রবিবার ● ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » কুষ্টিয়ার আলাউদ্দিন নগরে পিঠা উৎসব ও কৃষি মেলা
কুষ্টিয়ার আলাউদ্দিন নগরে পিঠা উৎসব ও কৃষি মেলা
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে পিঠা-পুলি। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের হাজার বছরের এ সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে। বাঙালির পিঠা উৎসবের মধ্য দিয়ে এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে প্রতি বছরেরর ন্যয় এবারো কুষ্টিয়া কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগর শিক্ষাপল্লী পার্কের মাঠ প্রাঙ্গনে পিঠা উৎসব, ফার্নিচার ও কৃষি মেলার আয়োজন করেন আলাউদ্দিন আহমেদ ফাউন্ডেশন। প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা পুলির উৎসব। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারী সমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়।
গত শনিবার সকাল ৯টার সময় কুষ্টিয়া কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগর শিক্ষাপল্লী পার্কের মাঠ প্রাঙ্গনে প্রায় ৬০টি স্টলে হরেক রকম পিঠা সাজিয়ে এ উৎসবের আয়োজন করেন। পিঠা উৎসবে হৃদয় হরণ, বাহারি গোলাপ, বউপিঠা, জামাই পিঠা, ভাপা রোল পুলি, কদম ও চন্দ্র পুলি, চিংড়ি পিঠা, মুরালী, সতির মোচড়, মুচমুচে মিষ্টি পিঠা, ক্ষীর, সেমাই সন্দেশ, ঝাল টুসি, নকশি পিঠা, গুড় পিঠা, পোয়া পিঠা, পাকন পিঠা, ঝিনুক পিঠা, পাটিসাপটা, কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহি চিতই পিঠাসহ বিভিন্ন নামের ও রংয়ের মুখরোচক পিঠা স্থান পায়। একদিকে যেমন দিনব্যপী পিঠা ও কৃষি পণ্যের ষ্টলে চলছে অন্যদিকে চলছে গ্রাম বাংলার ঐতিয্যবাহী লাঠি খেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রাণের টানে ছুটে আসা সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে ওঠেছে উৎসবস্থল। শীতের পিঠা-পুলিসহ নানা বৈচিত্রময় পিঠার পসরা সাজিয়ে উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের মনোযোগ কেড়েছে পিঠা উৎসবে অংশ নেয় স্টল গুলো। সেই পসরায় মুগ্ধ হয়ে স্টলে স্টলে পিঠা খেতে ভিড় জমিয়েছেন সকল বয়সের মানুষ।
আলাউদ্দিন আহমেদ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শনিবার সকাল ৯টার সময় পিঠা উৎসব ও কৃষি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপিস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ঠ শিল্পপতি, সমাজসেবক আলাউদ্দিন নগরের রূপকার ও শিক্ষাপল্লীর জনক দানবীর আলাউদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাঙালির ঐতিহ্য প্রবাহেরই একটি অংশ হচ্ছে পিঠা। এ দেশের লোক সংস্কৃতিরও অংশ সবার প্রিয় এই খাদ্যটি। আর পিঠা শিল্পীদের বানানো প্রতিটি পিঠায় থাকে প্রাণের ছোঁয়া, মিশে থাকে আবেগ যা পৃথিবীতে বিরল। পিঠা উৎসবের মুলেই রয়েছে ঢেঁকি। অথচ এখনকার মানুষ এই ঢেঁকি সম্পর্কে জানেই না। ঢেঁকি যেন জাদুঘরে রাখা লাগবে আগামীতে। তিনি আরো বলেন, শীতের সময় বাহারি পিঠার উপস্থাপন ও আধিক্য দেখা যায়। বাঙালির লোক ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহি:প্রকাশ। যান্ত্রিক সভ্যতার এই ইট-কাঠের নগরীতে হারিয়ে যেতে বসেছে পিঠার ঐতিহ্য। সময়ের স্রোত গড়িয়ে লোকজ এই শিল্প আবহমান বাংলার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠলেও এ যুগে সামাজিকতার ক্ষেত্রে পিঠার প্রচলন অনেকটাই কমে এসেছে। আগামীতে আরো বৃহত পরিসরে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে, সেই সাথে আয়োজকদেরকে ধন্যবাদ জানান।
পিঠা উৎসব, ফার্নিচার ও কৃষি মেলার প্রায় ৬০টি ষ্টল ছিল। লোকজ এই ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে বাঙালির পিঠা পার্বণের আনন্দধারায় দিনব্যাপী পিঠা উৎসব ও কৃষি মেলা ঘিরে মানুষের পদচারনায় মুখরিত ছিল দিনব্যাপী। প্রধান বিচারক দানবীর আলাউদ্দিন আহমেদ প্রতিটা ষ্টল ঘুরে-ঘুরে দেখেন। সকাল থেকে শুরু হওয়া উৎসবের দিন শেষে বিকেলে আয়োজক কমিটি বিচার বিশ্লেষন করে ৬০টি স্টলের মধ্য থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান নির্ধারনকারী স্টলদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এছাড়াও অংশগ্রহনকারী প্রতিটা প্রষ্ঠিানকেই শান্তনা পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি। এছাড়াও দিনব্যাপী এ উৎসবের অংশ হিসেবে উৎসব স্থলের মঞ্চের সামনে বিলুপ্ত প্রায় ঐতিয্যবাহী লাঠিখেলা, নৃত্য, গান, আবৃত্তিসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শিল্পীদের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন সময়ের সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা, তাদের হাতেও শান্তনা পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি দানবীর আলাউদ্দিন আহমেদ।
উল্লেখ্য উক্ত উৎসবে আলাউদ্দিন নগর শিক্ষাপল্লীর সকল প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করেন। মেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় মানুষ পিঠা প্রদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হোসেন জোয়ার্দার।