

রবিবার ● ৯ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাউজানে কৃষিজমিতে ঘর তৈরির হিড়িক
রাউজানে কৃষিজমিতে ঘর তৈরির হিড়িক
আমির হামজা, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলাজুড়ে চলছে কৃষি জমি ভরাটের এক মহোৎসব। কৃষিজমি ভরাট এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে পাহাড় কাটাও। সবমিলিয়ে ব্যাপক কর্মযোগ চলছে, পাহাড় কাটা ও কৃষি জমি ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণে। সরেজমিন দেখা গেছে, রাউজান উপজেলাজুড়ে কৃষিজমি ভরাটের মাধ্যেমে করা হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি। এতে পানি চলাচলের পথ বাধা তৈরি হচ্ছে। ফলে আসছে বর্ষা মৌসুমে এবার আগের চেয়েও ব্যাপক জলবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশষ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ের উজানের পানি, হালদা নদী ও সর্তার খালের পানির তোড়ে প্রতিবছর বর্ষায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এখানকার কয়েক লাখ মানুষকে। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, বর্ষা এলে এই জনপদের মানুষের মাঝে দুর্ভোগ অনেকটাই বেড়ে যেত। বন্যার পানিতে ডুবে যায় ঘরবাড়ি। এবার কৃষিজমি ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি তৈরির কারণে আশষ্কা করা হচ্এেবার কৃষিজমি ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি তৈরির কারণে আশষ্কা করা হচ্ছে, বন্যার ভয়াবহতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ছাড়িয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অংছিং মারমা বলেন, কৃষি জমি ভরাট ও জমির টপসেয়েল এবং পাহাড় কাটার ব্যাপারে তারা বার বার প্রশাসনের পক্ষে থেকে সর্তক করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে সেখানে গিয়ে অভিযান চালিয়ে অর্থদ- করা হচ্ছে। এবিষয়ে জানতে চাই হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ড.মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষি জমি ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণের ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি, বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস হয়। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় পাশাপাশি কৃষি জমি কমে যাওয়ার কারণে খাদ্য উৎপাদন কমে যায়, যা আমাদের অর্থনীতিতে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই কৃষি জমি ভরাটের আগে সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর এর প্রভাব মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি কাটা, পাহাড় কাটা, ও কৃষিজমি ভরাট ঠেকাতে প্রশাসনের অভিযান নিয়ে এখনো কার্যকর ও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। কয়েকটি অভিযান করা হলেও সেটি মাটিখোরদের দমাতে পারেনি। দেখা গেছে প্রকাশেই দিনে রাতেই পাহাড় ও কৃষি জমির মাটি কেটে ট্রাকে করে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে। দেদার কৃষি জমির টপসয়েল কেটে জমির উর্বরতা নষ্ট করা হচ্ছে, হুমকির মুখে উপজেলার প্রায় কৃষিজমি গুলো। আর মাটি কাটার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে মারামারি-গোলাগুলি ঘটনাও ঘটে চলছে। উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কৃষিজমি ভরাট করে অপরিকল্পিত ভাবে পানি সরার পথ বন্ধ করে ঘরবাড়ি তৈরি করছে স্থানীয়রা। এছাড়াও গ্রামের উঁচু জায়গা হতে পানি চলাচলের কিছু কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বসতবাড়ি। এতে চলতি বর্ষা মৌসুমে ফসলের মাঠ গুলোর পানি চলাচলে পথ বাধা তৈরি হয়ে আমন ধানসহ নানা ফসলি জমি তলিয়ে গিয়ে ফসল নষ্ট হওয়ার ব্যাপক আশষ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘আগের সরকারের আমলে মানুষ কৃষিজমি ভরাট করে ঘরবাড়ি করতে পারেনি। তখন কৃষিজমিতে ঘর করতে গেলে বাঁধা দেওয়া হতো। এখন আমরা সুযোগ পেয়েছি, তাই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঘর করছি। তারা বলছেন দিনদিন আমাদের পরিবারে লোকসংখ্যা বাড়ছে। পুরাতন বাড়িতে দীর্ঘ বছর ধরে যৌথভাবে চাপাচাপি করে বসবাস করলেও, কিন্তু পরিবারের সদস্য বেড়ে চলাতে ঘর করতে হচ্ছে।’ অনেক এলাকায় দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশ দিয়ে থাকা কৃষিজমিগুলোতে এখন আর জমি নেই। মাটি ভরাট হয়ে রুপান্তরিত করা হয়েছে ফুটবল মাঠে। আবার অনেক স্থানে মাটি ভরে তৈরি করা হচ্ছে নতুন পাকা ঘরবাড়ি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব ফসলি জমিগুলো ভরাটের ফলে আগামীতে যেকোন ফলন উৎপাদ কমে আসবে। এতে কৃষি খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। শিগগিরই পরিকল্পিত ভাবে ঘরবাড়ি করার ব্যবস্থা না করলে আগামী বর্ষা মৌসুমে আগের তুলনায় এর দুর্গতি রাউজানের মানুষের ঘাড়ে চেপে বসার আশষ্কা রয়েছে।