

বুধবার ● ৫ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন আফিয়া ও দ্যুতি মনি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন আফিয়া ও দ্যুতি মনি
রাঙামাটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সক্রিয় কর্মী আফিয়া তাসনিম ও দ্যুতি মনি তালুকদার স্বেচ্ছায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গত ৩ ও ৪ মার্চ ২০২৫, তারা তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে পৃথক পোস্টের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জানান।
রাঙামাটিতে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট : বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব রাঙামাটিতেও পড়েছিল। যদিও সেখানে কেন্দ্রীয় অনুমোদিত কোনো কমিটি ছিল না, তবু সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। ৪ আগস্ট ২০২৪, রাঙামাটি মারী স্টেডিয়ামের সামনে শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে। এই মিছিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় অনেকেই আহত হন, এবং আন্দোলনের এক নেতাকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়।
কেন সরে দাঁড়ালেন আফিয়া ও দ্যুতি মনি? আফিয়া তাসনিম ও দ্যুতি মনি তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তবে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও ব্যক্তিগত কারণ তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।
আফিয়া তাসনিম তার পোস্টে লেখেন : তিনি গত সাত মাস আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এবং রাঙামাটিতে আন্দোলনের প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। তবে সংগঠনের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব, সিনিয়র-জুনিয়র ভেদাভেদ, নারী-পুরুষ বৈষম্য এবং ব্যক্তিস্বার্থে সংগঠন ব্যবহারের প্রবণতা দেখে তিনি হতাশ হয়েছেন। পাশাপাশি আন্দোলনের কারণে তার পড়াশোনা, টিউশনি, এবং ব্যক্তিগত জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।
আফিয়া আরও উল্লেখ করেন, “এই প্ল্যাটফর্মে অনেক সময় দিয়েছি, শ্রম দিয়েছি, তবে দিনশেষে উপলব্ধি করেছি—এটি একটি বিশৃঙ্খল জায়গা, যেখানে ব্যক্তিস্বার্থ বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, আমি আর এই প্ল্যাটফর্মের অংশ নই। তবে দেশের প্রয়োজনে আমি সবসময় প্রস্তুত থাকব।”
দ্যুতি মনি তালুকদার তার পোস্টে বলেন : তিনি সর্বকনিষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে রাঙামাটিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, ব্যক্তিস্বার্থ, এবং জাতিগত বৈষম্যের শিকার হয়ে তিনি প্রচণ্ড হতাশ হয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, “নিজের আত্মসম্মানের কথা চিন্তা করে আমি এই প্ল্যাটফর্ম থেকে অব্যাহতি নিলাম।”
তিনি আরও জানান, সংগঠনের মধ্যে অনেকে ব্যক্তিগত স্বার্থে অন্যদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, যা তার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে দেশের স্বার্থে আবার আন্দোলনে নামার সংকল্প ব্যক্ত করেন।
সংগঠন থেকে বিদায়, কিন্তু আন্দোলনের চেতনা অটুট : আফিয়া তাসনিম ও দ্যুতি মনি তালুকদার দুজনেই স্পষ্ট করেছেন, তারা ব্যক্তিগত ও নৈতিক কারণে এই প্লাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়ালেও, বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের চেতনা বুকে ধারণ করবেন। দেশের প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামতে প্রস্তুত থাকবেন বলে জানান তারা।
তাদের এই সিদ্ধান্ত আন্দোলনের অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ তাদের বিদায়কে দুঃখজনক হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
এই বিদায় শুধু দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেতরের বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে, যা ভবিষ্যতে সংগঠনের কার্যক্রম ও অবস্থান নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে।