বুধবার ● ১৮ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » স্কুলছাত্রী হত্যার প্রধান আসামী গ্রেফতার, আদালতে স্বীকারোক্তি
স্কুলছাত্রী হত্যার প্রধান আসামী গ্রেফতার, আদালতে স্বীকারোক্তি
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুরে শিশু স্কুলছাত্রীকে হত্যা করে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে চুবিয়ে রাখার ঘটনায় প্রধান আসামী নিহতের চাচাতো ভাই রহমত উল্লাহ মনাকে (১৮) ১৭ মে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ গ্রেফতার করেছে৷
গ্রেফতারের পর সে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ইলিয়াস রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিয়েছে৷ পারিবারিক বিরোধের কারনে তুচ্ছ ঘটনার জেরে হত্যা করে শিশু স্কুলছাত্রীর লাশ টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে চুবিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেছে নিহতের চাচাতো ভাই গ্রেফতারকৃত মনা৷
গাজীপুর আদালতের ইন্সপেক্টর রবিউল হোসেন ও জয়দেবপুর থানার পূবাইল পুলিশ ক্যাম্পের এসআই মোবারক হোসেন আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, গাজীপুরে পারিবারিক বিরোধের কারনে তুচ্ছ ঘটনার জেরে হত্যা করে শিশু স্কুলছাত্রীর লাশ টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে চুবিয়ে রাখার কথা স্বীকার করে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে প্রধান আসামী নিহতের চাচাতো ভাই রহমত উল্লাহ মনা (১৮)৷
এর আগে দুপুরে পুলিশ তাকে রাজধানী মিরপুরের রুপগঞ্জ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভগি্নপতি হোসেনের ভাড়া বাসা থেকে মনাকে গ্রেফতার করে৷
চাচাতো বোন সাদিয়া আফরিন ওরফে মায়াকে (৮) হত্যার কথা স্বীকার করে গ্রেফতারকৃত মনা জানায়, জমিজমা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে তার বাবা কালামের সঙ্গে চাচা কামালের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল৷ এনিয়ে দু’পরিবারের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো৷ ফলে দু’পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কথা বলা বন্ধ ছিল৷
ঘটনার দিন রবিবার দুপুরে দাদীর জন্য খাওয়ার পানি নিয়ে আনতে সে মায়াকে বলে৷ মায়া পানি আনতে অপারগতা প্রকাশ করে৷ এতে মনা ক্ষিপ্ত হয়ে থাপ্পড় মারলে মায়া তাকে গালি দেয়৷ মনা এসময় গলা চেপে ধরলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মায়া মারা যায়৷ পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে সে নিহত মালার গলায় রশি বেঁধে বাড়ির টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকের ভিতরে ফেলে দেয়৷ কিন্তু লাশ ভেসে থাকায় বাঁশের লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তা চুবিয়ে ঢাকনা দিয়ে সেফটিক ট্যাংক ঢেকে রেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে রাজধানী মিরপুরের রুপগঞ্জ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় তার বোনের বাসায় আশ্রয় নেয়৷
গ্রেফতারের পর মনাকে পুলিশ গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ইলিয়াস রহমানের আদালতে হাজির করে৷ আদালতের বিচারক তার খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় রহমত উল্লাহ মনার স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি গ্রহন করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন৷ নিহতের নাম সাদিয়া আফরিন ওরফে মায়া (৮)৷ সে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দাখিনখান পূর্বপাড়া এলাকার রাজমিস্ত্রি কামাল হোসেনের মেয়ে এবং স্থানীয় হায়দরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী৷
উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হায়দরাবাদের দাক্ষিনখান এলাকার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি কামাল হোসেনের মেয়ে মায়া ১৫ মে রবিবার দুপুরে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়৷ এলাকাবাসি দিনভর খোঁজাখুঁজি ও মাইকিং করেও শিশুটির সন্ধান পায়নি৷ পরে রাত ১১টার দিকে এলাকাবাসী কামালের বড় ভাই আবুল কালামের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে গলায় রশি দিয়ে পেঁচানো মায়ার লাশ দেখতে পায়৷ খবর পেয়ে পুলিশ মায়ার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়৷
এ ব্যাপারে নিহতের বাবা বাদী হয়ে সোমবার জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন৷ মামলায় তার ভাতিজা রহমত উল্লাহ ওরফে মনা এবং মনার মা ফজিলত বেগম ওরফে ফাতেমা (৪০) ও তার বোন নাসিমা আক্তারকে (২২) আসামি করা হয়েছে৷ পুলিশ মনার মা ও তার বোনকে সোমবার গ্রেফতার করে৷