শুক্রবার ● ২২ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » বাংলাদেশের গৌরব বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রাঙামাটিতে ছিল না কোনো কর্মসূচি
বাংলাদেশের গৌরব বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রাঙামাটিতে ছিল না কোনো কর্মসূচি
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (৮ বৈশাখ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫৯ মিঃ) ১৯৭১ সালে ২০ এপ্রিল বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ তার নিজের অবস্থান থেকে নিজের মেশিনগান দিয়ে শক্রর উপর গোলা বর্ষণ অব্যাহত রাখেন, ফলে শক্রর দুটি লঞ্চ ও একটি স্পিড বোট পানিতে ডুবে যায় এবং ২ প্লাটুন সৈন্য সম্পুর্ণ ধ্বংস হয় ৷ যুদ্ধ চলাকালীন সময় হঠাত্ করেই শত্রু পক্ষের মর্টারের গোলা তার অবস্থানে আঘাত করলে তিনি শাহাদত বরণ করেন ৷ বাবা মুন্সী মেহেদী হাসান মাতা মকিদুননেছার একমাত্র ছেলে সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের মে মাসে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার আওতাধীন সালামাতপুর গ্রামে জম্ম গ্রহণ করেন ৷ ২০ এপ্রিল বুধবার ৪৫তম শাহাদাত্ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বীরশ্রেষ্ঠের বড় বোন মোসা. জোহরা বেগম ও ছোট বোন মোসা. হাজেরা বেগম ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলাধীন বীর শ্রেষ্ঠের জন্মস্থান রউফ নগর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থগারে পারিবারিক উদ্যোগে ভোর ৬টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাড়ে ৬টায় কোরআন খানী এবং বাদ যোহর এক আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল এবং দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন ৷
১১ বছর বয়সে তার পিতৃবিয়োগ ঘটে ৷ এর পর আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া সম্ভব না হওয়ায় তিনি তত্কালীন ইপিআর বাহিনীতে (বর্তমান বিজিবি) ১৯৬৩ সালের ৮ মে সৈনিক পদে যোগদান করেন ৷ তার সৈনিক নম্বর ছিল ১৩১৮৭৷
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি তার উইংয়ে কমর্রত অবস্থায় ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন ৷ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ শহীদ হবার দীর্ঘ ২৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে বুড়িঘাট নিবাসী জ্যোতিষ চন্দ্র চাকমা ও দয়াল কৃঞ্চ চাকমার সহায়তায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ এর কবরের স্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ সরকার ৷ ১৯৯৭ সালে সেখানে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয় ৷ বিগত ২০০৮ সালে ২৮ মে তার নিজ গ্রাম সালামাতপুরের নাম রউফ নগর রাখা হয় ৷ ওই বছরেই তার নামে নিজ গ্রাম রউফ নগরে স্থানীয় সরকার সমবায় মন্ত্রনালয় ফরিদপুর জেলা পরিষদের তত্ত্ববধানে প্রায় ৬৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থগার নির্মাণ করা হয়েছে ৷ স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ন কৃতিত্ত্বের জন্য সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধীতে ভূষিত করেন ৷ এছাড়া তার নামে এলাকায় কামারখালী বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজ যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি করেছেন ৷ গন্ধখালী বীরশ্রেষ্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়, সাভারে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ গেটই, ঢাকায় বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আব্দুর রউফ রাইফেলস স্কুল এন্ড কলেজ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকেই তিনি অষ্ঠম ইষ্ঠ বেঙ্গল রেজিমেন্টোর মেশিন গানার হিসেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার মহালছড়ি এলাকায় নৌ-পথে প্রহরারত ছিলেন ৷
২০শে এপ্রিল শত্রু পক্ষের দ্বিতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়ন তারঁ প্রতিরক্ষা এলাকায় ঢুকে পড়লে শহীদ হন ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ ৷ সে সময়ে মহালছড়িতে তার মৃতদেহ সমাহিত করা হয়েছে ৷
বুধবার ২০ এপ্রিল ছিল বাংলাদেশের গৌরব বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের গৌরব বীরশ্রেষ্ঠ’র সমাধিস্থল এলাকা নানিয়ারচরে রাঙামাটি জেলায় স্থানীয় প্রশাসনের ছিল না কোনো আয়োজন ৷ তবে তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি ৷ স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হলেও মৃত্যুবার্ষিকীতে থাকে না কোনো কর্মসূচি ৷
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুনীল কান্তি দে এই দিনটিতে কোনো আনুষ্ঠানিকতা না থাকাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, সরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকতা পালনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল ৷ তিনি বলেন, সংগঠনের উদ্যোগে আমরা আগামী ২৮ এপ্রিল শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিব ৷ সে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরা হবে ৷