বুধবার ● ১২ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » দিনাজপুর » ঘোড়াঘাটে ভিজিএফ এর চাল বিতরণে অনিয়ম
ঘোড়াঘাটে ভিজিএফ এর চাল বিতরণে অনিয়ম
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারের দেওয়া বিশেষ বরাদ্দ ভিজিএফ এর চাল বিতরণে ব্যাপকে অনিয়ম ও কালোবাজারে চাল বিক্রি সহ অনিয়মে বাধা দেওয়ায় এক ইউপি সদস্যকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে।
গত মঙ্গলবার উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৪টি ইউনিয়নের ২১ হাজার ৯৮৮ জন সুবিধাভোগীর মাঝে চাল বিতরণের উদ্বোধন হলে সরেজমিনে গিয়ে এসব অনিয়ম ও ৩ নং সিংড়া ইউপির ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আতিয়ার রহমানকে মারপিটের অভিযোগ পাওয়া যায়।
সরজমিনে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেছে, ৩ নং সিংড়া ইউনিয়নের চাল বিতরণে উদ্বোধনের প্রথম দিনে ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডে চাল বিতরণকালে ১০ কেজি চালের পরিবর্তে ৪’শ থেকে ৫’শ গ্রাম চাল কম দেওয়া হচ্ছে। চাল কম দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীরা প্রমান করলে সাথে সাথেই ওজন পরিমাপের ডিজিটাল মিটার গুলো সংশোধন করেন। এছাড়া পরিষদের আশেপাশে পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা ১টি স্লিপের চাল ৩শ থেকে ৩২০ টাকা দরে ক্রয় করছেন। চাল বিক্রির বিষয়ে সুবিধাভোগীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, মোটা চাল বিক্রি করে চিকন চাল ক্রয় করতে এসব চাল বিক্রি করা হয়।
চাল বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে উপজেলার ৩নং সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদে গেলে আতিয়ার রহমান সহ কয়েকজন ইউপি সদস্য অভিযোগ করে জানান, ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাত হোসেনের কিছু ব্যক্তিগত লোক সুবিধাভোগীদের স্লিপ দিয়ে নিজেরাই চাল উত্তোলন করছে। এতে ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান বাধা দিলে চাল উত্তোলনকারী আনিছুর রহমান ও তার সহযোগীরা ইউপি সদস্যকে কিল-ঘুষি মেরে ছিলা ফোলা জখম সহ শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করেন।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, আমাদের নিকট থেকে বিভিন্ন সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা নেওয়া হলেও আমাদেরকে চালের স্লিপ দেওয়া হয় না। পরবর্তীতে খোঁজ নিতে গেলে চেয়ারম্যান মেম্বাররা জানায় তালিকায় যাদের নাম আছে শুধু তাঁরাই চাল পাবে। কিন্তু তালিকাতে আমাদের নাম আছে কি না তা জানা বা দেখার কোন সুযোগ নেই। শুধু চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিজেদের লোকদেরকে স্লিপ দিয়ে চাল উত্তোলন করা হয়।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার এলাকার এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নামের স্লিপ নিয়ে আনিছুর রহমান নামে একজন চাল উত্তোলন করতে আসায় আমি বাধা দিলে তিনি ও তার সহযোগীরা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ ও আমাকে কিল-ঘুষি মেরে হাত ও মুখে ফোলা জখম সহ শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করেন। এছাড়া তাকে বাঁধা দেওয়ার আগেও আমি আমার ওয়ার্ডের এরকম ২৫/৩০ টি স্লিপ জব্দ করেছি।
এ বিষয়ে ৩নং সিংড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাত হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, চাল উত্তোলনকে কেন্দ্র করে মারামারির বিষয়টি তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্বের একটি অংশ। ভুক্তভোগীদের নামের তালিকা প্রদর্শনের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, তালিকা প্রদর্শনের বিষয়ে আমাদেরকে তেমন কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে তালিকা ইউএনও ও পিআইও অফিসে জমা আছে। অন্যদিকে চাল কম দেওয়ার বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আমার ইউনিয়নে কাউকে ১০০ গ্রাম চালও কম দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কতৃক বিশেষ বরাদ্দকৃত চাল যেন ঘোড়াঘাট উপজেলার সবচেয়ে অসহায় ও হতদরিদ্র ব্যক্তিরা পায় তা নিশ্চিত করতে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণদের নিয়ে উপজেলাতে মিটিং করা হয়। মিটিং এ সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখে বিতরণের জন্য কঠোর ভাবে নিদর্শনা দেওয়া হয়েছে। নিদর্শনা অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে মর্মে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতার সাথে চাল বিতরণ হচ্ছে, ছোট খাটো অভিযোগ আছে। অভিযোগ সতর্কতার সাথে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।