সোমবার ● ৯ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » ডক্টর ওয়াজেদ মিয়ার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন
ডক্টর ওয়াজেদ মিয়ার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল :: বাঙালি জাতির এক গর্বিত ও আলোকিত মানুষের নাম ড. এম এ ওয়াজিদ মিয়া৷ তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী৷ তিনি ১৯৪২ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার পীরগঞ্জের ফতেপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন৷ তাঁর পিতার নাম আব্দুল কাদের মিয়া ও মাতার নাম ময়জুন্নেসা৷ তিনি পিতামাতার ৭ সন্তানের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ৷
গ্রামের প্রাইমারী বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী ও পীরগঞ্জ থানার হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন শেষে ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন৷ ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন৷ ম্যাট্রিক পাশ করার পর রাজশাহী সরকারী কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন৷ ১৯৫৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন৷ ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদশের্র প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করেন, ১৯৬০-৬১ সলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের পক্ষে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন৷ উল্লেখ্য যে, সে সময় তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভণর্র ছিলেন জেনারেল আজম খান৷ ছাত্র আন্দোলন আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এবং জোরদার হতে থাকে৷ আন্দোলন শুরু হওয়ার ৩য় দিনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন বিকল ৬.০০ টায় বলেন ওয়াজেদ তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর মধ্যে একমাত্র নির্বাচিত সহ-সভাপতি, মুজিব ভাই তোমার সঙ্গে দেখা করতে চান৷ তুমি এখনি আমার সঙ্গে চল৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর বাড়ীতে এম এ ওয়াজেদ মিয়ার এটাই প্রথম সাক্ষাত্৷
১৯৬১ সালে ছাত্র আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়ার ১১ দিন পর এম. এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসে তাঁর বন্ধু আঞ্জুমান ৷ সাক্ষাত্ শেষে ফেরার পথে দেখা হয় জেলগেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবগের্র সঙ্গে৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এম. এ ওয়াজদ মিয়াকে পরিচয় করিয়ে দেন তার পরিবারের সকলের সঙ্গে৷ এটাই প্রথম দেখা শেখ হাসিনার সঙ্গে৷ তিনি ৩০ এপ্রিল ১৯৬৩ সালে তত্কালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কেন্দ্রে যোগদান করেন৷ ১৯৬৭ সালে আগষ্ট মাসে পি. এইচ. ডি ডিগ্রী শেষ কনে৷ ১৭ নভেম্বর ১৯৬৭ সালে শবে-বরাতের রাত্রে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া সাথে শেখ হাসিনার শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়৷ সে সময় বঙ্গবন্ধু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন৷ পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে একটি রোলেঙ্ ঘড়ি উপহার দেন৷ যা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন৷ পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া ইতালীর ট্রিয়েষ্টস্থ আন্তর্জাতিক তাত্তি্বক পদার্থ কেন্দ্রে ৬ মাস গবেষণা কর্ম শেষে ১৯৭৪ সনের ১ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন৷ ১৯৭৫ সালের ৯ আগষ্ট পশ্চিম জার্মানীস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর বিশেষ আমন্ত্রণে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ তাঁর চেলে জয় ও মেয়ে পুতুলকে নিয়ে জার্মানীর রাজধানী মেলবর্নে যান৷
১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ শুক্রবার সকাল ৬.৩০ ঘটিকায় ঘুম ভাঙ্গে জার্মানীর রাষ্ট্রদূতের ডাকে৷ তারপর এক সময় জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয়েছে৷ ২৫ আগষ্ট আত্মরক্ষা এবং পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেন ভারত৷ ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একবার ওয়াজেদ মিয়ার সাক্ষাত্ হয়৷ ১৯৭৫ সালের ৩ অক্টোবর পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া ভারতীয় আণবিক শক্তি কমিশনের অধীনে আণবিক খনিজ বিভাগে দিল্লীস্থ কেন্দ্রে যোগদান করেন৷ ১৯৭৬ সালে ১ অক্টোবর সাময়িক ও দৈনিক ভিত্তিতে ভারতীয় আণবিক শক্তি কমিশন থেকে পমরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজদ মিয়ার জন্য একটি পোষ্ট ডক্টোরাল ফেলোশীপের বন্দোবস্ত করা হয়৷ ঐ ফেলোশীপের শর্তানুসারে বাসা ও অফিসে যাতায়াতের সুবিধাদির অতিরিক্ত দৈনিক ভাতা প্রদান করা হতো ৬২ রুপি ৫০ পয়সা মাত্র৷ ১৯৭৭ এর গোড়ার দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোরারজী দেশাই ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম.এ ওয়াজেদ মিয়ার পরিবারের উপর বিভিন্ন ধরণের চাপ ও হয়রাণিমূলক কার্যক্রম শুরু হয়৷ পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, এম কোরবান আলী ও মেয়ে পুতুলকে সহ শেখ হাসিনাকে ১৭ মে ১৯৮১ সালে ঢাকা পাঠান৷ ৫ জুন ১৯৯২ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া, শেখ হাসিনা ও জয়কে নিয়ে সৌদি যান সৌদি বাদশার অতিথি হিসাবে, ৯ জুন পবিত্র হজ্জ ব্রত পালন করেন৷ তিনি বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের ভৌত বিজ্ঞান সদস্য ছিলেন, পরবর্তীতে চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন৷ ১৯৯৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন৷ ২০০৯ সালের ৯ মে ৬৭ বছর বয়সে এই কৃতি পুরুষ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে তাঁর বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়৷
লেখক : লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ৷
ই-মেইল :[email protected]