বুধবার ● ২০ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাউজানে যে হাটে বিক্রি হয় মানুষ
রাউজানে যে হাটে বিক্রি হয় মানুষ
আমির হামজা, রাউজান প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের রাউজানে রোপা আমন মৌসুমকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে শ্রম বিক্রি হাট। উপজেলার পৌরসভার ফকিরহাট বাজারের ডাক বাংলো মোড়ে রবিবার সাপ্তাহিক বাজারে দেখা যাই এখানে দরাদরি করে বিক্রি হচ্ছে মানুষের শ্রম। টাকার বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করতে এই বাজারে দেশের বিভিন্ন জায়গা হতে জড়ো হন হাজারও মানুষ। গত রবিবার দুপুরে উপজেলার মানুষ বিক্রির সেই হাটে গিয়ে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বাজারে সব কিছুর দাম বাড়লেও, তাদের শ্রমের দাম বাড়েনি। দেশের বিভিন্ন জায়গা হতে অভাবী মানুষ ছুটে এসেছেন নিজেকে বিক্রি করে দিতে। তবে অসংখ্যা শ্রমিকের চোখে-মুখে হাজারটা অসহায়তার ছাপ দেখা গেছে। এই হাটে কেউ আসেন বিক্রি হতে, আর কেউ আসেন মানুষ কিনতে। অভাবের সংসারে একটু সুখের আলো দেখাতে আর দুবেলা দুমুঠো খেয়ে জীবন বাঁচাতে, কাজের খোঁজে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষগুলো ভিড় করেন এই শ্রম বেচাকেনার হাটে। এই মানুষ বিক্রি হাটে চলে ব্যাপক দরকষাকষি। বাজারের পণ্যের মতো করে নির্দিষ্ট দামে বিক্রি হয় হাটে আসা শ্রমিকগুলো। সাপ্তাহে বাজারে দু’দিন শ্রম বিক্রি করতে আসা মানুষের উপস্থিতিতে ব্যাপক সরগরম হয়ে উঠে রাউজানের ফকিরহাট বাজার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই হাটে মানুষ বেচাকেনা। এই হাটে শ্রম বিক্রি করতে আসা দক্ষিণ হাতিয়ার সংকর দাশ বলেন, অভাবের কারণে এই হাটে নিজেকে বিক্রি করতে এসছেন। কিন্তিু ধানের কাজের মধ্যে অনেক বেশি পরিশ্রম হলেও, সেই পরিমাণে পারিশ্রমিক নেই। যে আশা নিয়ে অনেক দূর হতে এখানে এসেছি সেই পরিমাণ অর্থ নেই মাত্র ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় দাম পাচ্ছি। বাজারে এখন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। কিন্তু আমাদের পারিশ্রমিক বাড়ছেনা। নোয়াখালী চরবাটা থেকে আসা ৬৫ বছর বয়সী শ্রমিক আবুল হোসেন বলেন, কি করবো বাবা এই বয়সে এখনো পরিশ্রম করতে হচ্ছে। অভাবের সংসার বাধ্য হয়ে কাজ করতে এখানে এসেছি। ধানের কাজ করে কিছু টাকা বাড়িতে নিয়ে যেতে পারলে, কিছুদিন হয়তো কিছুটা ভালো করে জীপনযাপন করা যাবে। তবে বয়েস বেশি দেখে অনেকে কাজে নিতে চাইনা। অপেক্ষায় আছি কবে বিক্রি হয়ে মানুষের কাজে যোগদান করে কিছু টাকা রোজগার করব। তিনি আরও বলেন, সংসারের সবার মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দেওয়ার জন্য এই বয়সে যুদ্ধে এসেছি। এখান থেকে খালি হাতে ঘরে ফিরলে পরিবারের সবাইকে কষ্টের দিন পার করতে হবে। প্রতিবছর ধানের কাজের মৌসুম আসলে কাজ করতে চট্টগ্রামে চলে আসি। এই বাজার থেকে শ্রমিক কিনতে আসা লোকজন বলেন, বর্তমান সময়ে বাজারে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে, সেই পরিমাণ হাটে শ্রমিকের দাম বাড়েনি। বাজারে মানুষের দাম কিছুটা কম। তবে এখান থেকে কাজে যাওয়া মানুষগুলো বেতনের পাশাপাশি দু’বেলা খাবার ও চা নাস্তা দেন মালিকপক্ষ। এই বাজারে শ্রম বিক্রি করতে আসা মানুষগুলো রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হয়ে কাজে যোগদান করেন। উত্তর চট্টগ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বড় মানুষ বিক্রির হাট বসে রাউজানের ফকিরহাট বাজারে। আমন ধানের মৌসুমে এই বাজারে মানুষ কেনাবেচা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ সরগরম থাকে। আবার অনেকে শ্রমিক অবিক্রিত থেকে যাই। তাদের অপেক্ষা করতে হয় পরেরদিনের নতুন সকালের আশায়।