মঙ্গলবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » কৃষি » রাউজানে মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে শীতকালীন সবজি
রাউজানে মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে শীতকালীন সবজি
আমির হামজা, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের রাউজানে রোপা আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকদের মাঝে। শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপন ও পরিচর্যায় এ উপজেলার কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরজমিনে দেখা যায়, কেউ নতুন করে বীজ রোপণ করতে জমি প্রস্তুত করছেন। কেউ সবজি খেতের আগাছা পরিষ্কার করে জমিকে উপযোগী করে তুলছেন। আবার অনেক রোপন করা কৃষি ফসলকে পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক ছিটানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বলা যেতে পারে একটু বাড়িতে লাভের আশায় শীতকালীন সবুজ শাকসবজি উৎপাদনে মাঠে মাঠে চলছে কৃষকদের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দেখা গেছে শস্যভাণ্ডার খ্যাত পৌর এলাকার কাঁশখালী, হলদিয়ার হচ্চার ঘাট, ডাবুয়া সর্তা খালের দু’পাড়ে ব্যাপক হারে এ উপজেলায় সবজি চাষ হচ্ছে। এছাড়াও প্রায় ১৪টি ইউনিয়নে প্রতিটি ফসলি জমিতে এখন শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ হচ্ছে। আগাম সবজি চাষে মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক কৃষাণীরা। জানা গেছে, রাউজানে কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই উপজেলায় কৃষি বিভাগের পরিকল্পনায় বাড়ছে নতুন নতুন ফসলের আবাদ। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এখানকার কৃষকরা লাভজনক ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছেন। সেই সাথে বাড়ছে বিদেশি ফল চাষের আগ্রহ। ইতিমধ্যে এখানে ভিয়েতনামী মাল্টা, কফি, বারোমাসি আম, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, মেলন, পেয়ারা, চিয়াশিট, দারুচিনি, কাজুবাদাম, রাজশাহীর আম রুপালিসহ এ ধরনের ফলের ব্যাপক আবাদ হচ্ছে। বলা যেতে পারে কৃষির জন্য এই উপজেলার মাটি উর্বর। উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কৃষককে কৃষি প্রণোদনার আওতায় উন্নত জাতের বীজ ও সার এবং বিকাশে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ করে এখানকার কৃষকদের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেয়ার পাশাপাশি শীতকালীন লাভজনক ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সনজিব কুমার সুশীল বলেন, সারাদেশে সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে শীতকালীন সবজির আমাদের বাজারে চাহিদা অনেক বেশি। তাই এ উপজেলার কৃষক পরিবারগুলো অধিক লাভের আশায় আগাম সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তিনি আরও জানান, সারা দেশে কৃষকের প্রায় ২০% ফসল নষ্ট করে ইঁদুর। রাউজানে কৃষকের ফসল বাঁচাতে কৃষি অফিস হতে ইঁদুর মারার ফাঁদ বিতরণ করা হয় কৃষকদের মাঝে। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র প্রান্তিক ৪ হাজার ৩ শত ৪০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে শীতকালীন শাক-সবজির বীজ, সার ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে খরিপ-২ মৌসুমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও কৃষাণীদের মাঝে রবি মৌসুমে চাষাবাদের জন্য প্রথম প্রণোদনায় ৭’শত জন কৃষক কৃষাণীকে উফশী জাতের ২০ প্রকার শাক-সবজির বীজ ও প্রতিজনকে বিকাশের মাধ্যমে নগদ ১ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ৩ হাজার জন কৃষক কৃষাণিদের মাঝে হাইব্রিড জাতের শাক সবজির বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার ও বিকাশের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা করে নগদ টাকা বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ৬ শত ৪০ জন কৃষককে রবি মৌসুমে প্রণোদনা হিসাবে বিতরণ করা হয় গম, সরিষা, চিনা বাদাম, সূর্যমূখী, শীত কালিন পিয়াজ, মুগ ও ফেলন বীজ। বিনামূল্যে শীতকালীন শাক সবজির বীজ, সার ও নগদ অর্থ সহায়তা পেয়ে খুশি এই উপজেলার কৃষক-কৃষাণী। জানা গেছে, এই প্রণোদনা ছাড়াও আরও ৩টি প্রণোদনা দেওয়া হবে কৃষকদের মাঝে। তারমধ্যে রবি ফসল মৌসুমে ৬৪০ জন কৃষক-কৃষাণী পাবেন সার, বীজ। বোর ও উফশী মৌসুমে ২ হাজার ৮’শ জন কৃষক পাবেন বীজ ও সার। এবং ১ হাজার ৮’শ জন কৃষক পাবেন বোর ও উফশী সার ও বীজ। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বলেন বাজারে যেকোনো ফসল আগাম উৎপাদন করা গেলে বাজার অনেক বেশি চাহিদা থাকে। এতে যে পরিমাণ পরিশ্রম হয় সেই অনুপাতে মুনাফাও অনেক বেশি পাওয়া যাই। অল্প সময়ে কম খরচে ভালো লাভ পাওয়া যাই ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা ও বেগুনে।
এব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে কীটনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এ উপজেলার কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষ করে যাতে লাভবান হতে পারেন এবং কোনো রকমের সমস্যায় না পড়েন এজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। এবার রাউজান জুড়ে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ হচ্ছে।