

রবিবার ● ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ২০তম কাউন্সিলে ১৫ সদস্যের নতুন কমিটি
পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ২০তম কাউন্সিলে ১৫ সদস্যের নতুন কমিটি
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক স্বপন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ২০তম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। কাউন্সিলে ১৫ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ রবিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
“দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙ্গতে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে যুক্ত হোন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন, ভূমি বেদখল ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান” এই শ্লোগানে সকাল ১০টায় কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে অনিমেষ চাকমা’র সঞ্চালনায় মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন অতিথিবৃন্দ।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দলীয় সঙ্গীত “পাহাড়ি ছাত্র ছাত্রী দল” গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয় এবং শহীদদের সম্মানে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
কাউন্সিল অধিবেশনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি শান্ত চাকমার সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ চাকমা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর খাগড়াছড়ি সদর উপজেরা ইউনিটের সমন্বয়ক অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক নরেশ ত্রিপুরা ।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শ্যামল চাকমা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা।
অংগ্য মারমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সুদীর্ঘ সংগ্রামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ইতিহাস রয়েছে যা বর্তমানে উদীয়মান প্রজন্মকে উৎসাহ যোগায়, উৎফুল্ল ও সাহসী করে তুলে।
তিনি আরো বলেন, ছাত্রদের দমনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পরিচালিত ভাড়াটে সন্ত্রাসী কর্তৃক হামলা ও অপহরণ, হুমকি এখনো চলমান রয়েছে। পাহাড়ে আগে সেনাবাহিনী ও সেটেলার কর্তৃক যৌথভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা হতো, এখন তার রূপ বদলানো হয়েছে। এখন বিচ্ছিন্নভাবে পাহাড়িদের হামলা ওপর হামলা করা হচ্ছে। নান্যাচরে মন্টু চাকমা নামে এক পাহাড়ির বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও এরই অংশ হতে পারে।
পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে উল্লেখ করে অংগ্য মারমা বলেন, পাহাড়িদের হারানো ভূমি আজ পর্যন্ত কেউ ফেরত পায়নি। বর্তমানেও রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলায় নানাভাবে ভূমি বেদখলের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।
অংগ্য মারমা আরো বলেন, এদেশের শাসকগোষ্ঠি ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতি প্রয়োগ করে পাহাড়ের পরিস্থিতি অশান্তি ও অস্থিতিশীল করে রেখেছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অভিযানের নামে অন্যায় ধরপাকড় করে নিরীহ লোকজনকে জেলে পাঠানো এবং কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নামে বিচার বহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে জাতিগত দমনপীড়ন দিন দিন জোরদার করা হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠির এই অন্যায় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।
নীতি চাকমা বলেন, পাহাড়ে আগের তুলনায় ধর্ষণের অনেক ঘটনা বেড়ে গেছে। শুধু ধর্ষণ নয়, পাহাড়ে প্রতিনিয়ত খুন, গুম, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার এসব ঘটনা বন্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না এবং বিচার ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনছে না।
পাহাড়ে ছাত্র সমাজকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে মন্তব্য করে নরেশ ত্রিপুরা বলেন, শাসকগোষ্ঠী সংগঠিত ছাত্র সমাজকে ভয় পায়। ফলে নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে ছাত্র সমাজের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করতে নানা ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। ১৯৮৯ সালে ২০ মে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠিত হওয়ার পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে এসে শাসকগোষ্ঠি ছাত্র সমাজকে বিভক্ত করতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নামে আরো সংগঠন খুলে বসে। আজকে তারাই ছাত্রদের সংগঠিত হতে বাধা সৃষ্টি করছে। অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রাম যাতে জোরদার হতে না পারে সেজন্য নানা চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পাহড়ি ছাত্র পরিষদের গঠনের পর থেকে তার অগ্রযাত্রাকে ভেস্তে দিতে শুরু থেকে এদেশের শাসকগোষ্ঠী নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেছিল, ষড়যন্ত্র করেছিল। সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে পিসিপি তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যকে সামনে রেখে আজ পর্যন্ত লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
তিনি, শাসকগোষ্ঠির দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙ্গতে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে যুক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন, ভূমি বেদখল ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জনান।
শান্ত চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রামের দমন পীড়নের বিরুদ্ধে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সর্বদা প্রতিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন করে আসছে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে সেই ইতিহাসকে আমাদেরকে ধরে রাখতে হবে।
কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে মিঠুন চাকমা’কে সভাপতি, তৃষ্ণাঙ্কর চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও প্রাঞ্জল চাকমাকে সাংগঠনিক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হয়।
নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান নরেশ ত্রিপুরা। এরপর নতুন কমিটির সভাপতি মিঠুন চাকমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে কাউন্সিল অধিবেশন সমাপ্ত হয়।
শুভেচ্ছা মিছিল ও রিংরং ম্রোকে আটকের প্রতিবাদ
কাউন্সিল শেষে এক শুভেচ্ছা মিছিল এবং বান্দরবানে লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রিংরং ম্রোকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।
মিছিলটি খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজার থেকে শুরু হয়ে নারাঙহিয়া, উপজেলা পরিষদ কার্যালয় হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার প্রদক্ষিণ করে স্বনির্ভর বাজারে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিপির নবগঠিত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৃষ্ণাকর চাকমা।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ভূমিদস্যু লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ম্রো জাতিসত্তার ৪০০ একর ভূমি বেদখল পাঁয়তারা করে আসছে। গত কয়েক বছরে ম্রোদের মামলা, হামলা, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ এবং খাবার পানি উৎস ঝিরি-ঝর্ণায় বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এই অন্যায় প্রতিবাদে পাহাড়-সমতলে বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশ করা হলেও বিগত পতিত সরকার রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। গতকাল লামা সরই ভূমি রক্ষা কমিটির নেতা রিংরং ম্রোকে পুলিশ সাদা পোশাকে গিয়ে গ্রেফতার করেছে। আমরা এই অন্যায় গ্রেফতারের ঘটনা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি অবিলম্বে রিংরং ম্রোকে নিঃশর্ত মুক্তি, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।