মঙ্গলবার ● ২৬ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » কাশিমপুর কারাগারে দুর্বৃত্তদের গুলিতে কারারক্ষী নিহত
কাশিমপুর কারাগারে দুর্বৃত্তদের গুলিতে কারারক্ষী নিহত
গাজিপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রিয় কারাগারে অবসরপ্রাপ্ত এক কারারক্ষী দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছেন৷
২৫ এপ্রিল সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রিয় কারাগারের প্রধান ফটক থেকে কিছু দূরে এ ঘটনা ঘটে৷
নিহত কারারক্ষীর নাম মোঃ রুস্তম আলী (৬০)৷ তিনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার চড়কগাছিয়া গ্রামের আঃ মান্নানের ছেলে৷ তিনি কাশিমপুর মহিলা কারাগারের কারারক্ষী ছিলেন এবং গত ৪ নভেস্বর অবসরে (এলপিআর) যান বলে জানা গেছে৷
কাশিমপুর কারাগার-২এর জেলার নাশির আহমেদ আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, কারারক্ষী রুস্তম আলী কারাগারের প্রধান ফটক থেকে আনুমানিক ২৫০ গজ দূরে আহমদ মেডিসিন কর্ণার নামের একটি ঔষধের দোকানে বসে ছিলেন ৷ এমন সময় তাকে গুলি করে তিন দুর্বৃত্ত একটি মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ এতে সাবেক কারারক্ষী রুস্তম আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান৷ কোনাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন রুস্তম আলীকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত ডাক্তার রঞ্জিত কুমার পাল তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
ওই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ আবদুস সালাম সরকার আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে৷ নিহতের বুকে, হাতে এবং গালে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে৷ ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে৷
নিহতের স্ত্রী নাসরিন আক্তার আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, তারা কারাগারের কোয়াটারে বসবাস করে৷ সকাল নয়টা দিকে তিনি বাজার করার উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হন৷ পরে বাজার করে বাড়িতে আসেন৷ আবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রেশনের চাল বিক্রি করতে বের হয়ে যান৷
নিহতের ছোট ভাই শাহ্ আলম আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, ওই দোকানে বসা থাকা অবস্থায় অনত্মতঃ ৪ রাউন্ড গুলি করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়৷ পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়৷ তিনি আরও জানান, রুস্তম আলীর মাষ্টার্সে পড়ুয়া নাহিদা আক্তার নামে একটি মেয়ে রয়েছে৷
এদিকে কারাগারের সামনে দুর্বৃত্তের গুলিতে কারারক্ষী নিহতের ঘটনার পর সোমবার দুপুর পৌণে ২টার দিকে কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন৷ এবং নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন৷
পরিদর্শন শেষে তিনি আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, হত্যার সাথে কোন জঙ্গী তত্পরতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ তবে কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে কারারক্ষীকে হত্যা এটা খুবই দুঃখজনক৷
এসময় মহাপরিদর্শকের সাথে গাজীপুর জেলা প্রসাশক এম এম আলম, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আলী হায়দার, কাশিমপুর কারাগার-২এর জেলার সুব্রত কুমার বালা, পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন সহ প্রসাশনের উর্ধতন কর্মকর্তা কর্মচারীসহ অসংখ্য কারারক্ষী উপস্থিত ছিলেন৷
এদিকে ঘটনাস্থলে এখনো ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে৷ ঘটনার পরপরই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে৷ পুলিশ ঘিরে রেখেছে ঘটনাস্থল৷
এ ঘটনায় আহমেদ মেডিসিন কর্ণারের মালিক সাইফুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ৷
নিহতের ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশ এবং কারা কর্তৃপক্ষ দুটি তদন্ত কমিটি : গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলাইমানকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পুলিশ সুপার মো. মনোয়ার হোসেন, গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আমির হোসেন এবং জয়দেবপুর থানার ওসি (তদনত্ম) মো. মাহফুজুর রহমান ৷ দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷
অন্যদিকে গাজীপুর জেলা কারাাগারের জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দারকে প্রধান করে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. মিজানুর রহমান, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ১-এর জেলার দেওয়ান মোঃ তারিকুল ইসলাম৷গঠন করেছে৷