

শনিবার ● ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাউজানে ব্যবসায়ী হত্যা : পরিবার বলছেন মামলা করলে, আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে ?
রাউজানে ব্যবসায়ী হত্যা : পরিবার বলছেন মামলা করলে, আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে ?
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের রাউজানের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনার একটি সিসিটিভির ফুটেজ পুলিশ হাতে পেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তার কোনও ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে করে স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্বজনদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তবে পুলিশ বলছেন নিহতের পরিবার মামলা করতে থানায় আসার কথা থাকলেও এখনো আসেনি। মামলা না করার কারণে আমরা আসামিদের গ্রেফতার করতে এগুতে পারাচ্ছি না। নিহতের পরিবারকে হত্যার ঘটনায় থানায় এজাহার দায়ের করতে অনেকবার খবর দেওয়া হলেও তারা থানায় আসেননি। নিহতের ভাই দিদারুল আলম বলেন, আমার ভাইকে দিন দুপুরে সবার সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
আজ এক সপ্তাহে চলে যাচ্ছে কিন্তু পুলিশ আমার ভাইয়ের ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনো আটক করতে পারেনি। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের সিসিটিভির ফুটেজ হাতে পেয়েছেন। এরপরও কেন কারা এতো বড় একটি ঘটনায় জড়িত আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। তিনি বলেন প্রশাসনের পক্ষেহতে আমরা কোনো প্রকার বিশেষ ভূমিকা পালন করতে দেখছিনা।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের মামলা করে কি লাভ হবে। রাউজানে প্রায় সময় গোলাগুলি ঘটনা ঘটছে। গোলাগুলিতে অনেকেই আহত হচ্ছে। কিছু কিছু ঘটনার থানায় মামলা হলেও, পুলিশ কাউকে আটক করতে দেখা যাইনি। পুলিশ যদি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন তাহলে আজকে আমার ভাইকে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হতে হতো না। আমরা জানি, থানায় মামলা করলেও আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার সঠিক বিচার পাবো না। মূলত এই কারণে মামলা করছি না। মামলা করলে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে। আমার ভাই হত্যার বিচার আল্লাহর কাছে দিয়েছি। তিনি একদিন না একদিন এই বিচার করবেন। ইনশাআল্লাহ’। নিহতের বড় ছেলে মাকসুদ আলম বলেন, আমার বাবা একজন ভালো মানুষ যেমন ভালো ব্যবসায়ী ছিলেন, তেমনি তিনি সমাজে একজন দানবীর ছিলেন। কেমন আমার বাবাকে তারা হত্যা করতে পারে! সমাজে কি ভালো মানুষের জায়গা হবেনা? দিনদুপুরে বাবাকে ওপেন সন্ত্রাসীরা হত্যা করে। এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছি। তাহলে কিসের স্বাধীন। স্বাধীন দেশে কিভাবে একজন ভালো মানুষকে চাঁদার জন্য হত্যা করতে পারে। আমি আমার বাবার এই হত্যার বিচার চাই। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার দেখে যেন আর কেউ এই ধরনের হত্যা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত না হয়। যেন আর কেউকে বাবা হারা হতে না হয়।
এ বিষয়ে রাউজান থানার ওসি একেএম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, নিহতের পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে থানায় আসবেন বলেও এখনও আসেনি। নিহতের পরিবার থেকে যদি মামলা না করেন তাহলে আমরা কীভাবে আসামি গ্রেফতার করবো। তিনি বলেন নিহতের অনেক স্বজন আছে, যদি কেউ না থাকতো তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতো। এরপরও পুলিশ বসে নেই। হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, গত
শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি দুপুরে চট্টগ্রাম শহর হতে জুমার নামাজ পড়তে নিহত জাহাঙ্গীর আলম নিজ গ্রামের বাড়িতে মোটরসাইকেল করে মসজিদে যাওয়ার পথে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তার উপর অতর্কিত ভাবে হামলা করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। পরে তাকে মাথায় গুলি করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যান। এসময় জাহাঙ্গীরকে বাঁচাতে মুসল্লীরা এগিয়ে এলে তাদের উপর ফাঁকা গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসীরা। উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের আছদ আলী মাতুব্বরের বাড়িতে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আব্বাস উদ্দিন নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। নিহত মো. জাহাঙ্গীর আলম নোয়াপাড়া ইউনিয়নের নিরামিষ পাড়া এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আবু সৈয়দের ছেলে। জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম শহরের আসাদগঞ্জে পাইকারি একজন শুঁটকি ব্যবসায়ী ও নোয়াপাড়া পথেরহাট বাজারে তার একটি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে।