মঙ্গলবার ● ১৭ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » আলীকদমে ২০টি বিদ্যালয়ে দাতা সংস্থা ইউএনডিপির শিক্ষা সহায়তা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ
আলীকদমে ২০টি বিদ্যালয়ে দাতা সংস্থা ইউএনডিপির শিক্ষা সহায়তা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ
আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: (৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৪০মিঃ) দাতা সংস্থা ইউএনডিপি’র শিক্ষা সহায়তা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বান্দরবানের আলীকদমে ২০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার পথে৷ পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের বেতনভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে৷ মূলত ২০০৮ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ২০১০ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিল ইউএনডিপি’র ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা সহায়তা প্রকল্পটি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করে৷
সূত্রে জানা গেছে ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ২০১৫ সালের জুলাই বেতন পাচ্ছেন না৷ ১ম দফা ২০১৩ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পূনরায় এই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ৷ দ্বিতীয় দফা মেয়াদ শেষের পর থেকে এসব বিদ্যালয় অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে৷ ফলে এ উপজেলার দুর্গম এলাকার দুই হাজারের বেশীর কোমলমতি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বলে স্থানীয় শিক্ষক ও অভিভাবকরার জানান৷
পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ইউএনডিপি’র ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা সহায়তা’ প্রকল্প শুরম্ন হয় ২০০৮ সালে৷ শুরুতে এ প্রকল্পের নাম ছিল ‘মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্প’৷ ২০১০ সালের জুলাই মাসে ইউএনডিপি প্রকল্পটির পরিচালনার ভার পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করে৷ তখন প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা প্রকল্প’৷
প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ক উইলিয়াম মারমা বলেন, ২০১০ সালের আলীকদম উপজেলার দুর্গম ও বিদ্যালয়বিহীন পাহাড়ি এলাকাগুলোতে এ প্রকল্পের আওতায় ২০টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে প্রতিষ্ঠা করা এসব বিদ্যালয় দুর্গম এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য খুবই প্রয়োজন৷ ইউএনডিপির অর্থায়নে এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা না হলে অদুর ভবিষ্যতে ওইসব দুর্গম এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না৷
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও আসবাবপত্র ক্রয়খাতে আর্থিক সহায়তা দেয় ইউএনডিপি৷ পাশাপাশি আলীকদমের ২০টি বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে চারজন করে শিক্ষকের বেতন-ভাতাও দেওয়া হতো৷ প্রত্যেক শিক্ষক মাসে তিন হাজার ৫০০ করে ভাতা পেতেন৷ প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে ২০টি বিদ্যালয়ের ৮০ জন শিৰক বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না বলে জানা গেছে৷
আলীকদম ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার জনপ্রতিনিধি রেংরই মুরুং ও কামপুকং মুরুং জানান, নতুন প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলো পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষার বিকাশে খুবই সহায়ক৷ এতদিন দুর্গমের নৃ-জনগোষ্ঠীর কোমলমতি শিশুরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল৷ ইউএনডিপির তৈরী করা বিদ্যালয়গুলো শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি করেছে৷
বন্ধ হয়ে যাওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা সহায়তা প্রকল্পের শিক্ষা কর্মকর্তা এনিন মার্মা সংবাদিকদের জানান, ইউএনডিপির প্রকল্প শুরু হওয়ার পর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলোর ব্যয় নির্বাহ করা হতো প্রকল্পের টাকায়৷ প্রতিটি বিদ্যালয়ের চারজন করে শিক্ষকের বেতন ভাতা দেওয়া হতো৷ বিদ্যালয়গুলো এখন সরকারীকরণের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে৷ তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে বিদ্যালয়গুলো৷ এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না৷
লাংরিং পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্রাহাম ত্রিপুরা বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভালবেসে বিদ্যালয়ে না এসে তো থাকতে পারি না৷ বেতন নেই গতবছরের জুলাই থেকে৷ শিক্ষকদের বেতন পাওয়ার কোন প্রতিশ্রুতি পাচ্ছিনা৷ বেতন ছাড়া আমরা কতদিন বিদ্যালয় চালাতে পারব তাও আমি বলতে পারছি না৷ বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ করা হলে কোনো সমস্যা থাকত না’৷
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাইনথপ ম্রো বলেন, ‘প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার নৃগোষ্ঠীর শিশুরা মৌলিক অধিকার ‘শিক্ষা’ থেকে বঞ্চিত ছিল৷ ইউএনডিপি দুর্গম এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সে সুযোগ নিশ্চিত করেছে বটে৷ কিন্তু প্রকল্প মেয়াদ শেষ হবার পর সরকারিভাবে এসব বিদ্যালয় পরিচালনায় অর্থায়ন না করলে এ উপজেলার অন্তত দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকা করছি৷ এসব বিদ্যালয় দ্রুত জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয়া হোক’৷
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, এসব বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য তথ্য কয়েকবার সরকারিভাবে চাওয়া হয়েছে৷ কয়েকবার তথ্য পাঠানো হয়েছে৷ প্রত্যন্ত এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়গুলো টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি৷