয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশ গত ১১ এপ্রিল সোমবার ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট৷ পরে গত ১৩ এপ্রিল বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল করলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন৷