সোমবার ● ২৫ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও রাঙামাটি সরকারী মেডিকেল কলেজ দ্রুত চালুর কাজ থমকে যেতে পারে
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও রাঙামাটি সরকারী মেডিকেল কলেজ দ্রুত চালুর কাজ থমকে যেতে পারে
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (১২ বৈশাখ ১৪২৩ বালা : বাংলাদেশ সময় রাত ২.৩৩ মিঃ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও রাঙামাটি সরকারী মেডিকেল কলেজ দ্রুত চালুর কাজ থমকে যেতে পারে। রাঙামাটিতে ৪ শতক জায়গা কিনে ৩০ শতকের মালিক মৃদুল দত্ত নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ৷ রাঙামাটি শহরে বেশ কয়েক বছর যাবত সংঘবদ্ধ একটি চক্র হ্রদের পাড়ে সামান্য জায়গা কিনে সেখানে আবাসিক বাসস্থান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে প্রতিনিয়ত ৷ তেমনি রাঙামাটি সরকারী হাসপাতাল এলাকার সংঘবদ্ধ চক্রের একজন ভুমিদস্যু সুদের ব্যবসায়ী মৃদুল দত্ত ৷ কালিন্দীপুর এবং হাসপাতাল এলাকার মধ্যস্থানে বাংলাদেশ মত্স্য উন্নয়ন কর্পোরেশন যে স্থানে বাঁধ দিয়ে মত্স্যচাষ করছে সে বাঁধের দক্ষিণ পাশে মাত্র চার শতক জায়গা কিনেছিলেন মৃদুল দত্ত ৷ কেনা জায়গা খালী অবস্থায় ফেলে রেখে তিনি বাঁধের একটি অংশের জায়গাতে তার বসতবাড়ি গড়ে তুলেন ৷ জানা গেছে মৃদুল দত্তের এই দখলবাজির সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক মধ্যম সারির নেতা জড়িত রয়েছে ৷ খরা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়াতে মৃদুল দত্ত কাপ্তাই হ্রদের (নদীর) প্রায় ত্রিশ শতক জায়গা দখল করে সম্প্রসারন করেই চলেছেন তার বসতবাড়ি ৷ গত ৪ দিন ধরে মৃদুল দত্ত সরকারী টাকায় নির্মিত বাঁধের অংশের মাটি কেটে ভরাত করছেন নদীর তলদেশ ৷ সরকারী টাকায় নির্মিত বাঁধের মাটি কেটে ফেলার ফলে বর্ষা মৌসমে বৃষ্টি পানির প্রবল চাপে বাঁধটি ধ্বসে যাওয়া সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ৷ এই বাঁধের ওপর দিয়ে নির্মিত হবে সেতু যা নদীর অপর প্রান্তে হ্যাচারী এলাকায় চলতি বছরে একনেক এ পাশ হওয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫ একর জায়গাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও রাঙামাটি সরকারী মেডিকেল কলেজ সংযোগ সড়কে স্থাপিত হবে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ টিপু সুলতান ৷
রাঙামাটি পোষ্ট অফিস হয়ে রাঙামাটি সদর হাসপাতাল এবং নিউ মার্কেট হয়ে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে জরুরী রোগী নিয়ে যাতায়াত ও জনসাধারনের চলাচলের জন্য এই বাঁধটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই বাঁধটি কালিন্দীপুর ও হাসপাতাল এলাকার মধ্যে সেতু হিসাবে কাজ করছে ৷
বাঁধটি এই অংশের মাটি কাটার ফলে ধ্বস নামলে রাঙামাটি পৌরবাসীরা যেমন ক্ষতির সম্মুখিন হবে তার চাইতে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও রাঙামাটি সরকারী মেডিকেল কলেজ দ্রুত চালু করার কাজ, থমকে যাবে এই সরকারের সময়কালের ভিতর মেডিকেল কলেজ চালুর সম্ভাবনা ৷
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ মত্স্য উন্নয়ন কর্পোরেশন ও স্থানীয় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারোরই মাথাব্যাথা নেই ৷ অথচ রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ দিনরাত ২৪ ঘন্টা এ বাঁধের গোড়ায় পাহারা দিচ্ছে, আর বাংলাদেশ মত্স্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের দেখভাল করার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারীর চোখের সামনে হ্রদ দখল করেছেন এই মৃদুল দত্ত ৷
যেন রাঙামাটি শহর হয়ে উঠেছে অবৈধ দখলদার ও কাপ্তাই হ্রদ দখলদারদের স্বর্গরাজ্য ৷ তাইতো রাঙামাটি ২৯৯ আসনের সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার পিসিজেএসএস সমর্থিত (স্বতন্ত্র) ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু দু’জনই অবৈধ দখলদার, বেআইনী ভাবে মাটি কাটা ও কাপ্তাই হ্রদের জায়গা দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত মুখ খুলেন নি ৷ রাঙামাটি শহরে মাত্র ৪ শতক জায়গা কিনে রাতারাতি ৩০ শতকের মালিক বনে যাওয়া এবং জনস্বার্থে নির্মিত বাঁধের মাটি কাটার বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মোবাইলে বার বার ফোন দিলেও দু’জনেই প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেন নি ৷
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক নেতাদের খুশি রাখতে তারাও এসব ভুমি দস্যুদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করছেন ৷ রাঙামাটি জেলার স্থানীয় প্রশাসন চাইলে পরিবেশ দূষন আইনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে কাপ্তাই হ্রদের জায়গা উদ্ধার করতে পারে ৷ ১৯৬০ সালে নির্মিত কাপ্তাই বাঁধের ফলে সৃষ্টি হয় কাপ্তাই হ্রদ ৷ ৫৬ বছরে কাপ্তাই হ্রদটি বর্ষা মৌসুমে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির সাথে পলিমাটি ও পরিবেশ দুষনকারীদের প্রতিনিয়ত ময়লা আবর্জনায় সীমিত হয়ে আসছে মুল কাপ্তাই হ্রদটির অংশ ৷ আগামী ২০ বছরে কাপ্তাই হ্রদটি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ৷
কাপ্তাই হ্রদটি বাঁচাতে প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের লীলাভুমি বলে খ্যাত পর্যটন নগরী রাঙামাটি শহরে বেআইনীভাবে হ্রদের পাড়ে গড়ে তোলা সকল স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা ৷