

সোমবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রিংরং ম্রোকে আটকের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
রিংরং ম্রোকে আটকের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক সৌহার্দ্য চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনষ্টকারী লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ইজারা বাতিল কর’ শ্লোগানে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা রিংরং ম্রোকে বেআইনি আটকের প্রতিবাদে এবং ম্রো ও ত্রিপুরাদের নামে দায়েরকৃত সকল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
আজ সোমবার ২৪ ফেব্রয়ারি ২০২৫ বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রদক্ষিণ করে এসে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশের মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নেতা অংচাহ্লা মার্মার, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শুভ চাক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের মহানগর শাখার দপ্তর সম্পাদক জেসি চাকমা।
সমাবশে অমল ত্রিপুরা বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে লামা সরইয়ে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক স্থানীয় ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুমভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র চলাচ্ছে এবং হয়রানি করে আসছে । এরই অংশ হিসেবে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় সাদা পোষাকে গিয়ে পুলিশ লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা রিংরং ম্রোকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে পতিত শেখ হাসিনা যেভাবে পাহাড়ি জনগণের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়েছিল, পাহাড়ি ভূমি বেদখল করে নিয়েছিল ঠিক তেমনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ৬ মাসেও পাহাড়ে চিত্র একই ধরণে লক্ষ্য করছি। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে পর আমরা আশা করেছিল পাহাড়ে পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে, একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত হবে কিন্তু আমরা দেখলাম এখনো পর্যন্ত পাহাড় সমতলে একটি অস্থিতিশীল, নৈরাজ্য পরিস্থিতি চলমান রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘঠিত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব লক্ষ্য করছি।
তিনি, পাহাড়িদের ভূমি বেদখল, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, অন্যায় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এবং লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের সকল ইজারা বাতিলের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র-যুব-নারী সমাজ তথা পাহাড়ি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
নারীনেত্রী জেসি চাকমা অভিযোগ করে বলেন, ভূমিদুস্য রাবার ইন্ডাস্টিজের কর্তৃপক্ষ স্বৈরাচার হাসিনার রিজিমে ম্রো ও ত্রিপুরাদের জায়গা দখল করতে নির্বিচারে জুমভূমি-বাঁশঝাড় পুড়িয়ে দিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করে দেয়। এলাকাবাসীদের একের পর এক হামলা, বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ, পাড়াবাসীদের পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করেছিল। মিথ্যা মামলা দিয়ে ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা মথি ত্রিপুরা, লাংকম ম্রোদের আটক করে কারাগারে পাঠিয়ে হয়রানি করা হয়েছিল।
শুভ চাক্ বলেন, কয়েক বছর ধরে ভূমি খেকো লামা ইন্ডাস্ট্রিজের এসব অন্যায়-অবিচার ও অব্যাহত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ভূক্তভোগী ম্রো, ত্রিপুরা পাড়াবাসীরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন পেশাজীবী মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু বিগত পতিত সরকারের প্রশাসন ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই অন্তর্বর্তী সরকারে আমলে এসে এখন ভূমিদস্যুদের পক্ষালম্বন করে ভূমি রক্ষার আন্দোলনের নেতা রিংরং ম্রোকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক, যদি প্রশাসন রিংরং ম্রোকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান করা না হয় তাহলে পাহাড়-সমতলে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে বলে প্রশাসনের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি করেন।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে রিংরং ম্রোকে নিঃশর্ত মুক্তি এবং ম্রো-ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ভূমিদস্যু লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।