বুধবার ● ১৮ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » জন্মদাতা না হয়েও পিতা জহির রায়হান
জন্মদাতা না হয়েও পিতা জহির রায়হান
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (৪ বৈশাখ ১৪২৩: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.১০মিঃ) নিজের সংসারই ঠিকমতো চলে না ৷ তার উপর ৫টি এতিম মেয়েকে পড়ালেখার খরচ চালাতে হয় দিন মজুর জহির রায়হানকে ৷ মেয়েগুলো পড়াতে নিজে ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করলেও তার মনে বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই৷ নিজ ঘরে আশ্রয় দেওয়া এতিম মেয়েদের জন্য তাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়৷ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যখন মেয়েদের মুখে আব্বু ডাক শোনেন, তখন সারা দিনের ক্লান্তি দুর হয়ে যায়৷ বাবা না হয়েও এতিম মেয়েদের এমনই এক ব্যতিক্রম বাবা জহির রায়হান৷
রং মিস্ত্রী জহির রায়হান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের কিয়ামুদ্দীন মোল্লার ছেলে৷ ছোট বেলা থেকেই জহির রায়হান সৃষ্টিশীলতায় বিশ্বাসী৷ এ কারণে তিনি পরিবেশ বান্ধব কাজ করে এলাকায় নজীর সৃষ্টি করেছেন৷ প্রথম দিকে তিনি এলাকা জুড়ে গাছ লাগিয়ে চমক সৃষ্টি করেন৷ যেখানে জমি, সেখানেই জহিরের গাছ৷
এমন করে তিনি সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃক্ষ রোপন করেন৷ এরপর দেয়াল লিখনীর মাধ্যমে তিনি সচেতনতা সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেন৷ পাখির জন্য গাছে গাছে ভাড় পেতে বাসা তৈরী করা, হাজা মহা পুকুরে মাছ ছেড়ে দরিদ্রদের মাছ খাওয়ার ব্যবস্থা করা জহিরের অন্যতম কল্যান মুলক কাজ৷ এখন তার বাইসাইকেলে বই রাখা হয়, যাতে গ্রামের হতদরদ্রি ছেলে মেয়েরা পড়তে পারে৷ জহিরের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ৷
এ সব কাজের পাশাপাশি জহিরের অন্যতম মহানুভবতা হচ্ছে এতিম মেয়েদের নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা৷ জহির জানান, তার বাড়িতে এখন হালিমা খাতুন, সুমি, জেসমিন ও সিমলা নামে ৫টি মেয়ে রয়েছে৷ জহির জানান, জেসমিনকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল অষ্টম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায়৷ খবর পেয়ে তিনি তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন৷ জেসমিন এখন ঝিনাইদহ কেসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স পড়ছেন৷ নগরবাথান গ্রামে সুমি নামে এক মেয়ের বাবা ইন্তেকাল করলে তার মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যায়৷ এতিম হয়ে পড়ে সুমি৷ জহির রায়হান তাকে নিজ বাড়িতে এনে পড়ালেখা করান৷ সুমি এখন ঝিনাইদহ কেসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ছে৷
সে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল৷ হরিণাকুন্ডু উপজেলার যাদবপুর গ্রামের হালিমা খাতুনের বাবা মাদকাসক্ত ছিল ৷ পড়ালেখার পরিবেশ ছিল না৷ জহিরের মহানুভবতার খবর পেয়ে গ্রামের মানুষ হালিমাকে জহিরের বাড়িতে রেখে যায়৷
হালিমা নগরবাথান হাই স্কুলে নবম শ্রেনীতে পড়ছে৷ হরিণাকুন্ডু উপজেলার হামিরহাটি গ্রামের সিমলাকে নবম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় তারা বাবা মা বিয়ে দিচ্ছিল৷ খবর পেয়ে জহির রায়হান তাকে তুলে এনে পড়ালেখা করায়৷ সিমলা নগরবাথান এমএ খালেক কলেজে পড়ছে৷ সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের শাপলা খাতুনের মা মারা যাওয়ার পর বাবা বিয়ে করে ৷
এ অবস্থায় শাপলা ও তার নানি জহির রায়হানের বাড়িতে চলে আসে৷ জহির জানান, মেয়েগুলো তাকে বাবা বলে ডাকে৷ তার নিজের দুই সনত্মান৷
ছেলে সোহাগ অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে৷ মেয়েটি ছোট৷ মোট তার সন্তানের সংখ্যা ৭৷ ১০ সদস্যের পরিবার চালাতে কষ্ট হলেও জহিরের মনে কোন দুঃখ নেই৷
জহির জানান, তাকে নিয়ে পত্রপত্রিকা ও ফেসবুকে লেখালেখি হয়েছে৷ দেশ বিদেশের অনেক মানুষ তাকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন৷ তাকে সব সময় সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন৷ রামনগর গ্রামের জিল্লুর রহমান জানান,
জহিরের কারণে তাদের গ্রামের সুখ্যাতি বেড়েছে৷ তার কাজগুলো মানুষ শ্রদ্ধা করে৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা করা উচিত্ ৷
তিনি জানান, মানুষ জহিরের জনকল্যানমুলক কাজ দেখতে রামনগর গ্রামে আসছেন৷ স্থানীয় কুমড়াবাড়িয়া ইউনয়নের চেয়ারম্যান হায়দার আলী জানান, জহির আমার ইউনিয়নের গর্ব ৷ তার কাজ কর্মে এলাকার মানুষ এবং প্রশাসন খুশি৷
তবে তাকে আমরা খুব বেশি সহায়তা করতে পারি না ৷ সরকারী ভাবে তাকে প্রতিষ্ঠা করা দরকার বলে ইউপি চেয়ারম্যান মনে করেন৷