শুক্রবার ● ৯ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » মিরসরাই - কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ ধরে ২৮৫ কিঃমি সড়ক নির্মাণ
মিরসরাই - কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ ধরে ২৮৫ কিঃমি সড়ক নির্মাণ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :: মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ ধরে ২৮৫ কিলোমিটার বিকল্প সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। পর্যটন নগরীর সঙ্গে বিকল্প যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় নেওয়া হয়েছে প্রকল্পটি। নতুন অর্থবছরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ।
মিরসরাই-টেকনাফ মেরিন রোড প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার ১৭০ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা চলছে। এরই মধ্যে বিদেশি অর্থায়নকারী দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
প্রায় ২৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটির অর্থায়নসহ যাবতীয় বিষয় যাচাই-বাছাই করছে পরিকল্পনা কমিশন। সড়কটি মিরসরাই উপকূল ধরে ফৌজদারহাট হয়ে কর্ণফুলী টানেলের মধ্য দিয়ে যাবে। এর পর রাজঘাট হয়ে কক্সবাজারের ইনানী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সমুদ্র উপকূলবর্তী এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মিত হবে, যেটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে প্রস্তাবিত টানেলের সঙ্গে যুক্ত হবে। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ‘জাইকা’ এ সড়কের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কাজ করছে।
এ সড়কের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার পরিণত হবে পর্যটন, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন সড়ক এবং প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলবর্তী মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার হয়ে উঠবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপদ আবাসস্থল। প্রকল্পটি অর্থায়নে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা অর্থায়নের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ ও কানেক্টিভিটি বাড়াতে মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন সড়কটি নির্মাণ করা হবে। সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা প্রকল্পটি নতুন অর্থবছরে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি খুব জটিল নয়। সে জন্য বড় ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন হবে না। এ জন্য কাজ শুরুর ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা নেই।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিষয়টির বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে বৈদেশিক অর্থায়নসহ সীতাকুন্ড থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরও একটি মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। চীন নতুন প্রস্তাবে ১৩ হাজার কোটি টাকা অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। সেটিও খতিয়ে দেখছে পরিকল্পনা কমিশন।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ বলছে, কক্সবাজার কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীকে ঘিরে বিদ্যুতের হাব তৈরি হচ্ছে। এর ওপর এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এ কারণে মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণ হলে ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপক বিনিয়োগ বাড়বে। আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি গড়ে উঠবে, বিশেষ করে মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে। একই সঙ্গে পর্যটক আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় দুই লেনের মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে। এতে ১১৮টি সেতু ও ৭০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মিত হবে। প্রকল্পটির আওতায় ৫৫০ একর জমি অধিগ্রহণে ২৮ কোটি, বাঁধ নির্মাণে ৯০ কোটি, সেতু নির্মাণে ১৯০ কোটি এবং সাগরপাড়ের বাঁধ রক্ষায় ১৭০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ৮৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সড়কের নির্মাণকাজ চলছে, যা আগামী বছরের প্রথম দিকে শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে। সে লক্ষ্য সামনে রেখে পুরোদমে কাজ চলছে। আপলোড : ৯ অক্টোবর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ১২.৫৭ মিঃ