শুক্রবার ● ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালের টেন্ডার যুবলীগ নেতার ফার্মে দেওয়ার পাঁয়তারা
গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালের টেন্ডার যুবলীগ নেতার ফার্মে দেওয়ার পাঁয়তারা
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার :: গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদার দুই যুবলীগ নেতার চারটি ফার্মকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে।
গত বছরের ১২ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় হাসপাতালের বিভিন্ন চাহিদার বিপরীতে পাঁচটি প্যাকেজের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী ৫ টি টেন্ডারের ১৭ টি সিডিউল বিক্রি হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি দরপত্রটি দাখিল করে। পরে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেন কমিটির আহ্বায়ক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। টেন্ডার কমিটি যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকার কারণে বিধিমোতাবেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোঃ আমিনুল ইসলামকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা সত্তেও তিনি ফ্যাসিস্ট সহযোগী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা এবং ফ্যাসিস্ট সহযোগী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর মেসার্স সিদ্দিকী এন্টারপ্রাইজ ও তার স্ত্রী রাশিদা আক্তারের মেসার্স তুলক এন্টারপ্রাইজ, আরেক যুবলীগ নেতা এবং ফ্যাসিস্ট সহযোগী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি মোঃ আমজাদ হোসেন পলাশের মেসার্স মিয়া এন্টারপ্রাইজ, তার স্ত্রী’ রোকসানা আক্তারের মেসার্স আশা টেডার্সকে কাজ দেওয়ার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মূল্যায়ন কমিটির এক সদস্য জানান, যারা টেন্ডার জমা দিয়েছে তাদের কয়েকজনের ট্রেজারি চালানের কপি না থাকা, ২৪-২৫ অর্থ বছরের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না থাকা ও সিডিউল পূরণ না করার অভিযোগ তোলা হয়। যা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার জানান, হাসপাতালের পরিচালক ফ্যাসিস্ট সহযোগী কয়েকজন অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে বিগত সরকারের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতাদের চারটি ফার্মকে কাজ দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এরাই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে লুটপাট করে খেয়েছে। আবারো তাদের কাজ দেওয়ার জন্য হাসপাতালের কয়েকজন বাকিদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় একাধিক ঠিকাদার বলেন, গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে চারটি ফার্ম এই ১৭ বছরে মেডিকেল লুটপাট করে খেয়েছে। এখানে অন্য কাউকে কোন টেন্ডার দিতে দেয়নি। ওদেরই চারটি ফার্ম দিয়ে টেন্ডার গুলো নিয়েছে। অন্য কোন ফার্ম কে সিডিউল কিনতে দেইনি, কোনভাবেই কিনলেও তা জমা দিতে দেয়নি। এখানে সম্পূর্ণ ইনজাস্টিস হয়েছে। তারা প্রভাব খাটিয়ে কাজ নিয়েছে, বাজার রেট যা ছিলো তার চেয়ে ডাবল রেট দিয়ে লুটপাট করে খেয়েছে। জেলের ছেলে মাছ বিক্রি করে চলতো তানভীর সিদ্দিকীর। এখন অঢেল সম্পদের মালিক তানভীর। অপর ঠিকাদার আমজাদ হোসেন পলাশের বাবা গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারী ছিলো, টং দোকানে চা বিক্রি করতো। এখন তার পরিবার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ছয়তলা বাড়ি সহ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদার বলেন আমাদের এই হাসপাতালে কোন অন্যায়, অনিয়ম, অবিচার, জুলুম হোক এটা আমরা চাই না।
এ বিষয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার নিজের কোন লোক নেই, আমি শ্রীপুরের মানুষ। আমার কাছে মানুষ আসছে আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। এটা কন্ট্রাকটরদের বিষয়, এটাতে আমি জড়াবো না। এখানে ৫১ টি কোম্পানি টেন্ডার জমা দিয়েছে, এদের মধ্যে অনেকেরই কাগজের ভুল ছিল। সার্কুলারে ছিল এমন প্রয়োজনীয় কাগজ ছিল না।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন প্রথম আউটসোর্সিং এর টেন্ডার কল করলাম তখন ৯০ প্লাস সিডিউল বিক্রি হয়েছে। সেখান থেকে বিধি মোতাবেক যে যেই কাজ পায়, সে সেই কাজ পেয়েছে। এখন আইন আদালত যেখানে যাও কোন সমস্যা নেই। এবার সেকেন্ড টেন্ডারের ওটিএম করা হয়েছে, যার যার কেনার দরকার হয়েছে কিনেছে, এখানেও বিধি মোতাবেক যার কাজ পাওয়ার কথা, ইভালুয়েশন চলছে, সুপারিশ আসলে সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।