মঙ্গলবার ● ২ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » পার্বত্য ভুমি সমস্যা সমাধানের পথ কি ?
পার্বত্য ভুমি সমস্যা সমাধানের পথ কি ?
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: (৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৪৪মিঃ) সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা, বর্তমান রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা৷ পার্বত্য তিন জেলার মুল সমস্যা ভুমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা, যা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে মুল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ একথা বেশ কয়েকবার ক্ষমতাসীন দল ও তার বন্ধু সংগঠন পিসিজেএসএস নেতা গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে স্বাীকার করেছেন৷
রাজনৈতিক কারণে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানো ভয়ে পাহাড়ি নেতারা মুখে বলেন পার্বত্য ভুমি সমস্যার কথা, কিন্তু কেউ মুল কাজে হাত দেননা৷ পাহাড়ি নেতারা ভুমি সমস্যা নিয়ে কাজ করতে রাজি নয় তা পরিস্কার হয়ে গেছে৷ পার্বত্য চুক্তি করা হয়েছে বিগত ১৮ বছর, যে কারণ দেখিয়ে পার্বত্য চুক্তি করা হয়েছিল তার মুল স্পিরিটকে পাশ কাটিয়ে পার্বত্য জনগণের নজর অন্যদিকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে৷
সবার আগে যেতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভুমি সমস্যার উত্পত্তি কোথা থেকে হয়েছে, বর্তমান ভুমি সমস্যার অবস্থান ও সমাধানের পথ কি ইত্যাদি৷
বিতর্কিত বিষয় গুলিতে না গিয়ে বিগত ৫৬ বছরের ভিতর কি হয়েছে তা নিয়ে আলোকপত করা হয়েছে৷ সময় কাল হচ্ছে ১৯৬০- ২০১৬ সাল পর্যন্ত৷ কাপ্তাই বাঁধের ফলে রাঙামাটি সবডিভিশনের ৭০% লোকজন তাদের পূর্বপুরুষের ভিটা মাটি হারায়, এদের ভিতর সাওতাল, চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, বড়ুয়া, হিন্দু,ও মুসলমান ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর লোকজন ছিল৷ কাপ্তাই বাঁধের ফলে যে সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা কেউ বান্দরবান,খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে বিভিন্ন থানায় বসতি গড়েছে৷ সেসময়ে পাহাড়ে গণতন্ত্র যেমন ছিলনা বর্তমানও গণতন্ত্র নেই৷ বর্তমানে পাহাড়ে চলছে ষড়যন্ত্রতন্ত্র ও একনায়েকতন্ত্র৷ ষড়যন্ত্রতন্ত্রে আছেন পাহাড়ের বেশ কিছু পাহাড়ি নেতা আর একনাযকতন্ত্রে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল৷
১৯৬০ সালের পর পাহাড়ে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর লোকজন সুন্দর ভাবে চলছিলেন৷ তখনো এ অঞ্চলে সম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়াতে পারেনি তেমন ভাবে, ১৯৬০-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পাহাড়ে ছিল শান্তি, পাহাড়ি - বাঙ্গালী উভয়ের ভিতর ছিলনা কোন সম্প্রদায়কতা৷ সত্য বলতে কি পাহাড়ি বা বাঙ্গালী আলাদা জনগোষ্ঠীর লোক এধরনাটা তখন মানুষের মনে ছিলনা৷ উভয় জনগোষ্ঠীর লোকজন ছিল অতি সহজ সরল এবং শান্তি প্রিয়৷ পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি বাহিনী প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৮ সাল থেকে সরকার যখনই পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বহিরাগত লোকজন এনে বসতি গড়ে তোলেন সরকারী অর্থে, তার পর থেকে শুরু হয় পার্বত্য অঞ্চলে নিত্য নতুন সমস্যা আর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ৷ পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিবাহিনী গঠন না হলে এঅঞ্চলে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী আনার কোন প্রয়োজন ছিল না৷ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হচ্ছে দেশের ভুখন্ড রক্ষার কাজে দায়িত্বে নিয়োজিত পদাতিক বাহিনী৷ পার্বত্য অঞ্চল হচ্ছে দেশের মুল ভুখন্ডের অংশ, সেসময়ে বা বর্তমান পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী তারা তাদের নিয়ম মাফিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন৷ কিন্তু সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা গুলি অতি সুকৌশলে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার কথা বলে সরকার এবং স্বশস্ত্র সেনাবাহিনীকে অন্য পথে পরিচালনা করাতে প্রতিনিয়ত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভিতর তৈরী হচ্ছে একতা, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পাকাপোক্ত হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক ভিত৷ পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়িরা পার্বত্য চুক্তির পর আরো ২ শত বছর এগিয়ে গেছেন কিন্তু পাহাড়ের স্থানীয় বাঙ্গালীরা আরো ২শত বছর পিছিয়ে গেছেন, পাহড়ে স্থানীয় বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী ভিতর তৈরী হচ্ছেনা সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব ৷ এতে গড়ে উঠছেনা বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী গুলির ভিতর সামাজিক যোগাযোগ, পার্বত্য অঞ্চলে নেই বাঙ্গালীদের কোন রাজনৈতিক নেতা৷ আগে এক সময়ে পার্বত্য অঞ্চলের সেনাবাহিনী ভুমিকা নিরাপেক্ষ থাকলেও এখন আর এই বাহিনীটি নিরপেক্ষ নন৷
১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিটি সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে খোলা হয়েছে একটি পাহাড়িদের জন্য ফাইল আরো আলাদা ভাবে বাঙ্গালীদের জন্য একটি ফাইল৷ চুক্তি অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ৷ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পাহাড়িদের করা হয়েছে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও চেয়ারম্যান ইত্যাদি৷ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান গুলিতে বাঙ্গালীদের সদস্য বা অন্যপদে রাখা হয়েছে৷ তারা হচ্ছেন ডাল নাই তলোয়ার নাই নিধীরাম সর্দার৷ যেখানে সর্বময়ী ক্ষমতা অধিকারী মন্ত্রী বা চেয়ারম্যান সেখানে গুটিকয়েক সদস্য মুল ক্ষমতার বাইরে থেকে বাঙ্গালীদের জন্য কি করার আছে ? পার্বত্য চুক্তিটি পার্বত্য অঞ্চলে বাঙ্গালীদের জন্য একটি বৈষম্যের সনদ মাত্র৷
পাহাড়ে ভুমি সমস্যার উত্পত্তি হচ্ছে বেশ কয়েক ভাবে৷ প্রথম তো সমতল থেকে পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষকতাসহ সরকারী অন্য চাকুরী নিয়ে যারা বা যেসব পরিবার পার্বত্য অঞ্চলে এসেছেন তারা কেউ নিজের টাকায় ভুমি বা জায়গা কিনে ঘর - বাড়ি নিমার্ণ করেননি৷ তারা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে অন্যের ভুমি বা জায়গা নিজেদের নামে করে নিয়ে এখন স্থায়ী ভাবে বসবাস করেছে৷ অথচ সেসব ভুমি বা জায়গা স্থানীয় পাহাড়ি বা বাঙ্গালীদের পূর্বপুরুষের ভুমি, তখন তারা খাস জায়গা কি আর বন্দবস্তি জায়গা কি বুঝত না, যে কারণে স্থানীয়রা তাদের পূর্বপুরুষের ভিটামাটি থেকে উচ্ছেত হয়ে সরকারী অন্য জায়গাতে বাড়ি ঘর নির্মাণ শুরু করলে আবার নতুন ভাবে সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী এসে সেসব স্থানীয়দের ভিটা মাটি থেকে বিতাড়িত করে, দ্বীতিয়ত কোন স্কুলের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, ড্রাইভার, লেবারদের সর্দার কিংবা উচ্চপদস্থ কেউ স্থানাীয়দের কাছ থেকে বিনামুল্যে চেয়ে নিয়ে অস্থায়ী ভাবে থাকার কথা বলে বাড়ি - ঘর নির্মাণ করে বসবাস করার শুরম্ন করে, তার পর তাদের ছেলে মেয়ে বড় হয়ে বলে বসে এই জায়গার মালিক তাদের পিতা৷ আবার কেউ কেউ গোপনে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের অস্থায়ী ভাবে থাকতে দেয়া জায়গা বা ভুমি টুকু মালিককে না জানিয়ে তাদের নামে বন্দবস্তি করে নিয়েছেন৷ যখন ভুমি বা জায়গার আসল মালিক জানতে পারে যে তার জায়গা থাকতে দেয়া পরিবারটি তাদের নামে করে নিয়েছে তখন তার আর কিছুই করার থাকেনা৷ যদিও বা আইনের আশ্রয় নেয় আইনের মারপ্যাচে স্থানীয়রা হেরে যায়, এ হেরে যাওয়া পিছনে হচ্ছে পুলিশ, আদালত, উপজেলা ভুমি অফিস ও জেলা প্রশাসক অফিস এসব প্রশাসনের লোকজনদের দখলে থাকায় স্থানীয় ভুমি মালিক তার সহজ সরলতার কারণে ভুমির মালিকানা হারায়৷ এবিষয়টি স্থানীয় পাহাড়ি - বাঙ্গালী সবাই ভুক্তভোগি৷ তৃতীয়ত পাহাড়ি - বাঙ্গালী দাঙ্গা লাগিয়ে স্থানীয় বাঙ্গালী ও পাহাড়িদের ভুমিতে বহিরাগতদের বসিয়ে দেয়া আর তাদের নিরাপত্তার দোহায় দিয়ে ঐ এলাকাতে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প বসিয়ে দেয়া৷ ৪র্থ সরকারী প্রতিষ্ঠানের নামে জায়গা বা ভুমি অধিগ্রহন করে স্থানীয়দের গ্রামসহ উঠিয়ে দেয়া, পার্বত্য তিন জেলার প্রতিটি সরকারী প্রতিষ্ঠান তিন একরের কথা বলে দখল করে আছে ১০- ২০ আর ২০ একরের জায়গাতে দখল করে আছে ৪০ একর অথবা তার বেশী৷ এক সময়ে এসব স্থানে বা জায়গাতে সরকারী অবসর প্রাপ্ত চাকুরীজিবীরা চাকুরী শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের আশ পার্শে বসতি গড়ে তোলেন এবং এক সময়ে তাদের নিজের জায়গা বলে কম দামে এসব জায়গা অন্য মালিকের কাছে হস্তান্তর বা বিক্রয় করে চলে যান তাদের নিজ জেলায় গ্রামের বাড়ীতে৷ ৫ম, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার বাহির থেকে আসা ব্যবসায়ীরা নিয়মনীতি না মেনে যেখানে সেখানে অনিয়মতান্ত্রীক ভাবে খালি জাযগা বা ভুমিতে স্থাপনা নির্মাণ করা৷ ৬ষ্ঠ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন প্রকল্পের নাম দিয়ে রাজধানীতে বসে জায়গার মালিক ও আইন শৃংখলা বাহিনীসহ সরকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে হাজার হাজার একর ভুমি দখল করা৷ ৭ম, তিন জেলা শহরের বাহির থেকে আসা পাহাড়ি - বাঙ্গালী উভয়ে রাস্তার জায়গা, কাপ্তাই হ্রদের জায়গা ও সরকারী খালি থাকা জায়গা দখল করে ইচ্ছে মত বাড়ি - ঘর ইত্যাদি রাতারাতি নির্মান করা৷ ৮ম, সঠিক সময়ে আইন শৃংখলা বাহিনীসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনী উদ্যোগ গ্রহন না করা, বাজার ফান্ড নামক প্রতিষ্ঠানটির ক্ষমতার অপব্যবহার, ভুমিদস্যুদের দৌরাত্ম, জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলির উসকানি ইত্যাদি৷
একজন মানুষ পৃথিবীতে জন্ম নেয়ার পর সৃষ্টি হয় তার মানকধিকার, আর সেই মানবাধিকার হচ্ছে সর্বপ্রথম তার জন্মস্থান অর্থাত্ ভুমির অধিকার৷ একজন মানুষকে তার ভুমি থেকে বিতারিত করা বা সেই মানুষটিকে তার ভুমির অধিকার না দেয়াটা মানবাধিকার লংঘন করার সামিল৷
দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার লাগানো আগুন নেভাতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির বাতাস আনতে গেরিলা নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা’র সাথে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি করেন৷ চুক্তির আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভেবেছিলেন পার্বত্য অঞ্চলে যে সব বাঙ্গালীরা বসবাস করেন তারা সকলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ করবেন আর সন্তু লারমা ভেবেছিলেন পাহাড়ে বসবাসরত সকল পাহাড়িরা তার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) দলের রাজনীতি করবেন৷ তারা উভয়ে এদেশের নাগরিক আর একজন নাগরিকের জন্মগত অধিকার সবার ক্ষেত্রে সমান৷ বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক আওয়ামীলীগ নেতা ও পিসিজেএসএস নেতা তারাও জন্মগত ভাবে সাধারন নাগরিক৷ তারা উভয়ে রাজনীতি করেন বিধায় এক একজন তাদের দলের প্রধান৷
কিন্তু তারা যে কাজটি করেছেন একজন নাগরিকের ভুমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এই কাজটি করার জন্য সংবিধান তাদের ক্ষমতা দেননি৷ ১৯৮৬ সাল থেকে পার্বত্য অঞ্চলের নাগরিকদের ভুমির মালিকানা বন্দবস্তি দেয়া বন্ধ করে রাখা হয়েছে৷ ১৯৮৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর ধরে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত মানুষ গুলির নাগরিক অধিকার খর্ব করে রাখা হয়েছে৷ পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য ভুমি কমিশন গঠন করা হয়৷ পার্বত্য ভুমি কমিশনের সদস্য পিসিজেএসএস নেতা সন্তু লারমা ও ব্যারিষ্টার দেবাশিষ রায় সেই কমিশনকে সহযোগিতা না করায় তারা কিছুই করতে পারেননি৷ তার পর থেকে পার্বত্য কমিশনের নাম দিয়ে চলছে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং দেশের জনগণের কষ্টে অর্জিত অর্থ অহেতুক ভাবে ব্যয় করা হচ্ছে৷ পার্বত্য চুক্তি করা হয়েছে ১৮ বছর, এক দিকে পিসিজেএসএস নেতা সন্তু লারমা পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি, আরেক দিকে সন্তু লারমা ও ব্যারিষ্টার দেবাশিষ রায় বাস্তবায়িত হতে দেয়ননি পার্বত্য চুক্তির আলোকে গঠিত পার্বত্য ভুমি কমিশনের কার্যক্রম৷
এখন আবার গোপনে চালু করা হয়েছে ভুমি বন্দবস্তির নতুন নিয়ম৷ একজনের নামে না কি ৩০শতকের বেশী আবেদন করা যাবে না৷ এছাড়া পার্বত্য এলাকায় যে কোন একজন নাগরিক তার নিজ জায়গা বা ভুমি বন্দবস্তি পেতে হলে প্রথম যেতে হবে হেডম্যানের কাছে তারপর যেতে হবে সার্কেল চীফের কাছে, তার পর যেতে হবে উপজেলা ভুমি অফিসে তারপর যেতে হবে জেলা প্রশাসনের কাছে তারপর যেতে হবে জেলা পরিষদ চেয়াম্যানের কাছে তারপর সেই ফাইল ঘুরে এসে শুনানী করা হবে জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখায়৷ অর্থাত্ যে কেউ ভুমির বন্দবস্তি পেতে হলে সময় ব্যয় করতে হবে কমপক্ষে ১ বছর৷ তার আগে তিন জেলার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে পড়ে আছে লক্ষ লক্ষ ফাইল৷ সে সব ফাইলের শুনানী করতে লাগতে পারে কয়েক যুগ৷
একজন নাগরিক হিসাবে পার্বত্য অঞ্চলের ভুমি সমস্য সমধানের জন্য কয়েটি প্রস্তাব করছি :
১. ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত যে নিয়মে পার্বত্য অঞ্চলে ভুমি বন্দবস্তি চালু ছিল তা আবার পূর্ণবহাল করা যেতে পারে৷
২. চট্টগ্রামের মেহেদিবাগ সেটেলমেন্ট অফিস ও ঢাকা ভুমি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ১৯৮২ - ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত পার্বত্য এলাকায় যে ভুমি জরিপ সেটেলমেন্টের কাজ শুরু করা হয়েছিল তা পূর্ণরায় চাল করা, তা দিয়ারা সেটেলমেন্টের অধিনে নতুন ভাবে চালু করা৷
৩. প্রত্যক উপজেলা প্রশাসনের কাছে ১জন কানুনগো, ৫জন সর্দার, ৫জন বদর আমিন, ৫জন চেইনম্যান ও ৫জন খালাসী প্রতি মৌসমের জন্য দিয়ে ভুমি জরিপ, এডষ্টেশন (শুনানী),ফরচা বিতরণ ও নামজারি করা যেতে পারে৷
এতে জনসাধারনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেমনি কাজ করার সুযোগ পাবেন তেমনি পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ গুলি মুক্তি পাবেন ভুমি নিয়ে দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি থেকে৷ আর যে সব ভুমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে সেই সব ভুমির শুনানীর দায়িত্বে থাকবেন উপজেলা প্রশাসন হয়ে মামলাটি যাবে,জেলা প্রশাসনে তারা নিপত্তির জন্য পাঠাতে পারে জেলা পরিষদে এবং চড়ান্ত রায় দিবেন পার্বত্য ভুমি কমিশন৷ এতে দেশের প্রচলিত আইনের কোন ব্যত্যই ঘটার সম্ভাবনা থাকবেনা।
পার্বত্য অঞ্চলের নিরীহ মানুষ গুলির পিঠ অনেক আগে দেয়ালে ঠেকে গেছে, এখন তাদের পিঠ দেয়ালের ভিতরে চলে গেছে৷
এখন কেউ আর ঘুম পাড়ানী মাসি পিষির গল্প শুনতে রাজি নয়৷ আমাদের দেশের সরকার যারা পরিচালনা করেন তাদের মনে রাখা প্রয়োজন,নিজের সন্তানও সে তার নিজের অধিকার না পেলে বিদ্রোহ করে বসে৷
পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি - বাঙ্গালী মানুষ গুলির জীবণ বাঁচাতে হলে সবার আগে তাদের ভুমির অধিকার বুঝিয়ে দেয়াটা কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ মহাজোট সরকারের জন্য হবে বুদ্ধিমানের কাজ৷