শুক্রবার ● ৬ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ৫ পয়সা চুরির মামলা ৪০ বছর ধরে চলছে
৫ পয়সা চুরির মামলা ৪০ বছর ধরে চলছে
অনলাইন ডেস্ক :: পৃথিবীর কোনো জায়গাতেই এখন আর পাঁচ পয়সা খুঁজে পাওয়া যাবে না। মান্ধাতার আমলের এই পাঁচ পয়সার জন্য চাকরি চলে গিয়েছিল রনবীর সিং যাদবের। আর চাকরি ও সম্মান ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে বর্তমানে ৭৩ বছর বয়স্ক এই বৃদ্ধ লড়াই করে চলেছেন ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। পাঁচ পয়সার হিসাব না মেলার অভিযোগ ও তারপর চাকরিচ্যুত হয়ে আইনি লড়াইয়ে গত চার দশকে দু’ পক্ষের খরচ হয়েছে হাজার হাজার রুপি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভারতীয় এ বৃদ্ধের কথা। ১৯৭৩ সালে তিনি দিল্লি পরিবহন করপোরেশনে বাস কন্ডাক্টর হিসেবে চাকরি করতেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এক নারী যাত্রীর কাছ থেকে ১৫ পয়সা ভাড়া নিয়ে ১০ পয়সার টিকিট ধরিয়ে দিয়েছিলেন যাদব এবং নিজের পকেটে ভরেছিলেন বাকি পাঁচ পয়সা। সে সময় বাসে ছিলেন এক চেকিং স্টাফ। তার অভিযোগ ও পরে অভ্যন্তরীণ তদন্তের প্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালে যাদবকে চাকরিচ্যুত করে প্রশাসন।
এরপর ১৯৯০ সালে শ্রম আদালতে এ মামলায় জিতেছিলেন যাদব। রায়ে আদালত বলেছিলেন, যাদবে চাকরিচ্যুত করা অবৈধ ছিল। কিন্তু তার পরের বছর পরিবহন সংস্থাটি আপিল আবেদন করে, যে মামলার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার ভারতীয় রুপি। আইনের এই লড়াই শেষ হয়নি যাদব। তার দুঃখ, যে বয়সে মানুষজন সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পেতে তীর্থে যায়, সে বয়সে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন আদালতের দরজায়। এমনকি তিনি চুরি করেছেন কিনা, তা নিয়ে সন্তানদের কাছেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। সেদিনকার দুই শিশু সন্তানকে উত্তর দিতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত গত জানুয়ারিতে সংস্থাটির করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। জানিয়েছে, চাকরিচ্যুতকরণের এ পদক্ষেপ অবৈধ ছিল। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ, কাজের স্বীকৃতি ও অন্যান্য কারণে একাধিক প্রশাসনিক সংস্থার কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ রুপি পেতে চলেছেন যাদব। আর প্রশাসনগুলো পাঁচ পয়সার হিসাব মেলাতে গিয়ে এখন লোকসান দেবে এই লাখ লাখ রুপি।
শুনানিতে আদালত জানতেও চেয়েছিলেন যে পাঁচ পয়সা উদ্ধারের আইনি লড়াইয়ে ৪০ বছরে কত লাখ রুপি খরচ করতে হয়েছে প্রশাসনকে। শ্রম আদালত ও উচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও এ মামলাকে টেনে টেনে এত বড় করার জন্য সমালোচনাও করেছেন আদালত।
কিন্তু তাও এ লড়াই শেষ হয়নি। ২৬ মে কারকারদুমায় আরেকটি শুনানিতে হাজির থাকতে হবে যাদবকে। পাঁচ পয়সা হোক, বা দু’ পয়সা, এর জন্য যে ভোগান্তি আর লাখ লাখ রুপি খরচ করতে হচ্ছে, তাতে সেই পাঁচ পয়সার আজ আর কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও তা নিয়েই আটকে রয়েছে প্রশাসন, অভিযোগ যাদবের স্ত্রী বিমলার।
সূত্র : পরিবর্তন