বৃহস্পতিবার ● ২৮ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » মাটিরাঙ্গায় ইউএনও বিএম মশিউর রহমানের সহযোগিতায় পাহাড় কাটার অভিযোগ
মাটিরাঙ্গায় ইউএনও বিএম মশিউর রহমানের সহযোগিতায় পাহাড় কাটার অভিযোগ
মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি :: (১৫ বৈশাখ ১৪২৩: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪৬মিঃ) পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলাধীন মাটিরাঙ্গার বটতলীতে ব্যবসায়িক সুবিধা হাসিলের উদ্দেশ্যে বিশাল আকারের পাহাড় কেটেছেন জাকির হোসেন নামের এক লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ব্রীকফিল্ড(বিএমবি)এর মালিক ৷ পরিবেশ আইনকে লঙ্ঘন করে প্রায় ১৪-১৫ ফুটের মতো গভীরতায় পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটেছে এখানে৷ ফলে আলুটিলা বটতলী পর্যটনের নান্দনিক সৌন্দর্য্য আর আলুটিলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রকৃতিগত স্বাভাবিক পরিবেশ আর রইলো না৷ রইলো না পর্যটন কেন্দ্রে দুর-দুরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের রান্নাবান্নাসহ গাড়ী পাকিং সুবিধার স্থান৷
পাহাড়টি যেভাবে কাটা হয়েছে তাতে আগামী বর্ষায় দুপাশের মাটি ধসে যে কোন দূর্ঘটনার আশংখা রয়েছে ৷
পাহাড় কাটার সাথে সম্পৃক্ত,লাইসেন্স বিহীন ব্রীকফিল্ড মালিক জাকির হোসেন দৃঢ় কন্ঠে জানান, বর্তমান মাটিরাঙ্গার ইউএনও বিএম মশিউর রহমান’কে ম্যানেজ করেই তিনি আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের পাহাড়টি কেটেছেন৷ তবে ইউএনও’র নির্দেশে পাহাড় কাটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরবরাহকৃত সরঞ্জামাদির পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক কোন লিখিত অনুমতি পত্র (ছাড়পত্র) নেই বলেও জানান তিনি৷
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান,শতবর্ষী বটমুলকে ঘিরে গড়ে উঠা পর্যটন কেন্দ্রটি আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে বিশেষ ভুমিকা রাখে৷ এর সৌন্দর্য্য বিনষ্ট ও বেকার যুবক ও যুব-মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী আলুটিলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মতো সরকারী প্রতিষ্ঠানের বরাদ্ধকৃত ভূমি (পাহাড়) এভাবে প্রভাবশালী ব্রীকফিল্ড মালিকের চক্রান্ত ও দায়িত্বের প্রতি উদাসীন প্রশাসনিক কর্মকর্তার সহযোগিতায় ধ্বংস হোক তা আমরা (আলুটিলার সাধারণ মানুষ) চাই না ৷
এ বিষয়ে ১নং ওয়ার্ড আলুটিলার সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, সাধারণ মানুষ মনে করে রাস্তাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে আলুটিলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পিছন দিক(পাহাড়ের কোল ঘেঁষে)রাস্তাটি নির্মাণ করা হলে হয়তো পর্যটন এলাকার প্রকৃতিগত নান্দনিক সৌন্দর্য্য রক্ষা ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের ভুমি (পাহাড়) হুমকির মুখে পরতো না৷
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গার ইউএনও বিএম মশিউর রহমান পর্যটনের পাহাড়টি কাটার অনুমতি দিয়েছেন স্বীকার করে এই প্রতিবেদকের উদ্দেশ্যে বলেন,আপনি নিজেও বাড়ী তৈরিতে পাহাড় কেটেছেন দেখেন গিয়ে বাড়িতে? বটগাছের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে তিনি পাহাড় কাটার অনুমতি দিয়েছেন দাবী করে ঐ পাশের পাড়ায় যাতায়েতের সুবিধা হবে বলেও জানান৷ সরকারী অফিসের বরাদ্ধকৃত ভুমি (পাহাড়) এভাবে কেটে ধ্বংস করার বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে-উল্টো তিনি এই পাহাড় কাটার বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনের প্রয়োজনীয়তা নেই উল্লেখ করে বলেন,খাগড়াছড়ি টু মাটিরাঙ্গা সড়ক নির্মানে বহু পাহাড় কাটা হয়েছে সেগুলোর সংবাদ করেননি কেন প্রশ্ন ছুড়ে প্রতিবেদকের নিকট পেশাগত দায়িত্ব পালনের কৈফিয়ত চান।
পরিবেশ আইনের বরাত দিয়ে জানা যায়,চট্টগ্রাম বিভাগের ৫টি জেলা যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলাসমূহে অবস্থিত সকল পাহাড় কাটা বন্ধে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট৷ এ ছাড়া ওই জেলাসমুহে অবস্থিত সকল পাহাড় কর্তন বন্ধে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন৷ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১৯ মার্চ এ নির্দেশ দেন আদালত৷ কিছু অসাধু কর্মকর্তা আদালতের একাধিক নির্দেশনা থাকা সত্বেও পাহাড় কাটা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবজ্ঞা ও উদাসিনতা প্রকাশ পাচ্ছে৷ এ ছাড়াও ২০১০ সালে সংশোধিত পরিবেশ আইনের ৪নং অনুচ্ছেদ এর ১নং আইনে সংশোধিত ৬খ-তে বলা আছে,কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারী,আধা সরকারী বা স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় কর্তন বা মোচন করা যাইবেনা ৷ তবে শর্ত থাকে যে,অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহন ক্রমে কোন পাহাড় কর্তন করা যাবে৷ কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, মাটিরাঙ্গার ইউএনও কোন রকম আইনকে তোয়াক্কা না করে পাহাড় কাটার সাথে জড়িয়ে পড়ছেন একের পর এক৷ তার নিজের ক্ষমতার কাছে পরিবেশ আইন অসহায়,যা কোন ভাবেই কাম্য নয়৷
খাগড়াছড়ি জেলা পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সদস্যদের সাথে সহমত পোষণ করে সচেতন মহলের অনেকে মনে করেন,একজন ইউএনও কোন ভাবেই পাহাড় কাটার অনুমতি দিতে পারেনা৷ উপজেলা পর্যায়ে পরিবেশ আইন বাস্তবায়ন কারীদের মধ্যে ইউএনও’এর দায়িত্ব মুখ্য৷ পরিবেশ আইনের প্রতি তার উদাসী মনোভাবেই প্রতিয়মান হয় ইউএনও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পাহাড় কাটার অনুমতি দিয়েছেন৷ প্রবাদ রয়েছে-সরষের ভিতরেই ভূত…!