শুক্রবার ● ৯ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » কুমিল্লা » জুম্মানের আবিষ্কার : জিএম হাইভোল্টেজ সিকিউরিটি
জুম্মানের আবিষ্কার : জিএম হাইভোল্টেজ সিকিউরিটি
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম :: দিনের বেলায় একদল সশস্ত্র ডাকাত হানা দিলো ব্যাংকে। টাকা লুটপাট করার জন্য। গ্রাহকরা ভয়ে চুপসে গেল, যার যার মধ্যে সটকে পড়লো। বিষয়টি জানার পরই নিজের রুমে থাকা শাখা ব্যবস্থাপক টেবিলের বাঁপাশে থাকা একটি বাটনে চাপ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আলি বাবা চল্লিশ চোরের মতো ‘চিচিং ফাক’ এর উল্টোভাবে আটকে গেল সবগুলো দরজা। এসব দরজা দিয়ে ব্যাংকের বাইরে যাতায়াত করা হয়। দরজা বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে সবাই জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। ইতোমধ্যেই থানায় পৌছে গেছে মুঠোফোনে একটি ক্ষুদে বার্তা।একই ধরণেরে আরও একটি ক্ষুদে বার্তা পৌছে গেল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে। সঙ্গে সঙ্গে ডিউটি অফিসারের কক্ষে বাজতে শুরু করলো বিশেষ ধরণের সাইরণ। সাইরণ বন্ধ করার পরই এসএমএসে থাকা ঠিকানায় পৌছে গেল একদল পুলিশ সদস্য।প্রধান কার্যালয়ের দেওয়া পাঞ্চ কার্ডের সাহায্যে পুলিশ দরজা খুলে ঢুকে পড়লো ব্যাংকের ভেতর। তারপর সবাইকে উদ্ধার করেলেন। দুর্বৃত্তদের বিচারের মুখোমুখি করা হলো। ঘটনাটি কোন সিনেমার নয়। নয় মাসুদ রানার গোয়েন্দা সিরিজের কোন গল্প। এভাবেই ব্যাংক সিরিউরিটি নিশ্চিত করবে জিএম হাইভোল্টেজ সিকিউরিটি ব্যবস্থা। অবৈধভাবে রাতের বেলায় লকারে থাকা টাকা সরানোর সঙ্গে সঙ্গে একইভাবে এসএমএস পৌছে যাবে থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে।শুধু ব্যাকং নয়, বাসা-বাড়িতে ডাকাতি ও হত্যা ঠেকানো যাবে একইভাবে।নিজের কম্পিউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সড়ক বাতির আলো এবং বাড়িতে পানির ব্যবহারও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আগুণে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে একইভাবে রক্ষা করা যাবে বিভিন্ন ধরণের কারখানাকে।
দুর্বৃত্তদের রোধে ব্যক্তি উদ্যোগে এই সিকিউরিটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছেন জুম্মান। পুরোনাম কাজী এমরান হোসেন জুম্মান। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। কাজ করেন কুমিল্লার বাকারাবাদ গ্যাস অফিসে।সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পরই এই ধরণের একটি সিকিউরিটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় কি না- বিষয়টি মগজে আসে তার। সেই থেকে শুরু । পরিচিতজনদের সঙ্গে আলোচনা ও তাদের কাছে থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পরই মনোনিবেশ করেন কাজে। টানা দুই বছর রাতে অবিরাম পরিশ্রমে ফসল হিসেবে পেয়েছেন সফলতা। কিন্তু ? সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মেধাবী এই মানুষের পর্রিশ্রম সার্থকতায় রূপ নিতে পারেনি।
জুম্মানের চাচাতো ভাই রাঙামাটি বিটিসিএল এর শ্রমিক নেতা কাজী আব্দুর রউফ বলেন,জুম্মান দেশের জন্য ভাল কিছু করতে চায়।জুম্মানকে যদি সরকার বা কোন প্রতিষ্ঠান আর্থিক ভাবে সহযোগীতা করে তাহলে প্রধান মন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নিশ্চিত অবদান রাখবে।
পাঁচ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে জুম্মান বাবা-মার চার নম্বর সন্তান। জুম্মানের বাবা কাজী ফরিদ উদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করতেন। মা কাজী নজিমুন নেছা একজন গৃহিনী।বাবার চাকরীর সুবাধে থাকতেন রাজধানীর মতিঝিল এলাকায়। মতিঝিল স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। খেলাধুলার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ঝোঁক থাকায় স্কুলের চৌকাঠ পেরুতে পারেননি। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালখার পর চলে যান সৌদি আরবে। সেখানে দুই বছর ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। এরপর দেশে ফেরেন। চলে যান পৈত্রিকভিটায়। কুমিল্লার চাপাপুর কাজীবাড়ির বাসিন্দা জুম্মান ছয় বছর আগে বিয়ে করেন। সহধর্মীনি আমেনা খাতুনের পৈত্রিক বাড়ি প্রতিবেশি গ্রাম বরিচং। জুম্মানের ঘরে একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে।
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জুম্মান জানান, তার এই সিকিউরিটি ব্যবস্থা দিয়ে ব্যাংক ও ফ্ল্যাটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। সংশ্লিষ্টদের অঘটনের বার্তা পৌছে দেওয়ার জন্য এসএমএসসহ উচ্চ শব্দের অ্যালার্ম ব্যবহার করা হয়েছে। ম্যানুয়ালি অ্যালার্ম বন্ধ না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালামটি বেঁজেই যাবে। তিনি বলেন এজন্য তার সরকারি বা বে-সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এ সংক্রান্ত সবকিছুই উদ্ভাবন করা শেষ। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সিকিউরিটি সিস্টেমটি বাজারজাত করা যাবে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আপলোড : ৯ অক্টোবর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ১০.১৫ মিঃ