

মঙ্গলবার ● ১১ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতুসহ ৭২ জনের নামে মামলা
রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতুসহ ৭২ জনের নামে মামলা
রাঙামাটি :: রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের বহুল বিতর্কিত সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমাকে প্রধান আসামী করে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাঘাইছড়ি পৌরসভাধীন ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. হাবিবুর রহমান (৩১) বাদী হয়ে রবিবার এই মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা নাম্বার : ০১, তারিখ: ০৯/০৩/২০২৫ ইংরজি। এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে অন্তত ১০ জনকে।
দন্ডবিধি ৪৩/ ৩২৩/ ৩২৪/ ৩২৫/ ৩২৬/ ৩০৭/ ৪২৭/ ৪৩৫/ ১০৯/ ১১৪/ ৩৪/ ৫০৬ (২) ধারায় দায়েরকৃত মামলায় বাঘাইছড়ি পৌরসভার বহিস্কৃত মেয়র জমির উদ্দিন, আমতলী ইউপির বহুল বিতর্কিত সাবেক চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা আরো ৪০/৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
অন্য আসামীরা হলো : উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন আল মামুন (৬২), আওয়ামীলীগ নেতা আলী হোসেন (৬০), মো. কামাল হোসেন (৪৮), মো. ইকবাল হোসেন (৩৬), মো. হারুন (৫০), মো. আব্দুল গফুর সুবেল (৩২), মো. মামুনুর রশিদ (৩৪), মো. শামীম (২৮), মো. ইয়াছিন রানা (৩৬), মো. তরিকুল ইসলাম সোহেল (৩৭), মো. ইমরান হোসেন (২৫), মো. ইউনুছ আলী (২৬), মো. আনোয়ার হোসেন বাপ্পী (৩৩), মো. আজগর আলী (৩৫), মো. আব্দুল জলিল ফাহিম (৩২), মো. ইমরুজ তামিম জিসান (২৮), মো. সাইফুল ইসলাম খান (২৬), মো. নাছির উদ্দিন (৪৫), মো. শহিদুল ইসলাম মিঠু (৪০),সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জন।
বাঘাইছড়ি থানা পুলিশ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে এই মামলায় ১৩ নং আসামী মো. তরিকুল ইসলাম সোহেল (৩৭) নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২৬/০৮/২০২২ ইংরেজি তারিখ স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর মাঠে বিএনপি ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আমিসহ দলীয় ২০০/২৫০ জন নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের আগমন উপলক্ষ্যে উপজেলা সদর মাঠে জমায়েত হই।
২৬/০৮/২০২২ ইংরেজি তারিখ সকাল অনুমান সাড়ে ১০টার দিকে ১নং বিবাদীর হুকুমে উপরোক্ত বিবাদীগন একই উদ্দেশ্যে বে-আইনী জনতায় দলবদ্ধ হইয়া উপজেলা সদর মাঠে আসিয়া ২নং, ৩নং, ১৪নং ও ১৭নং বিবাদীগন তাহাদের হাতে থাকা ধারালো দা দিয়া আমাকেসহ ৫নং ও ১০নং সাক্ষীকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করিয়া মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে।
৪নং ও ৫নং বিবাদীর নেতৃত্বে ৬নং, ৭নং, ৮নং, ৯নং ও ২২নং বিবাদীগন তাহাদের হাতে থাকা চাপাতি দিয়া ২নং, ৩নং ও ৪নং সাক্ষীদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতারীভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত কাটা জখম করে। ১০নং, ১৬নং, ১৯নং ও ২০নং বিবাদীগন তাহাদের হাতে থাকা ধারালো কিরিচ দিয়া ০৮নং ও ০৯নং সাক্ষীসহ দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে বেপরোয়াভাবে কুপিয়ে কাটা রক্তাক্ত জখম করে।
১১নং, ১২নং, ১৩নং, ১৫নং, ১৮নং ও ২১নং বিবাদীগনসহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীগন তাহাদের হাতে থাকা লোহার রড ও লাঠি দ্বারা দিয়া ১নং, ০৬নং ও ০৭নং সাক্ষীসহ দলীয় নেতাকর্মীদেরকে এলোপাতারী মারপিট করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাড়ভাঙ্গা জখমসহ নীলাফুলা জখম করে এবং নেতাকর্মীদের ব্যবহৃত ১৫টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে এবং ০২টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করিয়া অনুমান ৪ লক্ষ ৫০ পঞ্চাশ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে।
বিবাদীগনের ধাওয়ায় আমরা দ্রুত স্থান ত্যাগকালে সকল বিবাদীগন আমাদেরকে হুমকী দিয়া বলে,ভবিষ্যতে কোন ধরণের সমাবেশ করার চেষ্টা করিলে আমাদেরকে মারপিটসহ খুন-জখম করিবে।
পরবর্তীতে দলীয় নেতাকর্মীগন আমাকেসহ জখমীদেরকে চিকিৎসার জন্য বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বিবাদীগন তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের দোসর হওয়ায় তাহাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এজাহার দায়ের করিতে বিলম্ব হইল।
উল্লেখ্য, রাঙামাটি জেলায় পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট তথ্য উল্লেখপূর্বক বাঘাইছড়ি উপজেলায় এটি-ই প্রথম মামলা। জেলা শহরের কোতয়ালী থানা বা আদালতে এই ধরনের কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি অভিযোগ করে বিএনপির তৃণমুল পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, বিগত দেড় যুগে মামলা-হামলা করে বাড়ি ছাড়া করে রাখার পরেও বর্তমান সময়ে পতিত সরকারের উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করা হয়নি। দলের সিনিয়র নেতাদের একটি পক্ষ আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে আতাঁত করে মামলা করা থেকে নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিরুৎসাহিত করেছেন বলেও দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করছে প্রতিনিয়ত।