শুক্রবার ● ৮ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অর্থযোগানদাতা আ.লীগের দোসর বাবুল-রহমানের ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অর্থযোগানদাতা আ.লীগের দোসর বাবুল-রহমানের ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই
বিশেষ প্রতিনিধি :: বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনকারীদের উপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ দ্বারা হামলার মূল অর্থযোগানদাতা-পরিকল্পনাকারী খোরশেদ আলম বাবুল ও আবদুর রহমান এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বীরদর্পে। অদৃশ্য কারণে এখনো অধরা রয়েই গেছে।
জানা যায়, গত ১৭ জুলাই শিক্ষার্থীরা যখনই উখিয়ার কোর্টবাজার স্টেশনে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সেসময় বর্তমান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে আন্দোলন বানচালের পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন কোর্টবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সভাপতি খোরশেদ আলম বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। বাবুলের আপন ছোট ভাই মারুফ হোসেন খোকা উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী যুগ্ম আহবায়ক। নিজের ভাইকে নেতা বানানোর উদ্দেশ্যে কেন্দ্রের কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার পরিকল্পনায় করে ছিলো একাধিক গোপন বৈঠক করে। বৈঠক গুলো প্রকাশ্যে ও গোপনে অনুষ্ঠিত হয় দোকান মালিক সমিতির আরব সিটি সেন্টারে অবস্থিত কার্যালয়ে।”
সূত্র জানায় ,”বৈঠকটি খোরশেদ আলম বাবুলের ইশারায় ও যোগসাজশে ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক তারই আপন ছোট ভাই মারুফ খান খোকার নেতৃত্বে কোর্টবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নির্দেশনা ও সিন্ধান্ত ছিলো, যেকোনো মূল্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে হবে। সেজন্য দেশীয় অস্ত্র সহ যা যা দরকার তার অর্থ যোগান দোকান মালিক সমিতির পক্ষে থেকে দেওয়ার জন্য হবে। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর নির্দেশে ও কোর্টবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বাবুল ও আবদুর রহমান তাদের নিজস্ব ফান্ড থেকেও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার মৌখিক আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়।”
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাবুল সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর কোটবাজার, সোনারপাড়া বাজার ও মরিচ্যা বাজার এলাকার অঘোষিত ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ী মনে করতেন না বলে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। নিজেকে আওয়ামী লীগের এজেন্ট দাবি করে গড়ে তুলেছেন উখিয়া উপজেলা দোকান মালিক সমিতি নামে আরও একটি আওয়ামী লীগ অনুসারী সংগঠন। সেই সংগঠনেরও সাধারণ সম্পাদক হলেন খোরশেদ আলম বাবুল। বিএনপি অফিস ভাংচুর, সাধারণ মানুষ হত্যা সহ একাধিক মামলার প্রধান অভিযুক্ত বহু অপকর্মের হোতা জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে এই সংগঠনের করা হয় প্রধান উপদেষ্টা। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের দলীয় কর্মকাণ্ড চালানো জন্য এবং সদ্য সম্পন্ন হওয়া উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ব্যয় নির্বাহের জন্য জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী নাম ভাগিয়ে প্রত্যেক স্টেশন দোকান মালিক সমবায় সমিতির নিকট থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই বাবুল। যার আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।
এদিকে, কোর্টবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ছিলেন বাবুলের অন্যতম প্রধান সহযোগী ও কোটবাজার এলাকার আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনী প্রধান। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দিনের ভোট রাতে নিয়ে নেওয়ার স্বঘোষিত ভোট ডাকাত ও বৈষম্য বিরুধী ছাত্র-জনতার উপর হামলার অভিযোগে একাধিক মামলার পলাতক আসামি হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর সাথে ঘনিষ্ঠ সখ্যতার সূত্র ধরে ব্যবসায়ীদের সাথে সিন্ডিকেট করে উখিয়ায় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগে ফেলতেন রহমান। যা এখনও অব্যাহত রেখেছে আবদুর রহমান। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারন বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কার্যালয় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গোপন আস্তানা হিসেবে পরিচিত ছিলো। যার মূলনায়ক পরিকল্পনাকারী ছিলেন চেয়ারম্যান ইমরুলের ম্যানেজার হিসাবে খ্যাত আব্দুর রহমান।
অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে বাবুল-রহমান সিন্ডিকেট যেনো আওয়ামী লীগের এজেন্ডা ও দলীয় কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে মরিয়া ছিলেন। তারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফুল দেওয়ার হিড়িক পড়ছিলো। অথচ সেসময়ে তারা বিএনপি-জামায়াত নেতার দ্বারে কাছেও যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাধারণ ব্যবসায়ী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে দীর্ঘদিন থেকে।
বাবুল-রহমানের কথার সাথে একমত না হলে আওয়ামী লীগ এক প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে জীবননাশের মৌখিক হুমকিও দেওয়া হতো বলে জানা যায়। সমিতির নির্বাচন আসলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নিজেরা গড়ে তুলেন একটি প্যানেল। ঐ প্যানেলকে বিজয়ী করার জন্য জোরপূর্বক হুমকি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ভোট আদায় করতো বাবুল-রহমান গংরা। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ করার সাহস পেতো না। স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি কক্স নিউজে ইতিপূর্বে ইউনুস খান নামের এক ফেইসবুক ব্যবহারকারীর স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়।
ইউনুস লিখেছেন,”কোর্টবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রহমানেের পদত্যাগ দাবি জানাচ্ছি। উনি ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতা করে ছিলেন।”
আক্তার কামাল নামের আরেক ফেইসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন,”এমপি বদির ক্যাশিয়ার খোরশেদ আলম বাবুল এখনো কিভাবে বৃহত্তর কোর্টবাজার স্টেশনে রাজত্ব করে?”
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের চলাকালীন সময়ে খোরশেদ আলম বাবুলের আপন ভাই উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক মারুফ হোসেন খোকা শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে ফেইসবুকে লিখেছিলেন,”ওয়ার্ড ভিত্তিক তালিকা করা হচ্ছে, প্রশাসন কর্তৃক উপবৃত্তি দেওয়া হবে।”
বর্তমানে মারুফ ভারতে পালিয়ে রয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মারুফ আদনাদের উখিয়া উপজেলার ক্যাশিয়ার হলেন ছাত্রলীগে যুগ্ন আহবায়ক খোকা। আন্দোলন চলাকালীন নিয়মিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অর্থ জোগান দিয়ে দেশীয় অস্ত্র মজুদ রেখে সমিতির অফিসকে ছাত্রলীগের গোপন ও নিরাপদ আস্তানা বানিয়েছিলেন বাবুল-রহমান গং।
গেল ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এসব অপকর্মে জড়িতরা গা ঢাকা দিলেও আস্তে আস্তে নানা কৌশল অবলম্বন করে আবারও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এ অর্থ যোগানদাতারা। কিন্তু এই দুই জনের কারও দলের পোস্ট পদবি নেই, আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা ও সুবিধাভোগী এবং জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর আশীর্বাদপুষ্ট ব্যবসায়ীক নেতা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে লোকমুখে।
তবে, পট পরিবর্তনের পর নিয়মিত বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাজিরা দেওয়ার হিড়িক পড়েছে বহু অপকর্মের হোতা, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বাবুল-রহমানদের। তাদের এমন রূপবদলের বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এখানে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার, স্বার্থের জন্য তাদের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের পা চাটার জন্য ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাজিরা দেওয়ার জন্য নয়। সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি হাজিরা দেওয়া তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য যায়। যা ব্যবসায়ীদের কোনো কল্যাণে আসছেনা মনে করছেন তারা। অবিলম্বে, বহু অপকর্মের হোতা খোরশেদ আলম বাবুল ও আব্দুর রহমান সহ তাদের সহযোগীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কোটবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ঢেলে সাজানোর অনুরোধ ও দাবী জানান সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
এই ব্যাপারে অভিযুক্তদের একাধিকবার ফোন করা হলেও মোবাইল রিসিভ না তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।