মঙ্গলবার ● ১৩ আগস্ট ২০২৪
প্রথম পাতা » জাতীয় » অভ্যুত্থানকে সুসংহত করতে ৩৫ ছাত্রসংগঠনের জোট গঠন
অভ্যুত্থানকে সুসংহত করতে ৩৫ ছাত্রসংগঠনের জোট গঠন
ঢাকা্ :: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংহতকরণ, ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিতকরণ ও ১৫ আগস্টে জাতীয় শোক দিবস পালন না করাসহ বিভিন্ন কার্যসূচিকে সামনে রেখে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ছাত্রদল, বাম ও ইসলামী সংগঠনসহ অন্তত ৩৫টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সোমবার রাতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সুসংহত করার লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে লিয়াজোঁ কমিটি একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে ছাত্রলীগ’ ও ছাত্রসমাজ’ ছাড়া বাংলাদেশের সকল ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ অংশগ্রহণ করেন। লিয়াজোঁ কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, সমন্বয়ক মাহফুজ আলম (মাহফুজ আবদুল্লাহ), সদস্য নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী (নাসির আবদুল্লাহ) ও আরিফুল ইসলাম আদিব।
জানা যায়, বৈঠকের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির রাজনীতি করতে পারবে কি না এ নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে অধিকাংশ সংগঠন একমত হয় যে, যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তারা সবাই মিলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি করবে। আগের যে পরিবেশ পরিষদ ছিল সেটি এখন কার্যকর নয়। সংগঠনগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা সরাসরি রাজপথে কেউ কাউকে আক্রমণ করবে না এবং সবাই মিলে গণতন্ত্রের জন্য কাজ করবে।
সভায় জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সুসংহতকরণের লক্ষ্যে ন্যুনতম এক মাস বা পরিস্থিতি অনুযায়ী আরো বেশি সময় সব ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসগুলোতে নিজেদের আলাদা করে কোনো কর্মসূচি দিবেন না, বরং এ আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে রক্ষা করার জন্য এবং সকল ধরণের প্রতিবিপ্লব রুখে দেওয়ার জন্য লড়ে যাবেন; বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে কোন ছাত্র ক্যাম্পাসে বা অন্য কোথাও কারো উপর নির্যাতন, নিপীড়ন, হুমকি কিংবা ট্যাগ-ব্লেইম দিতে পারবে না।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের কোন কর্মী বা নেতা ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবে না বলে নেওয়া সিদ্ধান্তে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া, ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন না করার বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উপস্থিত সকল ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সকল সিদ্ধান্তের সঙ্গে লিখিতভাবে একমত পোষণ করেন।
জাতীয় শোক দিবস নিয়ে বিরোধিতার ব্যাখ্যায় বলা হয়, যেহেতু ১৫ আগস্টকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকে রূপান্তর করা হয়েছে এবং এ দিবসকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে পুনরায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদি কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও অভ্যুত্থান সংহত করার লক্ষ্যে ১৫ আগস্টকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করাটা সমীচীন নয়। নেতৃবৃন্দ জুলাই-আগস্টকে বাংলাদেশের জনগণের শোক, সংহতি ও প্রতিরোধের মাস হিসেবে সাব্যস্ত করেন।
লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, গণ অভ্যুত্থান সংহত হওয়ার আগ পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন চলবেই। এক্ষেত্রে সকল ছাত্র সংগঠন একসঙ্গে কাজ করবে।
এ বিষয়ে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের যে পতন হয়েছে, এখন তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। বিভিন্নভাবে তারা অরাজকতা তৈরি করার চেষ্টা করছে; এর বিরুদ্ধে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমাদের আহ্বান জানিয়েছে। আমরা কতদিন এই ছাতার নিচে থেকে ফ্যাসিবাদের যারা দোসর যারা আবার দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারি; তখন আমরা মতামত দিয়েছি দেশের প্রয়োজনে সকল ছাত্রসংগঠন একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারি এবং দোসরদেরকে বাংলার মাটি থেকে বিদায় করার আগ পর্যন্ত আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।
বৈঠকে বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (রাগিব নাঈম), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (মুক্তি কাউন্সিল), বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (ইউপিডিএফ-মূল), বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিজেএসএস-মূল), বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ (নুর), বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষ, ছাত্র আন্দোলন (এনডিএম), বিপ্লবী ছাত্রসংহতি, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া), বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র মজলিস, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম-মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্র সমাজ (কাজী জাফর), জাগপা ছাত্রলীগ (খন্দকার লুৎফর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র সমাজ, বাংলাদেশ ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্রসমাজ বাংলাদেশ ছাত্রমিশন, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল এবং জুম লিটারেচার সোসাইটির প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ আগস্ট দেশের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত অর্থাৎ অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে পরামর্শদান, সরকার, অংশীজন ও ছাত্রজনতার সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য এবং শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের কথা জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কমিটির অন্যতম ছয় সদস্য হলেন- মাহফুজ আব্দুল্লাহ, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (নাসির আব্দুল্লাহ), আকরাম হুসাইন, ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান, মামুন আব্দুল্লাহ, আরিফুল ইসলাম আদীব। সময় সাপেক্ষে সদস্যের পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।